Sandeshkhali Incident

সন্দেশখালির পাশে নন্দীগ্রামের নির্যাতিতারা

২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে গুলি চালনার পরে রাধারানিকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল সিপিএমের ‘হার্মাদ বাহিনী’র বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন তিনি।

Advertisement

কেশব মান্না

নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৪:৫৮
Share:

উত্তপ্ত সন্দেশখালি। — ফাইল চিত্র।

সন্দেশখালি আর নন্দীগ্রাম। দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। তবে দুই জেলার দুই জনপদের নির্যাতিতাদের স্বর মিলে যাচ্ছে, দেড় দশকের ব্যবধানেও।

Advertisement

২০০৭-’০৮ সালে নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলন পর্বে তৎকালীন শাসক বাম শিবিরের লোকজনের বিরুদ্ধে জমি দখল, মহিলাদের নিগ্রহের একাধিক অভিযোগ উঠেছিল। তখনও সরব হয়েছিলেন নির্যাতিতারা। ঠিক যেমন সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহান-সহ স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে এখন মুখ খুলছেন সেখানকার মহিলারা। এই লড়াই চেনা ঠেকছে নন্দীগ্রামের রাধারানি আড়ি, কল্পনা মুনিয়ান, হৈমবতী দাসদের।

২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে গুলি চালনার পরে রাধারানিকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল সিপিএমের ‘হার্মাদ বাহিনী’র বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন তিনি। পরে ফিরেছেন গোকুলনগরের বাড়িতে। ৬৬ বছরের রাধারানি বলছেন, ‘‘বাড়িতে টিভি নেই। লোকজনের মুখে শুনছি, সন্দেশখালিতে মহিলাদের উপর অত্যাচার হয়েছে। তবে তারাও আমাদের মতো আন্দোলন করছে জেনে ভাল লাগছে।’’ আক্ষেপও রয়েছে তাঁর। বললেন, ‘‘কেউ আর আমাদের খোঁজ রাখে না। যা বুঝলাম, যে যখন শাসক, দুর্বৃত্তরা তার ছত্রছায়াতেই থাকে।’’

Advertisement

২০০৭ সালের নভেম্বরে সোনাচূড়ার কল্পনা মুনিয়ান এবং হৈমবতী দাসকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছিল। নিশানায় ছিল সেই ‘হার্মাদ বাহিনী’। পরে স্থানীয়রাই তাঁদের এগরার কাছে উদ্ধার করে। কল্পনাও বলছেন, ‘‘এই অত্যাচার মেনে নেওয়া যায় না। অবিলম্বে সন্দেশখালির শাহজাহানদের গ্রেফতার করা উচিত।’’ কল্পনার বাড়ির কাছেই থাকেন হৈমবতী। তিনি জুড়লেন, ‘‘বরাবর শাসকদের লক্ষ্য মহিলারা। বয়স হয়ে গিয়েছে। তবু সন্দেশখালিতে গিয়ে অত্যাচারিত মা-বোনেদের পাশে দাঁড়াতে ইচ্ছে করছে।’’

নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী দু’দিন আগেই দাবি করেছেন, ‘‘দ্বিতীয় নন্দীগ্রাম হতে চলেছে সন্দেশখালি।’’ একই সুর শোনা গিয়েছে বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষের গলাতেও। নন্দীগ্রামের ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নেতা শেখ সুফিয়ানের দাবি, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগের মতোই এখনও অত্যাচারিত, নিপীড়িত মহিলাদের পাশে থাকেন। শুভেন্দুর কথা শুনে কেউ কেউ বিজেপির পতাকার তলে চলে গিয়েছেন। তাঁরাই নন্দীগ্রাম আর সন্দেশখালিকে এক করার চেষ্টা করছেন।’’ নন্দীগ্রাম ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গও এর মধ্যে রাজনীতি দেখতে পাচ্ছেন। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পাল পাল্টা বলছেন, ‘‘নন্দীগ্রামের শহিদ পরিবার থেকে অত্যাচারিত মায়েরাও তৃণমূলের দ্বিচারিতা বুঝে এখন তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাই তাঁদের গায়ের রাজনীতির রং লাগাতে চাইছে তৃণমূল।’’

তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে মানুষের ক্ষোভ ছিল সরকারের বিরুদ্ধে। এখানে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ নেই। স্থানীয় কেউ অন্যায় করেছে। প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে।’’ সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য হিমাংশু দাস বলছেন, ‘‘নন্দীগ্রামে বেকারদের স্বার্থে কারখানা গড়তে চেয়ে জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নানা রকমের অপপ্রচার করে সে সময় তা যে আটকানো হয়, তা মানুষ এখন বুঝতে পারছেন। আর সন্দেশখালিতে ব্যক্তিগত স্বার্থে তৃণমূল জমি লুট করেছে, মহিলাদের সম্ভ্রম নষ্ট করেছে। দুটো ঘটনা আলাদা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন