বিভিন্ন সময়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিরা হুটহাট কর্মবিরতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করা সত্ত্বেও আইনজীবীদের ওই প্রবণতায় রাশ টানা যায়নি। কিছু দিন বন্ধ থাকার পরে শুধু হাইকোর্ট নয়, কর্মবিরতি আন্দোলন ফিরে আসছে অন্যান্য আদালতেও।
সোমবার, সপ্তাহের প্রথম দিন কলকাতা হাইকোর্টে কাজ বন্ধ রাখল সেখানকার বার অ্যাসোসিয়েশন। আর আগামী শুক্রবার, সপ্তাহের শেষ কাজের দিন কর্মবিরতির আন্দোলনের ডাক দিয়েছে রাজ্য বার কাউন্সিল। সে-দিন জেলা আদালতের সঙ্গে সঙ্গে হাইকোর্টেও ফের কাজ বন্ধ রাখা হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অযৌক্তিক কারণে আইনজীবীরা ধর্মঘট বা কর্মবিরতিতে সামিল হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব পাঠাতে চলেছে জাতীয় আইন কমিশন। রাজ্য বার কাউন্সিলের অভিযোগ, আইন কমিশনের কাছে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার একতরফা সুপারিশ করেছেন কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান। সেই সুপারিশ ও আইন কমিশনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ৩১ মার্চ রাজ্যের সব আদালতে কাজ বন্ধের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
সোমবার শুধু কলকাতা হাইকোর্টে কর্মবিরতির কথা থাকলেও কৃষ্ণনগর, বহরমপুর-সহ বেশ কিছু আদালতের কৌঁসুলিরাও কাজ বন্ধ রাখেন। তবে এ দিনের কর্মবিরতির জন্য জেলা আদালতের কাছে চিঠি পাঠায়নি আইনজীবীদের কোনও সংগঠনই। রাজ্য বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অশোক দেব বলেন, ‘‘৩১ মার্চ, শুক্রবার কর্মবিরতি পালনের জন্য বিভিন্ন জেলার আইনজীবী সংগঠনের কাছে চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
এই ভাবে আদালতের কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় সাধারণ মানুষ বিরক্ত। নদিয়ার এক বাসিন্দা সোমবার হাইকোর্টে এসেছিলেন তাঁর মামলার জন্য। কর্মবিরতির জন্য তাঁর মামলার শুনানিই হয়নি। ওই ব্যক্তির মন্তব্য, ‘‘আইন কমিশনের কাছে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন বার কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান। তাই আইনজীবীদের এই ধরনের কর্মবিরতিতে যাওয়ার কোনও যুক্তিই থাকতে পারে না।’’
তবে কলকাতা হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন জানাচ্ছে, একতরফা ভাবে ওই সুপারিশ পাঠিয়েছেন বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। এই ‘কালা’ সুপারিশ মানা হবে না।
সোমবারের পরে শুক্রবারেও কি কলকাতা হাইকোর্টে কাজ পণ্ড হবে?
‘‘রাজ্য বার কাউন্সিলের অনুরোধ মেনে আবার কর্মবিরতি পালন করা হবে কি না, জরুরি বৈঠক ডেকে সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বুধবারের মধ্যে আমরা সেই সিদ্ধান্ত নেব,’’ বলেন হাইকোর্টের আইনজীবী সংগঠনের সম্পাদক সুরঞ্জন দাশগুপ্ত। তবে আইনজীবীদের একটি বড় অংশ শুক্রবারের প্রস্তাবিত কর্মবিরতিতে যোগ না-দেওয়ারই পক্ষপাতী।