Workers

চাষের কাজে ‘শস্যগোলা’ থেকেও পাড়ি ভিন্‌ রাজ্যে

রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা তথা পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘কারও কাজে যাওয়া তো আমরা বন্ধ করতে পারি না। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে একশো দিনের কাজের বদলে বিকল্প কাজ দেওয়া শুরু হয়েছে।’’

Advertisement

সৌমেন দত্ত

ভাতার শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৫৫
Share:

বিভিন্ন এলাকা থেকে ভিন্‌ রাজ্যে কাজে নিয়ে যাওয়ার জন্য ‘ঠিকাদার’ রয়েছেন। ফাইল চিত্র।

রাজ্যের ‘শস্যগোলা’ বলে পরিচিত এই জেলা। বছরভর জমিতে নানা ফসল ফলে। সেই পূর্ব বর্ধমান জেলা থেকেও খেতমজুরের কাজে অন্য রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন অনেকে। ওই সব রাজ্যে বেশি মজুরি এবং এ রাজ্যে বছরখানেক ধরে একশো দিনের কাজ বন্ধ থাকাই এর কারণ বলে শ্রমিকদের বড় অংশের দাবি। এই প্রবণতা নিয়ে তৈরি হয়েছে শাসক-বিরোধী চাপান-উতোর।

Advertisement

ওই শ্রমিকেরা জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে ভিন্‌ রাজ্যে কাজে নিয়ে যাওয়ার জন্য ‘ঠিকাদার’ রয়েছেন। তাঁরাই কাজের বিষয়ে যোগাযোগ করিয়ে দেন। পূর্ব বর্ধমান ছাড়াও উত্তরবঙ্গের নানা জেলা, দুই ২৪ পরগনা থেকে অনেক কৃষি-শ্রমিক ভিন্‌ রাজ্যে ধান রোয়ার কাজে যাচ্ছেন। পূর্ব বর্ধমানের ভাতার, মঙ্গলকোট, আউশগ্রাম, মেমারি ও মন্তেশ্বরের চাষিদের মধ্যে সম্প্রতি এই কাজে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে বলে স্থানীয় নানা সূত্রের খবর।

ভিন্‌ রাজ্যে কাজে নিয়ে যাওয়া এক ‘ঠিকাদার’ শিবু মণ্ডলের দাবি, “রাজ্যের কয়েক লক্ষ কৃষি-শ্রমিক অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গনা, তামিলনাড়ু, কর্নাটক ও কেরলে ধান রোয়ার কাজে যান। পূর্ব বর্ধমানের বহু খেতমজুর যাচ্ছেন। সেখানে দিনে ৮০০-১১০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। এখানে তো দিনে ২৫০ টাকা মজুরিও পান না তাঁরা।’’ ভাতারের কুলনগর গ্রামের খেতমজুর ঝুমরি মুর্মু, অর্চনা দাসদের কথায়, “ধান কাটার যন্ত্র চলে আসায়, জমিতে কাজ কমে গিয়েছে। বছরে ৪৫ দিনও কাজ জোটে না মেয়েদের। তাতে তো খরচ চলে না। তাই বাইরের রাজ্যে যেতে হচ্ছে।’’

Advertisement

মূলত পুজোর পর থেকেই তাঁরা রওনা দেন বলে জানান ওই শ্রমিকেরা। ভাতারের জগন্নাথ রাজমল্ল, স্বপন হাঁসদা, মেমারির রিন্টু মণ্ডল, শিবু মুর্মুদের বক্তব্য, “চাষের কাজের পরে গ্রামে একশো দিনের কাজ মিলত। কয়েক বছর ধরে তা নেই। প্রাপ্য টাকাও পাচ্ছি না। এখানে কাজ পেলে কি আর অন্য রাজ্যে যেতাম!’’

রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা তথা পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘কারও কাজে যাওয়া তো আমরা বন্ধ করতে পারি না। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে একশো দিনের কাজের বদলে বিকল্প কাজ দেওয়া শুরু হয়েছে।’’ গত ডিসেম্বর থেকে একশো দিনের প্রকল্পে রাজ্যের ৬,৭৭৪ কোটি টাকা কেন্দ্র আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ। ওই প্রকল্পে কর্মদিবস তৈরির অনুমতিও কেন্দ্র দিচ্ছে না বলে রাজ্যের দাবি। পঞ্চায়েত মন্ত্রী অবশ্য জানান, কেন্দ্রের সঙ্গে কথা হয়েছে। কাজের অনুমোদনের ব্যাপারে আশ্বাস মিলেছে।

সম্প্রতি ভাতারে এসে বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া বলেন, “পূর্ব বর্ধমান রাজ্যের শস্যগোলা বলে পরিচিত। দুর্ভাগ্য, এখানকার কৃষি-শ্রমিকদেরও পরিযায়ী হিসেবে অন্যত্র চাষের কাজে যেতে হচ্ছে!’’ তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য অন্যতম মুখপাত্র দেবু টুডুর পাল্টা দাবি, ‘‘আগে একশো দিনের বকেয়া টাকা দিক কেন্দ্র। গরিব মানুষের টাকা কেন আটকে রয়েছে, সাংসদ সে জবাব আগে দিন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন