দুষ্ট গরু চাই না, বার্তা সূর্যের

টানটান প্রচারের পরেও নির্বাচনে বিপর্যয় হয়েছে। তার পরে দল ছেড়ে শাসক শিবিরে নাম লেখাতে শুরু করেছেন বিধায়ক থেকে পুরসভা ও পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৫৫
Share:

টানটান প্রচারের পরেও নির্বাচনে বিপর্যয় হয়েছে। তার পরে দল ছেড়ে শাসক শিবিরে নাম লেখাতে শুরু করেছেন বিধায়ক থেকে পুরসভা ও পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা। বারবার বলেও রাস্তায় নামার অনীহা কাটানো যাচ্ছে না দলের একাংশের। এই দম-চাপা পরিবেশে এ বার হতাশা এবং তার জেরে তীব্র ক্ষোভ উঠে এল স্বয়ং রাজ্য সম্পাদকের কণ্ঠে! সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকেই রাজ্য সম্পাদক ডাক দিলেন প্লেনাম থেকে ঘর সাফ করার।

Advertisement

সেপ্টেম্বরের শেষে আসন্ন রাজ্য সাংগঠনিক প্লেনামের প্রস্তুতির জন্য বুধবার থেকে আলিমুদ্দিনে শুরু হয়েছে সিপিএমের রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠক। উপস্থিত আছেন দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ও সাংগঠনিক বিষয়ের ভারপ্রাপ্ত পলিটব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাট। বর্তমান ও প্রাক্তন দুই সাধারণ সম্পাদকের সামনেই এ দিন প্রারম্ভিক ভাষণে সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, দলের মধ্যে থেকেই একটা অংশ শাসক দলের সঙ্গে বোঝাপড়া করে চলেছে। আবার নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থেকে দলের কোনও কাজে লাগছেন না কর্মীদের একাংশ। রাজ্য সম্পাদকের সাফ বার্তা, দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল! দল আরও ছোট হোক। কিন্তু খাঁটি হোক।

বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পরে ময়না তদন্তে দেখা গিয়েছে, তৃণমূল-ঝড়ের মধ্যেও দলের সব অংশ নির্বাচনে ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করলে সিপিএমের ফল এর চেয়ে ভাল হতে পারতো। সূর্যবাবু নিজেও সিংহ ভাগ জেলায় ঘুরেছেন। এ সবের প্রেক্ষিতেই রাজ্য নেতৃত্বের মত, দলের মধ্যে থেকে তৃণমূলের সঙ্গে যোগ রেখেই কাজ করে গিয়েছেন নেতা-কর্মীদের একটি অংশ। এমন অংশের যাঁরা এখনও দলে রয়েছেন, তাঁদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। সূর্যবাবু রাজ্য কমিটিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন, ক্ষতিকর এই অংশের দ্রুত বিদায় চাইছেন তাঁরা।

Advertisement

ভোটে বিপর্যয়ের ধাক্কা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি আলিমুদ্দিন। পাড়ায় পাড়ায় সিপিএমের ঝান্ডা হাতে বেরোনোর মনোবল পর্যন্ত হারিয়েছেন বহু কর্মী। আগামী ২ সেপ্টেম্বরের সাধারণ ধর্মঘটকে সামনে রেখে সংগঠনকে চাঙ্গা করার চেষ্টা যখন চলছে, স্থানীয় স্তরের নেতা-কর্মীদের একাংশ তখন শাসক শিবিরে চলে যাচ্ছেন! দলের এই বেহাল দশা নিয়ে রাজ্য কমিটির বৈঠকে রাজ্য সম্পাদক যে ভাবে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন, সাম্প্রতিক কালে তা হয়নি!

সূর্যবাবু যখন দলের একাংশের কাজকর্মে ক্ষুব্ধ, জেলার নেতাদের অনেকে তখন আবার পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন জনপ্রতিনিধিদের ধরে রাখার ব্যর্থতা নিয়ে। সূর্যবাবু বা বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু ইতিমধ্যেই বিভিন্ন বৈঠকে বলেছেন, বিরোধী দল ভাঙিয়ে তৃণমূল গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধ্বংস করছে ঠিকই। কিন্তু যাঁরা বিক্রি হয়ে যাচ্ছেন, তাঁরাও তো নিজেদের গরু-ছাগলের স্তরে নামিয়ে আনছেন! এই সূত্রেই এ দিন জেলার নেতাদের প্রশ্ন, রাস্তায় নেমে তেড়েফুঁড়ে আন্দোলনের সুযোগ পেলে বিধায়ক, কাউন্সিলর বা পঞ্চায়েত সদস্যেরা কি দল ছাড়ার আগে দু’বার ভাবতেন না?

দার্জিলিঙের জীবেশ সরকার উদাহরণ দিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, ২০১১ সালে জেতা বাম বিধায়কদের ‘টিম’ ধরে রাখা যায়নি কেন? শমীক লাহিড়ী বলেছেন, কমিটি ভেঙে পুনর্বিন্যাস যতই হোক, পরিকল্পনায় গলদ থাকলে ফল মিলবে না। মইনুল হাসান, নেপালদেব ভট্টাচার্যদের প্রস্তাব, বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ পদক্ষেপই ভাবতে হবে দলীয় নেতৃত্বকে।

রাজ্য কমিটির সদস্যেরা মুখ খোলার আগে সূর্যবাবু নিজেই অবশ্য গতানুগতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন এ দিন। বলেছেন, এত বৈঠক করে কী হবে? যদি মানুষের কাছেই না পৌঁছনো যায়? কংগ্রেস বলতে পারে, ক’টা আসন তারা পাবে। আর সিপিএমের মতো সংগঠন-নির্ভর দলে বারবার ভুল রিপোর্ট আসে কী করে? দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘আমাদের এখন হারানোর কিছু নেই। ঘর সাফ করার এই তো সময়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন