নজরে বর্ধমান

সালিশির জেরে আত্মঘাতী

দাম্পত্য কলহ মেটাতে দু’পক্ষ গিয়েছিল তৃণমূলের স্থানীয় অফিসে। সেখানে ‘সালিশি’র ফয়সালা মেনে নিতে না পেরে এক যুবক আত্মঘাতী হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠল বর্ধমানের জামুড়িয়ায়।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

দাম্পত্য কলহ মেটাতে দু’পক্ষ গিয়েছিল তৃণমূলের স্থানীয় অফিসে। সেখানে ‘সালিশি’র ফয়সালা মেনে নিতে না পেরে এক যুবক আত্মঘাতী হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠল বর্ধমানের জামুড়িয়ায়। মৃতের পকেটে এলাকার তিন তৃণমূল নেতাকে দায়ী করে লেখা চিঠি মিলেছে বলে দাবি পরিবারের।

Advertisement

বুধবার রাতে মৃতের পরিবার তাঁর স্ত্রীর বাপেরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের করে।

জামুড়িয়ার কেন্দার কয়লাখনির কর্মী শিবরতন গোপ পরিবার নিয়ে থাকেন কোলিয়ারির আবাসনে। আদি বাড়ি বিহারের নালন্দায়। শিবরতনবাবুর দাবি, ২০০৯-এ তাঁর ছেলে বিকেশ (২৮) নালন্দায় গেলে সেখানকার বাসিন্দা উমাশঙ্কর প্রসাদের মেয়ে সঙ্গীতার সঙ্গে জোর করে তাঁর বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পরে বিকেশ জামুড়িয়ায় ফিরে আসেন। কাজ করতেন এলাকারই একটি বেসরকারি সংস্থায়। ২০১২ নাগাদ উমাশঙ্করবাবু সঙ্গীতাকে কেন্দায় দিয়ে যান।

Advertisement

সঙ্গীতার দাবি, দুই পরিবারের চেনাজানার সূত্রেই তাঁদের বিয়ে হয়। তাঁর অভিযোগ, ‘‘শ্বশুরবাড়িতে বিনা কারণে আমার উপরে নির্যাতন চলত। শেষে সহ্য করতে না পেরে পুলিশের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, গোপ পরিবারে অশান্তি লেগেই থাকত। শুক্রবার রাতে এলাকার তিন তৃণমূল নেতার সঙ্গে কেন্দা ফাঁড়িতে অভিযোগ জানাতে যান সঙ্গীতা। কিন্তু সেই সময় উমাশঙ্করবাবু ফোনে তাঁকে অভিযোগ জানাতে নিষেধ করায় মৌখিক পুলিশকে বিষয়টি জানিয়ে ফিরে আসেন বধূটি। শিবরতনবাবুর দাবি, এর পরে শনিবার পুলিশ বিকেশকে ডেকে চড়-থাপ্পড় মারে। যদিও পুলিশ সে কথা মানেনি।

সোমবার দুই আত্মীয়কে নিয়ে এসে পৌঁছন উমাশঙ্করবাবু। তাঁদের অনুরোধে মঙ্গলবার দলের অফিসে দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা তারাশঙ্কর সেনগুপ্ত। শিবরতনবাবুদের অভিযোগ, সেখানে তাঁদের কোনও কথা শোনা হয়নি। সেখান থেকে বেরিয়ে যান বিকেশ। তিনি বেরিয়ে যাওয়ার পরে একটি কাগজে ফয়সালা হিসেবে লেখা হয়, সঙ্গীতাকে নিয়ে তাঁর বাবা নালন্দায় ফিরবেন। ছ’মাস পরে বিকেশ তাঁকে ফিরিয়ে আনবেন। তার পরে সঙ্গীতার উপরে অত্যাচার হলে আইনি পথে যাবে তাঁর বাপেরবাড়ির লোকেরা। ওই কাগজে তাঁদের জোর করে সই করানো হয় বলেও শিবরতনবাবুর অভিযোগ।

সোমবার সন্ধ্যায় একটি গাছে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলন্ত দেহ মেলে বিকেশের। তাঁর মা মঞ্জুদেবীর অভিযোগ, ‘‘একতরফা সিদ্ধান্ত হতে চলেছে দেখে ছেলে মানতে পারেনি। মরার আগে নেতাদের কথা চিঠিতে লিখে গিয়েছে।’’

পুলিশ জানায়, উমাশঙ্করবাবু ও তাঁর আত্মীয়দের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের করেছেন শিবরতনবাবু। মৃতদেহের শার্টের পকেট থেকে একটি ‘সুইসাইড নোট’ মিলেছে। সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ময়না-তদন্তের পরে এ দিন পারিবারিক রীতি মেনে দেহ সৎকারের জন্য নালন্দায় যান শিবরতনবাবুরা।

তৃণমূল নেতা তারাশঙ্করবাবু বলেন, ‘‘দুই পরিবারের সম্মতিতেই আলোচনা করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হয়েছে। কোনও সালিশি হয়নি। এই পরিণতি হবে, কেউ ভাবতে পারিনি!’’ বিকেশের পকেটে মেলা চিঠিতে যে তিন নেতার নাম রয়েছে তাঁদের বক্তব্য, পড়শি হিসেবে সঙ্গীতার পাশে দাঁড়ানোয় তাঁদের ফাঁসানো হচ্ছে।

তবে তৃণমূলের আসানসোল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসনের বক্তব্য, ‘‘হয়তো ওঁরা সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারিবারিক বিষয়ে মাথা ঘামানো দল পছন্দ করে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন