নেতাই-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত সিপিএমের বিনপুর জোনাল সম্পাদক অনুজ পাণ্ডেকে জেল হেফাজতে পাঠাল ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালত। বৃহস্পতিবার অনুজকে ঝাড়গ্রাম আদালতে তোলা হয়। সিবিআই ধৃতকে হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায়। কিন্তু তা খারিজ করে দিয়ে চার দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
এ দিকে, নেতাই-কাণ্ডে সিআইডির হাতে ধৃতদের জেরা করার জন্য নিজেদের হেফাজতে চেয়ে এ দিনই কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছে সিবিআই। অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী এ দিনআদালতে বলেন, ইতিমধ্যেই সিআইডি ধৃতদের জেরা করেছে। তাছাড়া, ঝাড়গ্রাম আদালত বিচার শুরুর জন্য মামলাটি মেদিনীপুর আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তাই আর নতুন করে জেরার প্রশ্ন ওঠে না। যদিও সিবিআইয়ের আইনজীবী আসরাফ আলির যুক্তি, “এই ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। অনেক অভিযুক্তকে আমরা গ্রেফতার করেছি। কয়েকজন পলাতককে চেষ্টা করেও ধরতে পারিনি। এখন যখন আরও অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়েছে, তখন তদন্তের স্বার্থে তাদের জেরা করা প্রয়োজন।” বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এ দিন শুনানি শেষ করে দিলেও রায়দান স্থগিত রেখেছেন।
এ দিন অনুজের হাজিরার প্রেক্ষিতে ঝাড়গ্রাম মহকুমা আদালত চত্বর ছিল সশস্ত্র পুলিশে ছয়লাপ। আদালত চত্বরে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের ডিএসপি (হেড কোয়ার্টার) সজলকান্তি বিশ্বাসের নেতৃত্বে ১৩০ জন সশস্ত্র পুলিশ।
সিবিআইয়ের আইনজীবী অরুণকুমার ভগত ১৫ দিনের জন্য অনুজকে সিবিআই হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে বলেন, “নেতাই-কাণ্ডে ২০ জন অভিযুক্তের মধ্যে অনুজ পাণ্ডে-সহ আট জন ফেরার থাকা অবস্থায় এই আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছিল। ঘটনায় আরও কেউ জড়িত ছিল কিনা এবং বাকি দুই ফেরার সম্পর্কে জানতে ধৃতকে সিবিআই হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন।” অভিযুক্তের আইনজীবী রঘুনাথ ভট্টাচার্য অবশ্য জানান, মেদিনীপুর দায়রা আদালতে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ-সহ বিচার চলছে। কয়েক দিন আগে নেতাই-কাণ্ডে ধৃত পাঁচ জনের সিবিআই হেফাজতের আবেদনও এই আদালত খারিজ করে দিয়েছে। তাছাড়া, অনুজবাবুর নাম মামলার মূল এফআইআরে ছিল না। পরে সিবিআই চার্জশিটে তাঁকে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে দাবি করে। তাই এই মামলায় নতুন করে আর তদন্তের প্রয়োজন নেই এবং সিবিআই হেফাজতেরও প্রয়োজন নেই বলে দাবি করেন অভিযুক্তের আইনজীবী। বিচারক কৃষ্ণমুরারিপ্রসাদ গুপ্ত সিবিআই হেফাজতের আর্জি খারিজ করে দিয়ে অনুজকে চার দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। তাঁকে ১২ মে ঝাড়গ্রাম আদালতে তোলা হবে।
এ দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ অনুজকে ঝাড়গ্রাম উপ-সংশোধনাগারে নিয়ে যাওয়ার সময় পরিজনদের দেখতে পেয়ে প্রিজন ভ্যানের ভিতর থেকে হাত নাড়েন অনুজ। আদালত চত্বরে ছিলেন অনুজের ভাই উজ্জ্বল পাণ্ডে। দাদাকে হাত নাড়ার সময় উজ্জ্বলের চোখ ছলছল করছিল। তিনি বলেন, “পরিকল্পনা মাফিক দাদাকে নেতাইয়ের ঘটনায় ফাঁসানো হয়েছে। তবে সত্য একদিন প্রকাশ পাবেই।”