অন্তর্বর্তী ভোটের জন্য তৈরি, বার্তা সিপিএমে

মুখ্যমন্ত্রীর মতিগতি দেখে মনে হচ্ছে, যে কোনও সময় বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করে আগাম বিধানসভা ভোটে চলে যেতে পারেন। সেই সম্ভাবনা মাথায় রেখেই রাজ্যে অন্তর্বর্তী নির্বাচনের জন্য এ বার দলকে তৈরি রাখার প্রক্রিয়া শুরু করে দিল সিপিএম। চলতি সম্মেলন-পর্বেই কর্মীদের প্রতি সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্বের পরামর্শ, অকাল ভোট হলে ময়দানে নেমে তৃণমূল এবং বিজেপি-র মোকাবিলা করতে হবে। তৃণমূলের সরকারকে উৎখাত করাই হবে মূল লক্ষ্য। তার জন্য প্রস্তুতি শুরু করতে হবে এখনই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৯
Share:

বাটানগরের জনসভায় সিপিএম নেতা গৌতম দেব। রবিবার। ছবি: অরুণ লোধ

মুখ্যমন্ত্রীর মতিগতি দেখে মনে হচ্ছে, যে কোনও সময় বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করে আগাম বিধানসভা ভোটে চলে যেতে পারেন। সেই সম্ভাবনা মাথায় রেখেই রাজ্যে অন্তর্বর্তী নির্বাচনের জন্য এ বার দলকে তৈরি রাখার প্রক্রিয়া শুরু করে দিল সিপিএম। চলতি সম্মেলন-পর্বেই কর্মীদের প্রতি সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্বের পরামর্শ, অকাল ভোট হলে ময়দানে নেমে তৃণমূল এবং বিজেপি-র মোকাবিলা করতে হবে। তৃণমূলের সরকারকে উৎখাত করাই হবে মূল লক্ষ্য। তার জন্য প্রস্তুতি শুরু করতে হবে এখনই।

Advertisement

বিধানসভা ভোট যখনই হোক, সেই নির্বাচন সিপিএম যে নতুন রাজ্য সম্পাদকের নেতৃত্বে লড়বে, তা-ও এখন আরও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। পুরুলিয়া জেলা সম্মেলনে এক দিকে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র যেমন অন্তর্বর্তী নির্বাচনের জন্য তৈরি থাকার বার্তা দিয়েছেন, তেমনই আবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলনের মঞ্চকে ব্যবহার করে বিমান বসু স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি আর পদে থাকতে চান না। জেলা সম্মেলন থেকে এ বার অধিকাংশ জেলাতেই সম্পাদক বদল হয়েছে। বহু নতুন মুখ এসেছে জোনাল এবং লোকাল কমিটি স্তরেও। এ বার আগামী মার্চের রাজ্য সম্মেলনে রাজ্য স্তরে দলের কাণ্ডারী বদলে বিধানসভা ভোটে ঝাঁপাতে চায় সিপিএম। দলের বড় অংশই মনে করছে, মুখ বদলানো ছাড়া সংগঠনকে চাঙ্গা করার এখন আর কোনও পথ খোলা নেই।

সিপিএমের পুুরুলিয়া জেলা সম্মেলন শেষ হয়েছে রবিবারই। সেই সম্মেলনের শুরুতেই দলের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যবাবু বলে দিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী যদি অন্তর্বর্তী নির্বাচন করতে চান, তা হলে তাঁরাও তৈরি। ময়দানে ‘জানকবুল লড়াই’ হবে! সূর্যবাবুদের যুক্তি, তৃণমূল এবং বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়াই একে অপরের পরিপূরক। রাজ্যে তৃণমূলের সরকার যে পথে চলছে, তাদের সরাতে না-পারলে বিজেপি-র মতো সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে ঠিক ভাবে লড়াই করা যাবে না। তাই ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ এবং ‘জঙ্গলরাজ কায়েম করা’ তৃণমূলের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার ডাক দিয়ে দলের কর্মীদের লড়াইয়ের জন্য তৈরি হতে বলছেন সূর্যবাবুরা।

Advertisement

সেই লড়াইয়ের জন্য নতুন সেনাপতি নিয়োগের প্রক্রিয়াও আবার একই সঙ্গে বহাল! দলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের সম্মেলন শেষ হয়েছে এ দিন পৈলানে সমাবেশ দিয়ে। তার আগে শনিবারই সম্মেলনের প্রতিনিধি অধিবেশনে রাজ্য সম্পাদক বিমানবাবু দলের সর্ব স্তরের জন্য বার্তা দিয়েছেন, পদ আঁকড়ে থাকার দিন শেষ! নিষ্ক্রিয় নেতা-কর্মীদের যেমন সরে যেতে হবে, তেমনই পদে থেকেও নানা কারণে যাঁরা দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না, তাঁদেরও জায়গা আটকে থেকে যাওয়া চলবে না। এই সূত্রেই বিমানবাবু উল্লেখ করেছেন নিজের কথাও। সিপিএম সূত্রের খবর, তিনি সম্মেলনে বলেছেন, পদ আঁকড়ে থাকার লোক বিমান বসু নন! তাঁর কথা যেন মিলিয়ে নেওয়া হয়!

কোনও কোনও মহলে প্রশ্ন উঠছে, অন্তর্বর্তী ভোটের যদি মুখোমুখি হতে হয়, তার আগেই সম্পাদক বদল কি ঝুঁকি হয়ে যাবে না? সিপিএম নেতৃত্বের বড় অংশের বক্তব্য, লাগাতার নানা নির্বাচনে অবিরাম রক্তক্ষরণের পরে এখন আর দলের নতুন করে হারানোর কিছু নেই। তাই নেতৃত্বের স্তরে রদবদল করে মরিয়া চেষ্টা করতে অসুবিধা কোথায়? দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, “তৃণমূল দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। যেখানে যেখানে আমরা পৌঁছতে পারছি, মানুষ আমাদের সঙ্গে কথা বলতে আসছেন। স্থানীয় স্তরে মিছিল-সভায় লোকও হচ্ছে। এই তৎপরতাকেই আরও বাড়িয়ে ভোটের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।”

সিপিএম নেতৃত্বের আরও যুক্তি, সারদা-কাণ্ডে কোণঠাসা তৃণমূলে সন্দেহ এবং অবিশ্বাস বাড়ছে। ভাঙনের আতঙ্ক শাসক দলকে গ্রাস করছে। আবার শাসক দল ভাঙিয়ে লোক নিতে গিয়ে অন্তর্কলহে জড়িয়ে পড়ছে বিজেপি-ও। রাজ্য নেতৃত্বের কাজকর্ম নিয়ে এখন থেকেই গেরুয়া শিবিরে ক্ষোভ বাড়ছে, কোথাও কোথাও দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসছে। এই পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার কথা বলছেন সিপিএম নেতৃত্ব। কর্মীদের প্রতি তাঁদের পরামর্শ, ক্ষমতাসীন তৃণমূল এবং ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন-দেখা বিজেপি-র মধ্যে কার্যত যে তফাত নেই, সেই কথাই মানুষকে বোঝাতে হবে বেশি করে।

বিজেপি-র বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য দাবি করছেন, তাঁদের দলে অন্তর্দ্বন্দ্বের যেটুকু ঘটনা ঘটছে, তা ব্যতিক্রম মাত্র। শমীকের কথায়, “রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনযায়ী তৃণমূলকে রাজনৈতিক দলের সংজ্ঞায় ফেলা যায় কি? তাদের সঙ্গে বিজেপি-র মতো শৃঙ্খলাবদ্ধ, সর্বভারতীয় দলের কোনও তুলনাই হয় না!” সিপিএমের সম্মেলন-পর্বে বিজেপি-র বিরুদ্ধে আক্রমণ যে ভাবে তীব্রতা পাচ্ছে, সেই প্রবণতাকে বরং রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে তাঁদের উত্থানের ‘স্বীকৃতি’ হিসাবেই দেখছেন শমীকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন