অবন ঠাকুর শুধু ছবি লিখতেন না, বিচিত্র রান্নাও করতেন। রান্নার ক্লাস খুলেছিলেন ঠাকুর বাড়িতে। তার আগে রান্না নিয়ে রীতিমতো পড়াশোনা। মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ‘দক্ষিণের বারান্দা’ বইতে দাদামশাইয়ের কীর্তিকলাপ লিখে গিয়েছেন। বাংলা রান্নার বই, মুসলমানী কেতাব কেনা হল। মিসেস বিটনের ‘কুকারি-বুক’ বেরোল আলমারি থেকে। তবে বই পড়ে নাকি রান্না হয় না। রান্না করতে হবে নিজের মতো, আপ-রুচি খানার মত আপ-রুচি রান্না। সেই আপ-রুচির দাপটে অবনীন্দ্রনাথ প্রচলিত প্রথাগুলো উলটে দিতেন। যেখানে পেঁয়াজ ভাজার কথা প্রথমে সেখানে পেঁয়াজ ভাজতেন শেষে, যেখানে সাঁতলানোর কথা শেষে সেখানে মাছ-তরকারি সাঁতলে নিয়ে রান্না শুরু করতেন। এভাবেই উলটে-পালটে নিজের নতুন পদ্ধতি লাগিয়ে রান্না করেছিলেন ‘মুর্গির মাছের ঝোল’, ‘মাছের মাংসের কারি’। একবার কবি জসীমউদ্দিনকে বিচিত্র রান্না করে ক্লাবের সভাপতি অবধি বানিয়েছিলেন। ঠাকুরবাড়িতে নানা ক্লাব তৈরি হত আর বন্ধ হত। এমনই এক নতুন ক্লাবের সভাপতির পদপ্রার্থী জসীম। সদস্যরা বলেছে ভাল খাওয়ালে তবে ভোট। জসীম গ্রামের মানুষ, ঘি-তেল-চিনি-সুজি-আলু-বেগুন-বাদাম-দই-সন্দেশ দিয়ে কী একটা বানালে। ঠাকুর বাড়ির ভোটাররা সে খাদ্য খেল কিন্তু ভোট দেবে কি না ঠিক নেই। জসীমের শুকনো মুখ। শুনে অবন ঠাকুর বললেন, ‘কী কী কিনেছিলে? সব লেগেছে রান্নায়?’ ‘না, লাগেনি।’ বললেন, ‘নিয়ে এসো বাড়তি জিনিস।’ বাড়তি দিয়ে অবন ঠাকুরের রেসিপিতে তৈরি হল ‘জোসী কাবাব’। সবাই বলল ভোট দেবে। সে ফর্মুলা রান্নার বইতে নেই। অপূর্ব ছবি, লেখা আর রান্নার ফর্মুলা হয় না।