অভিজিতের বিরুদ্ধেই রায় গণভোটের

ঘেরাওকারী পড়ুয়াদের উপরে পুলিশি পীড়নের প্রায় দেড় মাস পরে কার্যত দুঃখ প্রকাশ করে শিক্ষক সংগঠনকে চিঠি দিয়েছেন তিনি। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশই যে তাঁকে চাইছেন না, গণভোটে তা স্পষ্ট করে দিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা শাখার পড়ুয়ারা। প্রথম পর্যায়ে দু’দিনের গণভোট শেষে শুক্রবার ফল ঘোষণা করে তাঁরা জানান, ভোটারদের ৯৭ শতাংশই উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর পদত্যাগের পক্ষে রায় দিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:১৮
Share:

ঘেরাওকারী পড়ুয়াদের উপরে পুলিশি পীড়নের প্রায় দেড় মাস পরে কার্যত দুঃখ প্রকাশ করে শিক্ষক সংগঠনকে চিঠি দিয়েছেন তিনি। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশই যে তাঁকে চাইছেন না, গণভোটে তা স্পষ্ট করে দিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা শাখার পড়ুয়ারা। প্রথম পর্যায়ে দু’দিনের গণভোট শেষে শুক্রবার ফল ঘোষণা করে তাঁরা জানান, ভোটারদের ৯৭ শতাংশই উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর পদত্যাগের পক্ষে রায় দিয়েছেন।

Advertisement

আইনি বৈধতা না-থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা ও দৈনন্দিন কাজকর্মের ক্ষেত্রে এই গণভোটের রায় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন অনেকে। বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর এই বিরোধিতার আবহে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ কবে ফিরবে, তা নিয়ে এ দিন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কিছু আধিকারিক। বিশেষত পঠনপাঠনের পরিবেশ ফিরবে কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এই গণভোটের পর্যবেক্ষক, সমাজকর্মী সুজাত ভদ্র বলেন, “আইনি ভিত্তি না-থাকলেও এই ভোটের ফলাফলের একটা সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা আছে।” অন্য এক পর্যবেক্ষক, আইনজীবী রুবি মুখোপাধ্যায় আগেই জানিয়েছেন, কেউ আইনি পদক্ষেপ করতে চাইলে এই ফলাফল সহায়ক হতে পারে।

১৬ সেপ্টেম্বর ঘেরাও হটানোর জন্য অভিজিৎবাবুই ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকেছিলেন। পড়ুয়াদের উপরে পুলিশি আক্রমণের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। তার পরে স্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পরিবেশ ফেরাতে পারেননি অভিজিৎবাবু। যদিও সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি দাবি করেছেন, ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের সন্তানতুল্য বলে অভিহিত করেছেন তিনি। তা সত্ত্বেও পড়ুয়ারা গণভোটের রাস্তা নেওয়ার পরে গত মঙ্গলবার দুঃখ প্রকাশ করে শিক্ষক সংগঠন ‘আবুটা’কে চিঠি দেন উপাচার্য। কিন্তু তাতেও যে তাঁর প্রতি পড়ুয়া শিবিরের বিরূপতা কিছুমাত্র কমেনি, গণভোটের ফলাফলেই সেটা পরিষ্কার।

Advertisement

মূলত অভিজিৎবাবুর ইস্তফার প্রশ্নে বৃহস্পতি ও শুক্রবার গণভোটের আয়োজন করেছিলেন কলা শাখার ছাত্রছাত্রীরা। বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রছাত্রীদের গণভোট হওয়ার কথা ১১-১২ নভেম্বর। এ দিন কলা শাখার পড়ুয়াদের গণভোটের পরে ভোটগণনা শুরু হয়। ক্যাম্পাসের চার নম্বর গেটের সোজাসুজি বিজ্ঞান শাখার ছাত্র সংসদের সামনে চৌমাথায় সকলের সামনেই চলে গণনা।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ গণনা শেষে ছাত্রছাত্রীরা জানান, ২৯৭০ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২৬০২ জন। ভোটারদের মধ্যে মাত্র ৮০ জন অভিজিৎবাবুকে উপাচার্য হিসেবে চান আর ২৫ জনের ভোট বাতিল হয়েছে। বাকি ২৪৯৭ (যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁদের ৯৭ শতাংশ) জনই অভিজিৎবাবুর পদত্যাগের পক্ষে রায় দিয়েছেন বলে গণনা শেষে ছাত্রছাত্রীরা জানিয়ে দেন।

আন্দোলনকারী ছাত্রী অরুমিতা মিত্র বলেন, “উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি তো আছেই। যৌন নিগ্রহের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে যে-কমিটি (আইসিসি) আছে, তা পুনর্গঠনের দাবির পক্ষেও ভোট দিয়েছেন প্রায় ৯৭% পড়ুয়া। এই ফল আমাদের আন্দোলনের নৈতিক জয়।”

ক্যাম্পাসে পুলিশি তাণ্ডবের দীর্ঘ দিন পরে উপাচার্য দুঃখ প্রকাশ করে ‘আবুটা’কে চিঠি দিলেও তাকে বিশেষ আমল দিতে রাজি নন ছাত্রছাত্রীরা। অনেকেই মনে করছেন, তাঁর ইস্তফার দাবিতে ছাত্রছাত্রীরা গণভোট করায় এবং ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় সমাবর্তনে আমন্ত্রিতদের অনেকেরই না-আসার আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় এখন চিঠি দিয়ে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন অভিজিৎবাবু।

উপাচার্য এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাননি। ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে উপাচার্য লাইন কেটে দেন। এসএমএস করেও জবাব মেলেনি। রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী গণভোটের কোনও ভিত্তি নেই। তাই কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করেননি।

বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ দৈনিক কাজের খতিয়ান পেশ-সহ সম্প্রতি যে-সব নির্দেশিকা জারি করেছেন, সেগুলো প্রত্যাহারের দাবিতে এ দিন ফের রেজিস্ট্রারের সঙ্গে দেখা করে শিক্ষক সংগঠন জুটা-র প্রতিনিধিদল। রেজিস্ট্রার এই বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান। কিন্তু জুটা তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নীলাঞ্জনা গুপ্ত জানান, বুধবার তাঁরা ফের রেজিস্ট্রারের সঙ্গে দেখা করবেন। সে-দিন সদর্থক উত্তর না-পেলে অবস্থানে বসা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন