পাড়ুই নির্যাতন-কাণ্ড

অভিযুক্ত পুলিশদের ধরার দাবি পরিবারের

আধিকারিক থেকে কর্মী সে দিনের অভিযানে সামিল পুলিশের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই কোনও না কোনও ‘শাস্তিমূলক’ ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করলেন জেলার পুলিশ সুপার। কিন্তু, দিনের শেষে পুলিশের এই তৎপরতা সন্তুষ্ট করতে পারেনি পাড়ুইয়ের সাত্তোরের নির্যাতিতা বধূর পরিবারকে। অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকদের মধ্যে বীরভূম জেলা পুলিশের স্পেশ্যাল অপারেশেন গ্রুপের ওসি কার্তিকমোহন ঘোষকে সাসপেন্ড করা হয়েছে মঙ্গলবার।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৭
Share:

বোলপুরে এসডিপিও অফিস থেকে বৈঠক শেষে বেরিয়ে আসছেন পুলিশকর্তারা। —নিজস্ব চিত্র

আধিকারিক থেকে কর্মী সে দিনের অভিযানে সামিল পুলিশের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই কোনও না কোনও ‘শাস্তিমূলক’ ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করলেন জেলার পুলিশ সুপার। কিন্তু, দিনের শেষে পুলিশের এই তৎপরতা সন্তুষ্ট করতে পারেনি পাড়ুইয়ের সাত্তোরের নির্যাতিতা বধূর পরিবারকে।

Advertisement

অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকদের মধ্যে বীরভূম জেলা পুলিশের স্পেশ্যাল অপারেশেন গ্রুপের ওসি কার্তিকমোহন ঘোষকে সাসপেন্ড করা হয়েছে মঙ্গলবার। একই সঙ্গে এসডিপিও (বোলপুর) অম্লানকুসুম ঘোষ-সহ ৯ জনকে শো-কজ করেছেন পুলিশ অফিসার। কার্তিকবাবু এবং দুই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তও হবে বলে জানিয়েছেন এসপি। যদিও এ দিন নির্যাতিতার স্বামী বলেন, “শুধু সাসপেন্ড করে কী হবে? দোষী পুলিশ অফিসারদের গ্রেফতার করা হোক। ঘটনায় জড়িত তৃণমূলের লোকেদেরও আড়াল করা চলবে না।” প্রত্যেকেরই কড়া শাস্তির দাবি তুলেছে নির্যাতিতার পরিবার। একই কথা শোনা গিয়েছে ওই বধূর শাশুড়ি এবং জায়ের মুখেও।

অভিযুক্তকে ধরতে এসে পাড়ুইয়ের ওই বধূর উপরে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল বীরভূম জেলা পুলিশের বিরুদ্ধে। রবিবার ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। বিজেপি-সহ বিরোধী দলগুলি একযোগে সরব হয়। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই বধূর সঙ্গে দেখা করে ঘটনার নিন্দা করেন রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়ও। রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী এবং সাত্তোরে নির্যাতিতার বাড়ি যায় বিজেপি-র দু’টি পৃথক প্রতিনিধিদল। সদ্য বিজেপি-তে যোগ দেওয়া অভিনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, এক জন মহিলার উপর এমন নির্যাতনের পরেও কেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চুপ। সোমবার সংবাদমাধ্যমের কাছেও একই আক্ষেপের কথা জানান নির্যাতিতাও। তার পরেও ঘরে-বাইরে জোড়া চাপের মুখে পড়ে এ দিন সকালে বীরভূমের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের ওসি কার্তিকমোহন ঘোষকে সাসপেন্ড করার কথা জানান এসপি অলোক রাজোরিয়া।

Advertisement

পাড়ুইয়ের ওই ঘটনার জেরে এ দিন দিনভরই নানা তৎপরতা দেখা গিয়েছে জেলা পুলিশে। সকালে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নানা ‘শাস্তিমূলক’ নির্দেশ দেওয়ার পরেই দুপুরে এসপি ছুটে যান বোলপুরে। সেখানে তাঁর সঙ্গে এক ঘণ্টার উপর রুদ্ধদার বৈঠক করেন আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত এবং ডিআইজি (বর্ধমান রেঞ্জ) অজয় নন্দা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এসডিপিও (বোলপুর) অম্লানকুসুম ঘোষের কার্যালয়েই ওই বৈঠক হলেও পুলিশকর্তারা তাঁকে রাখেননি। সোমবার পাড়ুই থানায় জমা দেওয়া অতিরিক্ত অভিযোগপত্রে অম্লানবাবুর বিরুদ্ধেও নির্যাতনের অভিযোগ এনেছে বধূর পরিবার। যার পরের দিনই এসপি-র কাছ থেকে ‘শো-কজ’-এর চিঠি পেয়েছেন ওই পুলিশ আধিকারিক। জেলা পুলিশের একটি সূত্রের খবর, পাড়ুইয়ের ওই ঘটনায় বীরভূম পুলিশের মুখ পুড়েছে। এই অবস্থায় কীভাবে পরিস্থিতি সামলে পুলিশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করা যায়, মূলত তা নিয়েই পুলিশকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। যদিও বৈঠক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে সিদ্ধিনাথ এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। অন্য দিকে, ‘এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বৈঠক’ মন্তব্য করে সটান গাড়িতে উঠে যান অজয় নন্দা।

বর্ধমানের বুদবুদ থানার কলমডাঙা গ্রামে বাপের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ওই বধূকে বীরভূম পুলিশের এক বিশেষ দল অকথ্য নির্যাতন করে বলে অভিযোগ। প্রথমে সিউড়ি সদর হাসপাতাল এবং পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় নির্যাতিতাকে। তাঁর অবস্থা এখন অনেকটাই স্থিতিশীল বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। এ দিনই তাঁর বেশ কয়েকটি শারীরিক পরীক্ষাও করানো হয়েছে। আপাতত মহিলাকে না ছাড়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ দিনই হাইকোর্টে স্বতঃপ্রোণিদত মামলায় রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল লক্ষ্মী গুপ্তের কাছে প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর জানতে চান, নির্যাতিত মহিলার চিকিৎসা কোথায় করানো হচ্ছে। লক্ষ্মীবাবু জানান, বর্ধমান মেডিক্যালে মহিলার চিকিৎসা হচ্ছে। এর পরেই প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দেন, নির্যাতিতার চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা রাজ্য সরকারকে করতে হবে। পাশাপাশি নিশ্চিত করতে হবে তাঁর নিরাপত্তার দিকটিও।

এ দিনই আবার পাড়ুইয়ের ওই ঘটনায় সমাজকর্মী বিপ্লব চৌধুরী বোলপুরের এসডিপিও-র কাছে অভিযোগপত্র জমা দিয়ে সেটিকে এফআইআর হিসেবে গণ্য করার দাবি জানিয়েছেন। সোমবার বুদবুদ থানা তাঁর অভিযোগপত্র নেয়নি বলে বিপ্লববাবু দাবি করেছিলেন। এ দিন বোলপুরে গিয়ে তিনি বলেন, “সংবাদমাধ্যমের কাছে এই বর্বরোচিত ঘটনার কথা জানতে পেরেছি। এক জন সংবেদনশীল নাগরিক হিসেবে নারী নির্যাতনের এই বেনজির ঘটনায় যুক্ত পুলিশকর্মীদের এবং তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন