অভয় আশ্রমের দায়িত্বে রাজ্য

অবশেষে জট কাটল বিরাটির অভয় আশ্রমের। কেন্দ্রের খাদি কমিশনের কাছ থেকে অভয় আশ্রমের দায়িত্বভার নিল রাজ্য খাদি বোর্ড। বৃহস্পতিবার বিরাটিতে অভয় আশ্রমের ‘পুনরুজ্জীবন’ অনুষ্ঠানে রাজ্যের আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরেই আমরা

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪৪
Share:

অভয় আশ্রমে রাজ্যের আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদের চেয়ারম্যান গৌরীশঙ্কর দত্ত এবং উত্তর দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান কল্যাণ কর। বৃহস্পতিবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

অবশেষে জট কাটল বিরাটির অভয় আশ্রমের। কেন্দ্রের খাদি কমিশনের কাছ থেকে অভয় আশ্রমের দায়িত্বভার নিল রাজ্য খাদি বোর্ড। বৃহস্পতিবার বিরাটিতে অভয় আশ্রমের ‘পুনরুজ্জীবন’ অনুষ্ঠানে রাজ্যের আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরেই আমরা

Advertisement

আশ্রমের দায়িত্বভার নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। অবশেষে ঐতিহ্যবাহী অভয় আশ্রমের দায়িত্বভার নিতে পেরে আমরা খুশি। আবার নতুন সাজে এখানে উৎপাদন শুরু হবে।’’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদের চেয়ারম্যান গৌরীশঙ্কর দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘খাদি কমিশনের কাছ থেকে অভয় আশ্রমের দায়িত্ব পেয়েছি আমরা। এ বার এখানে নতুন ভাবনায় কাজ শুরু হবে।’’ এ দিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন অভয় আশ্রমের পুরনো কর্মীদের কয়েক জন। অভয় আশ্রমের দায়িত্বভার রাজ্য নেওয়ায় আশার আলো দেখছেন তাঁরাও।

গ্রামভিত্তিক কুটির শিল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার জন্য ১৯২১ সালে কুমিল্লার ‘সবিতা মিশন’ বিরাটিতে স্থানান্তরিত হয়।

Advertisement

গাঁধীজীর পরামর্শে তার নামকরণ হয় ‘অভয় আশ্রম’। একে-একে পশ্চিমবঙ্গের ১০টি জায়গায় আশ্রমের শাখা ছড়িয়ে পড়ে। এক সময় খাদির পোশাক, ঘানিতে ভাঙা সর্ষের তেল, কাগজ বা আগরবাতির মতো কুটির শিল্পে দেশ-বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছিল এই অভয় আশ্রম। এই আশ্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ, চিত্তরঞ্জন দাশ, সুভাষচন্দ্র বসুর মতো মানুষজন।

কিন্তু ট্রাস্টি মালিকানার এই আশ্রমটি ক্রমশ রুগ্‌ণ হয়ে পড়লে ১৯৮১ সালে তার দায়িত্ব নেয় কেন্দ্রীয় খাদি ও গ্রামোদ্যোগ কমিশন। এর পর থেকে লাভ-ক্ষতির মধ্যে দিয়ে চলছিল আশ্রমটি। কিন্তু ২০০৮ থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৯ থেকে বেতন বন্ধ হয়ে যায় আশ্রমের ৫০ জন কর্মীর। ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে কেন্দ্রের হাত থেকে আশ্রমটির দায়ভার গ্রহণের সিদ্ধান্ত জানায় রাজ্য সরকার। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের হাতে বকেয়া বেতন বাবদ প্রাথমিক ভাবে ২৮ লক্ষ টাকা তুলে দেয় রাজ্যের অর্থ দফতর। ২০১০-এর ফেব্রুয়ারি মাসে বকেয়া বেতনও পেয়ে যান আশ্রমের কর্মীরা। কিন্তু ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ফের বন্ধ হয়ে যায় বেতন। সে বছরই বদলে যায় রাজ্যের সরকারও। অন্ধকারে পড়ে থাকে অভয় আশ্রম।

তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পরে আশ্রম নিয়ে বারবার দরবারও করেন কর্মীরা, কিন্তু সুরাহা হয়নি। ‘অভয় আশ্রম বাঁচাও কমিটি’ গড়ে নাগরিক কনভেনশনও করেন কর্মীরা। কিন্তু সমস্যা মেটে না। অধিগ্রহণ নিয়ে কেন্দ্রের খাদি কমিশনের সঙ্গে টালবাহানা চলতে থাকে রাজ্য খাদি বোর্ডের।

এর মধ্যে বিরাটি স্টেশনের কাছে ২২ বিঘা জমির উপরে আশ্রমের মূল কার্যালয়টি জঙ্গলে পরিণত হয়। ৫০ জন কর্মীর মধ্যে অর্থাভাবে, বিনা চিকিৎসায় মারাও যান অনেকে। বন্ধ হয়ে যায় কর্মীদের অবসরকালীন ভাতাও। অবশেষে অভয় আশ্রমের দায়িত্ব পেল রাজ্য খাদি বোর্ড।

পুরনো কর্মীদের বেতন, অবসরকালীন ভাতার কী ব্যবস্থা হবে, এই প্রশ্ন করা হলে চন্দ্রিমাদেবী এ দিন বলেন, ‘‘পুরনো কর্মীদের অনেকেই আর নেই। আমরা সবে আশ্রমের দায়িত্বভার নিয়েছি। এ বার ধাপে ধাপে কী কী উৎপাদন করা যায়, কিসের প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় সে সব দেখা হবে। সেই সঙ্গে চলবে নতুন কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়াও।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন