সারদা-কাণ্ডে আজ, সোমবার ইডি-র জেরার মুখোমুখি হওয়ার কথা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক শঙ্কুদেব পণ্ডার। তৃণমূলের আমলে জঙ্গি ছাত্র আন্দোলন করে বহু বার বিতর্কে জড়িয়ে পড়া শঙ্কুদেব খোদ দলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ ও স্নেহভাজন।
ইডি যেমন শঙ্কুদেবকে তলব করেছে, তেমনই ‘কলম’ পত্রিকার এক সময়ের প্রকাশক ও মুদ্রক আমিনউদ্দিন সিদ্দিকীকে ডেকে পাঠিয়েছে সিবিআই। গোয়েন্দারা জানান, ব্যবসায়ী আমিনউদ্দিনের সঙ্গে রবিবার সিবিআইয়ের তরফে যোগাযোগ করা হয়। আজ, সোমবার তাঁকে সল্টলেকে সিবিআইয়ের দফতরে গিয়ে দেখা করতে বলা হয়েছে। সূত্রের খবর, তাঁকে জেরা করে ‘কলম’ পত্রিকার মালিক তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য আহমেদ হাসান ইমরানের সঙ্গে সারদার আর্থিক লেনদেনের খোঁজও পেতে চাইছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা।
ইডি সূত্রের দাবি, সারদা সংস্থা তথা সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকে নগদ টাকা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধে যাঁরা পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে শঙ্কুদেবও এক জন। শঙ্কুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে একটা সময়ে সারদার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতি মাসে প্রচুর টাকা ঢুকেছে। সেই টাকা সে কেন পেয়েছে, ওই টাকা সংগ্রহের ব্যাপারে শঙ্কু দলীয় প্রভাব খাটিয়েছিলেন কি না, দলের অন্য কোনও শীর্ষনেতার তাতে হাত ছিল কি না, এই সব নিয়েই তাঁকে জেরা করতে চাইছে ইডি।
গত ২৩ ডিসেম্বর ইডি-র নোটিস পাওয়ার পর শঙ্কুর কয়েক জন অনুগামী জানিয়েছিলেন, ২৯ ডিসেম্বর তিনি ইডি-র দফতরে হাজির হবেন। ইডি তাঁকে তলব করলেও, তাদের দফতরে সোমবার তিনি হাজির হবেন কি না, সে ব্যাপারে শঙ্কুর কোনও মত জানা যায়নি। রবিবার তাঁর মোবাইলে বার বার ফোন করলেও শঙ্কু ধরেননি। এসএমএসেরও জবাব দেননি।
ইডি সূত্রে বলা হয়, সারদা ‘চ্যানেল টেন’ কিনে নেওয়ার পর ওই সংবাদ চ্যানেলের এক জন উচ্চপদাধিকারী হিসেবে শঙ্কুদেব মোটা টাকা বেতন ও সর্বক্ষণ ব্যবহারের জন্য একটি গাড়ি নিতেন। পরে মমতা-ঘনিষ্ঠ শিল্পী শুভাপ্রসন্নর চালু না-হওয়া সংবাদ চ্যানেলেরও কর্তা হন শঙ্কুদেব। ওই চ্যানেলটি পরে সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেনকে বেচে দেওয়া হয়। তার পরেও শঙ্কু চালু না-হওয়া ওই চ্যানেলের কর্তা হিসেবে মাসের পর মাস মোটা টাকা বেতন পেতেন এবং সেই টাকা যেত সারদার অ্যাকাউন্ট থেকেই। তবে তদন্তকারীদের একাংশের অভিযোগ, মোটা বেতন ছাড়াও সারদার কাছ থেকে আরও বহু টাকা কখনও নগদে, কখনও চেকে নিয়েছেন শঙ্কু। কেন তাঁকে ওই টাকা দেওয়া হয়েছে, তা জানতে শঙ্কুকে জেরা করতে চায় ইডি।
সিবিআই সূত্রের খবর, তাঁরা ইতিমধ্যেই আমিনউদ্দিন সিদ্দিকী সম্পর্কে অনেক তথ্য সংগ্রহ করেছেন। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটির দাবি, আমিনউদ্দিনের কাছ থেকে ‘কলম’ পত্রিকার কর্মীদের বেতন দেওয়ার টাকাও নেওয়া হতো বলে জানতে পেরেছে সিবিআই। আমিনউদ্দিন কী ভাবে ও কেন ‘কলম’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হলেন, কেন প্রকাশক ও মুদ্রক হয়ে টাকা ঢাললেন, এ সব প্রশ্নের উত্তর চাইছেন গোয়েন্দারা। পরে বিপুল টাকায় এই পত্রিকাটি সারদাকে বেচে দেন মালিক তৃণমূল সাংসদ ইমরান। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ‘কলম’ পত্রিকা হাতবদল সংক্রান্ত যে দলিলের কপি ইমরান সিবিআই ও ইডি-কে দিয়েছেন, তাতে টাকার অঙ্কটি মুছে দেওয়া হয়েছে। এই দলিলে সাক্ষী হিসেবে আমিনউদ্দিনের যে স্বাক্ষর রয়েছে, সেটিও জাল বলে অভিযোগ। এ বিষয়গুলি নিয়েও সোমবারই আমিনউদ্দিনের কাছে জানতে চাইবে সিবিআই।
সিবিআই সূত্রের দাবি, ‘কলম’ পত্রিকায় আমিনউদ্দিনের যুক্ত হওয়া এবং কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার পিছনে শাসকদলের এক শীর্ষনেতার ভূমিকা রয়েছে বলে তারা জেনেছে। পত্রিকার প্রকাশক ও মুদ্রক আমিনউদ্দিনের উপর চাপ সৃষ্টি করে তাঁকে কর্মীদের বেতনের টাকা দিতে বাধ্য করা হয়েছিল বলেও তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। সেই সময়ে ‘কলম’-এর কার্যনিবাহী সম্পাদক ছিলেন ইমরান, যিনি অধুনা-নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন সিমি-র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকও। সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগ করেছেন, কাগজে কলমে ‘কলম’ পত্রিকাটি তাঁকে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হলেও, সেটির মালিকানা তাঁকে হস্তান্তর করা হয়নি।