আনন্দীলাল শতবর্ষে নিরানন্দের বিভাজন

শোকপ্রস্তাবের পরেই ভোজসভা! সেখানে নেই বর্ষীয়ান মন্ত্রীরা। অতিথি আপ্যায়ন চলছে ঠিকই। তবে অনেকটা যেন অপরাধী মুখে! শীতকালীন অধিবেশন সূচনার দিনে এমনই দৃশ্যের সাক্ষী থাকল বিধানসভার লন। উপলক্ষ প্রয়াত প্রাক্তন বিধায়ক আনন্দীলাল পোদ্দারের জন্মশতবর্ষ। যিনি কলকাতার মেয়র এবং বিধায়ক ছিলেন কংগ্রেসের হয়ে। যাঁর পরিবার ঘনিষ্ঠ ছিল প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু-সহ সিপিএম নেতৃত্বের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:২১
Share:

শোকপ্রস্তাবের পরেই ভোজসভা! সেখানে নেই বর্ষীয়ান মন্ত্রীরা। অতিথি আপ্যায়ন চলছে ঠিকই। তবে অনেকটা যেন অপরাধী মুখে! শীতকালীন অধিবেশন সূচনার দিনে এমনই দৃশ্যের সাক্ষী থাকল বিধানসভার লন।

Advertisement

উপলক্ষ প্রয়াত প্রাক্তন বিধায়ক আনন্দীলাল পোদ্দারের জন্মশতবর্ষ। যিনি কলকাতার মেয়র এবং বিধায়ক ছিলেন কংগ্রেসের হয়ে। যাঁর পরিবার ঘনিষ্ঠ ছিল প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু-সহ সিপিএম নেতৃত্বের। আর এখন বিজেপির গন্ধমাখা হাওয়ায় তাঁর শতবর্ষ পালন করতে গিয়ে বিড়ম্বনা ডেকে এনেছে শাসক তৃণমূল শিবির! মতের ফারাক দেখা দিয়েছে শীর্ষ স্তরেই। অস্বস্তি এতটাই যে, মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেও যাওয়া হয়নি দুই মতালম্বীদেরই।

আনন্দীলালের ব্যবসায়ী পরিবার বিধানসভার কাছে প্রস্তাব দিয়েছিল, প্রাক্তন বিধায়কের শতবর্ষ উদযাপন করার দায়িত্ব এবং খরচা সামলাবে তারাই। সেই প্রস্তাব বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যদের কাছে পাড়তেই সমস্যার সূত্রপাত। অধিবেশনের আগে সর্বদল বৈঠকে স্পিকার বলেছিলেন, পরিবারের প্রস্তাব মেনে আনন্দীলালের শতবর্ষ উদযাপন করা হবে। বিধানসভা সূত্রের খবর, শোনা মাত্রই বর্ষীয়ান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় পাল্টা প্রস্তাব দেন, তাঁর শতবর্ষ পালনের সিদ্ধান্তও এখন থেকে নিয়ে রাখা হোক! বৈঠকে এক ঝাঁক বিস্মিত মুখের সামনে সুুব্রতবাবুর ব্যাখ্যা ছিল, আনন্দীলাল বিধায়ক ছিলেন ১৯৫২ সাল থেকে পাঁচ বছরের জন্য। সুব্রতবাবুর এখনই তার কয়েক গুণ বেশি বছর বিধানসভায় কাটানো হয়ে গিয়েছে। তা হলে তাঁরও তো জন্মশতবর্ষ উদযাপনের হক আছে! পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ব্যাখ্যা দেন, পোদ্দার পরিবার নিজে থেকে এগিয়ে এসে প্রস্তাব দিয়েছে বলেই অনুষ্ঠান ও মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন হচ্ছে। সুব্রতবাবুর যুক্তি কিন্তু এর পরেও সাফ। এক দফার বিধায়কের জন্মশতবর্ষ বিধানসভায় পালন হলে অন্য বিধায়কেরা কী দোষ করলেন?

Advertisement

সে দিন থেকেই সুব্রতবাবুর পাশে আছেন সরকারি মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তাঁর মতো অনেকেরই আবার মনে হয়েছে, প্রয়াত অনেকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিধানসভায় শোকপ্রস্তাব পাঠ করে এসেই আবার ভোজসভা, ব্যাপারটা একটু অস্বস্তিকর। বিধানসভার লবিতে শুক্রবার আনন্দীলালের ছবিতে মালা দিয়েছেন শোভনদেব। কিন্তু খাওয়ার আসরে যাননি। যাননি সুব্রতবাবুও। অনুষ্ঠানে থেকেও ভোজসভায় উপস্থিত হননি বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বা কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া। বিধানসভা চত্বরে সামিয়ানার নীচে খাদ্য বাসরে দেখা যায়নি পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থবাবুকেও! আর মুখ্যমন্ত্রী আগেই ছবিতে মালা দিয়ে চলে গিয়েছিলেন।

বিধানসভা শুধু আনন্দীলালের শতবর্ষ পালন করেনি। স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপিন চন্দ্র পালের (ইতিহাসখ্যাত লাল-বাল-পালের অন্যতম) ১৫৬তম জন্মদিনও পালন করা হয়েছে। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি! অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ-পত্রে বিপিন পালের আগে আনন্দীলালের নাম কেন, তা-ই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। মানসবাবু যেমন বলেছেন, “এটা দৃষ্টিকটূ। স্পিকার নিশ্চয়ই আমন্ত্রণ-পত্রটা দেখেননি!”

স্পিকার অবশ্য বলেছেন, এমন ছোটখাটো বিষয়ে মাথা না ঘামানোই ভাল। তাঁর ব্যাখ্যা, “বিধানসভায় যাঁদের তৈলচিত্র বা ছবি আছে, তাঁদের জন্মদিন পালন করাই রেওয়াজ। আনন্দীলালের ছবি আগেই ছিল।” আনন্দীলালের সেই ছবি রেখেই এ দিনের অনুষ্ঠান হল। তবে সেখানে নিরানন্দের সুরই যেন বাজল আবহে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন