আলু অমিল সীমান্তের বাজারে, বাড়ছে ক্ষোভ

ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোয় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। রাজ্যের সীমান্তের তিন কিলোমিটার দূরেই ‘নাকা’ তৈরি করেছে পুলিশ-প্রশাসন। তাঁদের নজর এড়িয়ে আলু পাঠানোর সাধ্য নেই কারও। আর তার জেরেই রাজ্যের সীমান্তের বিভিন্ন বাজারে আলুর দাম আকাশছোঁয়া। পুলিশ-প্রশাসনের বেড়াজাল ভেঙে রাজ্যের বিভিন্ন সীমান্তের বাজারে আলু পৌঁছতে রাজি নন ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি নিয়ে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের নানা এলাকা থেকে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে লিখিত ভাবে বেশ কয়েকটি অভিযোগ এসেছে।

Advertisement

দিবাকর রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৪ ০৩:১২
Share:

ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোয় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। রাজ্যের সীমান্তের তিন কিলোমিটার দূরেই ‘নাকা’ তৈরি করেছে পুলিশ-প্রশাসন। তাঁদের নজর এড়িয়ে আলু পাঠানোর সাধ্য নেই কারও। আর তার জেরেই রাজ্যের সীমান্তের বিভিন্ন বাজারে আলুর দাম আকাশছোঁয়া। পুলিশ-প্রশাসনের বেড়াজাল ভেঙে রাজ্যের বিভিন্ন সীমান্তের বাজারে আলু পৌঁছতে রাজি নন ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি নিয়ে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের নানা এলাকা থেকে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে লিখিত ভাবে বেশ কয়েকটি অভিযোগ এসেছে। ফোনেও অনেকে অভিযোগ জানিয়েছেন। দাম নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। এতে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও সমস্যার কোনও সুরাহা হয়নি। আলু ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ট্রাক চালকেরা আলু নিয়ে যেতে চাইছেন না। ট্রাক মালিকদের বক্তব্য, আলু নিয়ে গিয়ে ঝামেলা পোহাতে রাজি নন তাঁরা। রাজ্যের কৃষি বিপণন সচিব সুব্রত বিশ্বাস বলেন, “আমি এমন কিছু জানি না। সত্যি এমন হচ্ছে কি না খোঁজ নিয়ে দেখব।”

Advertisement

আলুর ট্রাক বাইরে পাঠানো নিয়ে কড়াকড়ি হচ্ছে উত্তরবঙ্গেও। খুচরো বাজারে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউই উদ্যোগী হননি বলে অভিযোগও উঠেছে। দাম বেশি দিয়েও সেখানে আলু পাওয়া যাচ্ছে। অথচ সীমান্তের বিভিন্ন বাজারে কার্যত আলুর দেখা মিলছে না। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুর থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূরে দাঁতন থানা এলাকার সোনাকানিয়া এই রাজ্যের শেষ সীমানা। ছয় নম্বর জাতীয় সড়কে আলুর লরি দাঁড়িয়ে থাকলেও এলাকার তিন কিলোমিটার দূরের বাজারে আলু মিলছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। একই অবস্থা আসানসোল মহকুমার ঝাড়খণ্ড লাগোয়া সীমান্তের বাজারগুলিতেও। সেখান থেকেও আলু মিলছে না বলে অভিযোগ। সীতারামপুর এলাকার খুচরো আলু ব্যবসায়ী অনিল রাংতা ফোনে জানিয়েছেন, “আমরা পাইকারি ব্যবসায়ীকে বলেছি যা দাম লাগে তা দিয়ে দেব। তবুও তিনি আলু পাঠাতে চাইছেন না।” তিনি জানিয়েছেন, ৫০ টাকা কেজি দাম দিয়েও আলু মিলছে না। উত্তরবঙ্গের সাহেবগঞ্জ বাজারেও আলুর দেখা মিলছে না।

গত কাল, সোমবার নবান্নে রাজ্য সরকারের দাম নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্সের বৈঠক ছিল। সেখানে ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানো বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নবান্ন সূত্রের খবর, রাজ্যের হিমঘরগুলিতে প্রায় ২৮ লক্ষ টন আলু রয়েছে। রাজ্যে প্রতিমাসে প্রায় ৫ লক্ষ টন আলু লাগে। সেই হিসেবে চাহিদা মেটাতে প্রায় ১৮ লক্ষ টন লাগবে। চাহিদা মিটিয়ে পড়ে থাকা ১০ লক্ষ টনের মধ্যে পাঁচ লক্ষ টন বীজের জন্য রাখা হয়েছে। আলু ব্যবসায়ীদের প্রতি রাজ্য সরকারের প্রস্তাব, বাকি পাঁচ লক্ষ টন ভিন্ রাজ্যে পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হবে। প্রতিদিন ৭০০ টন আলু পাঠানোর প্রাথমিক অনুমতি দেওয়া হবে। ৪০০ টন আলু পাঠানো যাবে ওড়িশা সীমান্ত দিয়ে। ১০০ টন পাঠানো হবে ঝাড়খণ্ড সীমান্তে। বাকি ২০০ টন উত্তরবঙ্গের সীমান্ত দিয়ে ছাড়া হবে। এর জন্য রাজ্যকে ৩০০ টন দিতে হবে। তার মধ্যে ১৪০ টন উত্তরবঙ্গে এবং ১৫০ টন দক্ষিণবঙ্গে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা হবে। সেই আলুই সীমান্তের বাজারে বিক্রি করা হবে বলে আশা ব্যবসায়ীদের।

Advertisement

প্রতিদিন হাজার টন করে আলু ভিন্ রাজ্যে পাঠানো হলে তিন মাসেও সমস্ত আলু হিমঘর থেকে বের করা যাবে কিনা তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে বুধবার বাঁকুড়ার কোতুলপুরে বৈঠক করবেন আলু ব্যবসায়ীরা। সরকারের প্রস্তাব তাঁরা মেনে নেবেন কিনা তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। ১২ সেপ্টেম্বর ফের দাম নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্স বৈঠক করবে। সেখানেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষাই করতে হবে সীমান্তের বাসিন্দাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন