আলিপুরে কড়া হওয়ায় মুরলী-বিদায়ের তোড়জোড়

আদালতের তীব্র ভর্ৎসনার পরে আলিপুর থানার ওসি-কে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হলেও তা থমকে গিয়েছে হঠাৎ। কিন্তু ওই একই ঘটনায় কড়া মনোভাব নেওয়ায় কলকাতা পুলিশের ডিসি (সাউথ)-কে সরানোর জন্য এ বার দরবার শুরু হয়ে গেল লালবাজারে! লালবাজার সূত্রের খবর, ১৪ নভেম্বরের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ওই দিন থানায় হামলাকারীদের চিহ্নিত করার ব্যাপারে কড়া মনোভাব নিয়েছিলেন ডিসি (সাউথ) মুরলীধর শর্মা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫৯
Share:

মুরলীধর শর্মা।

আদালতের তীব্র ভর্ৎসনার পরে আলিপুর থানার ওসি-কে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হলেও তা থমকে গিয়েছে হঠাৎ। কিন্তু ওই একই ঘটনায় কড়া মনোভাব নেওয়ায় কলকাতা পুলিশের ডিসি (সাউথ)-কে সরানোর জন্য এ বার দরবার শুরু হয়ে গেল লালবাজারে!

Advertisement

লালবাজার সূত্রের খবর, ১৪ নভেম্বরের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ওই দিন থানায় হামলাকারীদের চিহ্নিত করার ব্যাপারে কড়া মনোভাব নিয়েছিলেন ডিসি (সাউথ) মুরলীধর শর্মা। মূলত তাঁর চাপেই আলিপুর-কাণ্ডে তদন্তকারী অফিসার বদল হয়েছে। গাফিলতির অভিযোগে তাঁকে ‘সেন্সর’ও করা হয়েছে। ওই অফিসারের বিরুদ্ধে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন এসি (সাউথ)। সেটা দেখেই এই সিদ্ধান্ত নেন মুরলীধর। আলিপুর থানার ওসি-র ডানাও ছাঁটা হয়েছে। ডিসি-র এই সব পদক্ষেপের পরেই আলিপুর কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত প্রতাপ সাহার ঘনিষ্ঠ যোগেশ বোরাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে প্রতাপের ঘনিষ্ঠ মনোজ, বেবি-সহ আরও ১৫ জনকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। কিন্তু এদের গ্রেফতার করা হলে সাংগঠনিক ভাবে দলের ক্ষতি হবে, এই অভিযোগ তুলে ধরপাকড় বন্ধের দাবি উঠছে তৃণমূলের অন্দরেই। লালবাজারের একটি সূত্র জানাচ্ছেন, মুরলীধর শর্মা ডিসি (সাউথ) পদে থাকলে ধরপাকড় আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন আতঙ্কিত স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। শাসক দলের অতি ঘনিষ্ঠ ওসি এবং এসি-দের মাধ্যমে তাই মুরলীকে ওই পদ থেকে সরানোর চেষ্টা শুরু হয়ে গিয়েছে।

আলিপুরের যে অঞ্চলের জমি নিয়ে গোলমালের সূত্রপাত, সেটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। লোকসভা নির্বাচনে ওই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীর থেকে পিছিয়ে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বেশির ভাগ ওয়ার্ডেই পিছিয়ে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। আলিপুর-কাণ্ডের পরে বিজেপি একবার থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। এ সব দেখে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের আশঙ্কা, প্রতাপের অন্য সঙ্গীরা এর পরে গ্রেফতার হলে সংগঠনকে ধরে রাখা কঠিন হবে।

Advertisement

প্রতাপ যে বিধানচন্দ্র রায় কলেনি কমিটির সভাপতি, সেই কলোনিতে বিজেপি নেতাদের আনাগোনা শুরু হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তৃণমূলের দক্ষিণ কলকাতার এক নেতা। তিনি বলেন, “কলোনির বেশ কিছু মানুষ পুলিশের ভয়ে আত্মগোপন করে আছেন। ওই সব পরিবার পুলিশি জুলুমের বিরুদ্ধে ফের থানা ঘেরাওয়ের কথাও ভেবেছিলেন। কিন্তু তাঁদের সাময়িক ভাবে নিরস্ত করা হয়েছে।” এই অবস্থায় যোগেশের পরে আর যাতে কাউকে গ্রেফতার করা না হয়, সেই দাবিও উঠেছে কলোনির মধ্য থেকে।

পুলিশের নিচুতলার একটি অংশ মনে করছেন, মুরলীর অপসারণের দাবির পিছনে সরাসরি পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমের মদত রয়েছে। প্রথমত আলিপুরের ওই এলাকাটি দলীয় ভাবে দেখাশোনা করেন ববি। মূল অভিযুক্তরা সবাই ববির ঘনিষ্ঠ। তার উপরে কলকাতা পুলিশে এসি থেকে ওসি সব বদলিই ইদানীং নিয়ন্ত্রণ করেন ববি। একমাত্র ডিসি এবং তার উপরের স্তরের অফিসারদের বদলির ক্ষেত্রে সরাসরি নবান্ন হস্তক্ষেপ করে। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছেন, লালবাজারের উপরে চাপ দিয়েই নবান্নে মুরলীর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

মুরলীর ঘনিষ্ঠেরা বলছেন, ‘মেরুদণ্ড সোজা রাখার’ মাসুল তাঁকে দিতে হবে জেনেও পুলিশের ভাবমূর্তি রক্ষায় ডিসি (সাউথ) আলিপুর-কাণ্ডে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করতে উদ্যোগী হন। এ ব্যাপারে লালবাজারের কয়েক জন কর্তার সমর্থনও মুরলী পেয়েছেন বলে লালবাজার সূত্রে খবর। ওই সূত্রটি বলেন, পুরো বিষয়টির সঙ্গে পুলিশের ভাবমূর্তি ও শৃঙ্খলার বিষয়টি জড়িত। তাই ববি চাইলেই মুরলীকে সরানো হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে লালবাজারের অনেক কর্তার-ই। তাঁদের এক জনের বক্তব্য, “এই চেষ্টা সফল হলে পুলিশের পক্ষে মাঠে নেমে কাজ করাই মুশকিল হয়ে যাবে। আমাদের কেউ পাত্তাই দেবে না!”

আলিপুর-কাণ্ডে কড়া মনোভাব নেওয়ায় তাঁদের পক্ষ থেকে ডিসি (সাউথ)-কে সরানোর জন্য লালবাজারে চাপ দেওয়া হচ্ছে, এমন অভিযোগ মানতে চাননি পুরমন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতারা। ববির ঘনিষ্ঠ এক তৃণমূল নেতার মন্তব্য, “বিষয়টির সঙ্গে শুধু শুধু ববিদার নাম জড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। কলোনির নিজস্ব ব্যাপার নিয়ে একটা ঘটনা ঘটেছে। তার সঙ্গে মন্ত্রী নিজেকে জড়াতে যাবেন কেন?” আলিপুর-কাণ্ডে কড়া মনোভাব নেওয়ায় ডিসি (সাউথ)-কে সরানোর কোনও প্রক্রিয়া তাঁরা শুরু করেছেন কি না, তা জানার জন্য একাধিক বার ফোন করা হয় ববিকে। তিনি ফোন ধরেননি। প্রতি বারই কেউ ফোন ধরার পরে আনন্দবাজার শুনে মন্তব্য করেন, “স্যার ব্যস্ত আছেন। আপনার বক্তব্য আমি জানিয়ে দেব।” এসএমএস-এরও জবাব দেননি পুরমন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন