দক্ষিণেশ্বর

আশ্বাসই সার, মন্দির রক্ষায় নিধিরামেরা

লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে এক জন। আর এক জন খালি হাতে। মূল প্রবেশদ্বার রক্ষায় ভরসা ওই দু’জনই। আর বাকি যাঁরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন, তাঁদের হাতও কার্যত শূন্যই! এঁরা প্রত্যেকেই বেসরকারি সংস্থার রক্ষী। এঁদের হাতেই প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ ও মন্দিরের নিরাপত্তার ভার থাকে। ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থার এই চিত্র আর্ন্তজাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্র দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৪৬
Share:

লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে এক জন। আর এক জন খালি হাতে। মূল প্রবেশদ্বার রক্ষায় ভরসা ওই দু’জনই। আর বাকি যাঁরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন, তাঁদের হাতও কার্যত শূন্যই!

Advertisement

এঁরা প্রত্যেকেই বেসরকারি সংস্থার রক্ষী। এঁদের হাতেই প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ ও মন্দিরের নিরাপত্তার ভার থাকে। ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থার এই চিত্র আর্ন্তজাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্র দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের।

মন্দির-কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, ২০০৮ সালে মুম্বইয়ে জঙ্গি হামলার পর থেকেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে রাজ্যের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানের পাশাপাশি দক্ষিণেশ্বর মন্দিরেও ‘লাল সঙ্কেত’ জারি রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এর নিরাপত্তায় পুলিশি ব্যবস্থা বলতে মাত্র এক জন এএসআই ও তিন জন হোমগার্ড। আর তাঁদের নিয়েই মন্দিরের প্রবেশপথের বাঁ দিকে প্রায় দু’হাজার বর্গমিটার জায়গায় রয়েছে একটি পুলিশ ফাঁড়ি।

Advertisement

২০১২-র ৮ জানুয়ারি দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে এক অনুষ্ঠানে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কালীমন্দিরের অছি পরিষদের আর্জি মেনে ওই ফাঁড়িটিকে থানায় রূপান্তরিত করার প্রস্তাবে সায় দিয়েছিলেন। কিন্তু আজও তা হয়ে ওঠেনি।

এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “বেশ কয়েক বছরে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবু প্রয়োজনে মন্দিরের নিরাপত্তায় আরও জোর দিতে বলেছি ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনারকে।” ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডেপুটি কমিশনার (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) অজয় ঠাকুর বলেন, “গোটা মন্দির-চত্বরে সিসিটিভি লাগানো আছে। সেখানে নজরদারি চলছে। এ ছাড়া, সব সময়ে সাদা পোশাকের পুলিশ থাকে সেখানে। অনুষ্ঠানের সময়ে বাড়ানো হয় পুলিশি পাহারা।”

সম্প্রতি দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির দেবত্র এস্টেটের অছি ও সম্পাদক কুশল চৌধুরী কেন্দ্রীয় সরকারের কাছেও মন্দিরের নিরাপত্তা জোরদার করতে আর্জি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “কয়েক দিন আগে বিজেপি-র সভাপতি অমিত শাহ মন্দিরে এলে তাঁর কাছে নিরাপত্তার আবেদন জানাই। উনি বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। এ ছাড়া, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে একটি চিঠি পাঠানোর কথাও ভাবা হচ্ছে।” তাঁর আক্ষেপ, “প্রায় ৫২ বিঘা এলাকার ওই মন্দির চত্বর অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। পর্যাপ্ত পুলিশ না থাকায় নিজেরাই ৫০ জন বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করে কাজ চালাচ্ছি।”

কেমন অবস্থা নিরাপত্তার?

দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের মূল প্রবেশদ্বার ‘সিংহদুয়ার’-এ মোতায়েন রয়েছেন দু’জন রক্ষী। তাঁদের সামনে দিয়েই রোজ হাজারে হাজারে পুণ্যার্থী প্রবেশ করেন। কিন্তু তাঁদের কোনও নিরাপত্তার বেড়াজাল টপকাতে হয় না। গাড়িগুলি ঠিক পার্কিং লটে ঢুকছে কি না তা নজর রাখাই শুধু রক্ষীদের দায়িত্ব। মন্দির চত্বরে পাঁচটি পার্কিংয়ের জায়গা রয়েছে। সব ক’টিরই ভরসা বলতে ওই নিরস্ত্র বেসরকারি রক্ষীরা।

এক নিরাপত্তারক্ষী জানান, প্রতিদিন গড়ে কয়েক হাজার গাড়ি পার্ক করা হয়। উৎসবের মরসুমে তা বাড়ে। মাঝেমধ্যে হ্যান্ডহেল্ড মেটাল ডিটেক্টর, টর্চ ও আন্ডারসার্চ ভেহিক্ল মিরর দিয়ে গাড়িগুলি পরীক্ষা করে ছাড়েন রক্ষীরা। ডিকিও খুলে দেখা হয় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রক্ষী বলেন, “কোনও গাড়িতে বেআইনি কিছু থাকলে তা আটকানোর মতো ক্ষমতা আমাদের নেই। গুলি চালিয়ে গাড়ি নিয়ে কেউ ভিতরে ঢুকলেও আটকাতে পারব না।”

মেটাল ডিটেক্টর বসানো রয়েছে শুধু মূল মন্দিরে ঢোকার চারটি দরজায়। প্রতিটির সামনে হ্যান্ডহেল্ড মেটাল ডিটেক্টর নিয়ে থাকেন মন্দিরের নিজস্ব পুরুষ ও মহিলা রক্ষী। কিন্তু মূল মন্দির ছাড়া এই ব্যবস্থা গোটা মন্দির চত্বরের কোথাও নেই। পঞ্চবটী উদ্যান, ডালা আর্কেড-সহ তিনটি ঘাট, ফেরিঘাট সবই রয়েছে অরক্ষিত। কুশলবাবু বলেন, “আমাদের নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে উন্নত মানের অস্ত্র নেই। পুলিশও এখানে শুধুই লাঠিধারী। কোনও দিন জঙ্গি আক্রমণ হলে তার মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত নয় দক্ষিণেশ্বর মন্দির।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন