আসানসোলকে আর্জি, ‘কহো না প্যার হ্যায়’

লোখন্ডওয়ালার অ্যাপার্টমেন্টে মাস আড়াই আগে আনন্দবাজার-টা যখন হাতে আসে, তখন প্রথমেই তাঁর মনে হয়েছিল আরে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী হলে তো দারুণ হয়! সৌরভ বিজেপি-র প্রস্তাবে না করায় খুব হতাশ হয়েছিলেন। তখনও ঘুণাক্ষরে জানতেন না যে, তাঁর নিজের ভাগ্যাকাশেই লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-র হয়ে দাঁড়ানো নাচছে!

Advertisement

গৌতম ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৪ ০২:৫৪
Share:

কলকাতার এক হোটেলে বাবুল সুপ্রিয়। শনিবার দেশকল্যাণ চৌধুরীর তোলা ছবি।

লোখন্ডওয়ালার অ্যাপার্টমেন্টে মাস আড়াই আগে আনন্দবাজার-টা যখন হাতে আসে, তখন প্রথমেই তাঁর মনে হয়েছিল আরে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী হলে তো দারুণ হয়! সৌরভ বিজেপি-র প্রস্তাবে না করায় খুব হতাশ হয়েছিলেন। তখনও ঘুণাক্ষরে জানতেন না যে, তাঁর নিজের ভাগ্যাকাশেই লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-র হয়ে দাঁড়ানো নাচছে!

Advertisement

মাত্র দশ দিনে নাটকীয় পট পরিবর্তন, আর দশ দিনেই কি না সিদ্ধান্ত। বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এ দিন দুপুরে বাবুল সুপ্রিয় আসানসোল থেকে দাঁড়াচ্ছেন জানানোর ক’মিনিটের মধ্যে গায়ক একটা ফোন পান। উল্টো দিকে তাঁর স্কুলের বন্ধু। যাঁর একমাত্র প্রশ্ন, “কী রে তুইও পাগল হয়ে গেলি?”

শনিবার সন্ধেয় কলকাতায় নিজের হোটেলের ঘরে বসে বাবুল বলছিলেন, “সবাই ভাবছে কোনও ট্রেনিং ছাড়া, কোনও প্রস্তুতি ছাড়া এ ভাবে ভোটে দাঁড়িয়ে পড়ছি। সত্যিই বোধহয় মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কেউ বুঝছে না, কুড়ি বছরেরও আগে মুম্বইয়ে যখন স্ট্রাগলার হয়ে গিয়েছিলাম, তখনও গানের জগতের কিছুই জানতাম না। আস্তে আস্তে শিখেছি। এখানেও না হয় স্ট্রাগলার হয়ে শুরু করে রাজনীতিবিদ হওয়ার চেষ্টা করব।”

Advertisement

রাজ্যের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বিশ্বাসে আসানসোল তুলনামূলক ভাবে বিজেপি-র পক্ষে ভাল। অবাঙালি ভোটারের সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু সেই ভালটাও এমন তৃণমূলী হাওয়ার মধ্যে কত ভাল, তা নিয়ে অনেকের সন্দেহ আছে। আসানসোল থেকে শেষ বারের লোকসভায় জেতেন সিপিএমের বংশগোপাল চৌধুরী। এ বার সেখানে তৃণমূল প্রতিদ্বন্দ্বী দোলা সেন। অর্থাৎ দুইয়ের মধ্যিখানে পড়ে যে চ্যালেঞ্জ, তা সিডি গোল্ড ডিস্ক করার চেয়ে অনেক কঠিন লড়াই।

বাবুল অবশ্য মনে করেন, তিনি জিতবেন। বলছিলেন, “আসানসোল আমার খুব পরিচিত এলাকা। যখন গাইতে যাই তখন কুড়ি হাজার লোক থাকে। সংগঠকরা বলে বাবুল সুপ্রিয় নাইট। নরেন্দ্র মোদীজি-কে অনুরোধ করব, উনি যদি আমার জনসভায় আসেন তা হলে সেই সংখ্যাটা আট লাখেও দাঁড়াতে পারে। তখন ওটা হবে নরেন্দ্র মোদী নাইট। আমি হব তার একটা ছোট অংশ।” বাবুলের ধারণা গায়ক হিসেবে আসানসোল তাঁকে দু’হাত ভরে দিয়েছে। এ বার নাকি তাঁর ফিরিয়ে দেওয়ার সময়। মনে করেন, রাজনীতিবিদ হিসেবে তাঁর কোনও বিশ্বাসযোগ্যতাই তৈরি হয়নি। তাই রাজনাথ সিংহ, অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ জাতীয় বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যদি তাঁর সমর্থনে এখানে আসেন, যথেষ্ট উপকৃত হবেন। মানুষের মনে তাঁর সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হবে। নিজের ধারণা, লোখন্ডওয়ালা আর আসানসোল ভৌগোলিক দূরত্বে যতই দূরবর্তী হোক, তাঁর পক্ষে ম্যানেজ করা সমস্যা হবে না। বলেন, “টেকনোলজির যুগে এখন ফেসবুকে বিয়ে হচ্ছে। দূরত্বটা ফ্যাক্টরই নয়।” আপাতত বসছেন প্রচারের ধরনধারণ নির্ধারণে। মুম্বই ফিরে যাওয়ার কথা ছিল রবিবার। সেটা বাতিল করে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে বসবেন।

আর সম্ভাব্য প্রচারের অভিনবত্ব বলতে গেলে আসানসোলের মানুষের কাছে তাঁর আবেদন হবে, কহো না প্যার হ্যায়। অভিজ্ঞতায় দেখেছেন আসানসোলে গানের অনুষ্ঠানে বাংলা গান গাইবার ফরমায়েশ কম আসে। বেশি গাইতে হয় হিন্দি। প্রচারে দর্শককে এ বার আর্জি জানাবেন, কেরিয়ারের শুরুতেই নাম করেছিলাম ‘কহো না প্যার হ্যায়’ ছবিটা দিয়ে। লোকসভায় আবির্ভাবেও আমাকে অঢেল ভালবাসা দিন।

বাংলার শীর্ষস্থানীয় শিল্পীরা যখন দলে-দলে মমতাশ্রিত, তখন তিনি ভিন্নমুখী হয়ে বিজেপি-র দিকে কেন? বাবুল বলেন, “শিল্পী হিসেবে মমতাদি আমাকে যথেষ্ট সম্মান দিয়েছেন। উনি আমার রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনেন। আশা করব সে ভালবাসাটা থাকবে। ওটা আমার শিল্পী সত্ত্বা। কিন্তু রাজনৈতিক সত্ত্বায় আমি অনেক বেশি বিজেপি-র আদর্শে অনুপ্রাণিত। বাজপেয়ীজি আর মোদীজি-র রীতিমতো অনুরক্ত।”

বিজেপি-তে যোগ দেওয়া বাপি লাহিড়ী কি তাঁর সিদ্ধান্তের পিছনে? বাবুল অস্বীকার করেন, “বাপিদার সঙ্গে এখনও কথাই হয়নি। আমাকে মোটিভেট করেছেন দিল্লি এবং কলকাতার কিছু বিশিষ্ট মানুষ। যাঁদের নাম এখন বলছি না।”

বারাসতের বিজেপি প্রার্থী পি সি সরকার বলেছেন, “রাজ্যে মমতা, কেন্দ্রে মোদী।” বাবুল একমত নন। বরং মনে করেন, কেন্দ্রে-রাজ্যে ভিন্ন সরকার হলে পশ্চিমবঙ্গের উন্নতি হতে পারে না।

আপাতত টানা অভিনন্দন এবং বিস্ময়সূচক ফোন যুগপৎ ধরার মধ্যে বলতে থাকেন, “অবাক লাগছে। মাত্র দশ দিনে গোটা ব্যাপারটা ঠিক হয়ে গেল। এখন কী রকম মনে হচ্ছে যেন চাঁদের পাহাড়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। এ বার পাহাড়ে চড়াটা শিখতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন