রুদ্রনীলের পরে ইন্দ্রনীল।
বৃত্তিমূলক শিক্ষা সংসদের সভাপতি-পদে অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের বাছাই নিয়ে বিতর্কের রেশ কাটেনি। সেই আবহেই এ বার সাউথ পয়েন্ট হাইস্কুলের পরিচালন সমিতিতে রাজ্য সরকারের সদস্য হিসেবে মনোনীত হলেন গায়ক ইন্দ্রনীল সেন। সম্প্রতি তাঁকে বঙ্গভূষণ সম্মানে সম্মানিত করেছে রাজ্য সরকার। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুরে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন ইন্দ্রনীল।
সাউথ পয়েন্ট স্কুল সূত্রের খবর, বেশ কিছু দিন ধরেই পরিচালন সমিতিতে সরকার মনোনীত সদস্যের পদটি খালি ছিল। তার আগে সেখানে ছিলেন এক সরকারি আধিকারিক। মে মাসের শেষে সরকারের তরফে চিঠি পাঠিয়ে ওই পদে ইন্দ্রনীলকে মনোনীত করার কথা জানানো হয়েছে। রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, এই পদে সাধারণত সরকারি আধিকারিকদেরই মনোনীত করা হয়।
সরকারি নির্দেশিকা জারি করে রুদ্রনীলকে বৃত্তিমূলক শিক্ষা সংসদের সভাপতি করা হয়েছে গত সোমবার। একটি শিক্ষা সংসদের মাথায় এক জন অভিনেতা কেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে। রুদ্রনীল নিজে অবশ্য তাঁর নতুন দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করার ব্যাপারে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। যাঁরা তাঁর এই নিয়োগের বিরোধিতা করছেন, ইতিমধ্যে তাঁদের দেশদ্রোহী বলেও কটাক্ষ করেছেন প্রাক্তন এসএফআই নেতা এবং ইদানীং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ ওই অভিনেতা।
ইন্দ্রনীলের অবশ্য নতুন দায়িত্ব সম্বন্ধে খুব একটা স্পষ্ট ধারণা নেই। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “স্কুল-কর্তৃপক্ষ আমার কাছে ঠিক কী ধরনের পরামর্শ চাইছেন, সেটা পরিচালন সমিতির বৈঠকে গেলে ভাল ভাবে বুঝতে পারব।” তাঁর ধারণা, সম্ভবত সাউথ পয়েন্টের পক্ষ থেকেই সংস্কৃতি জগতের কাউকে পরিচালন সমিতির সদস্য হিসেবে পাঠানোর জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল সরকারের কাছে। সেই সূত্রেই ইন্দ্রনীলের মনে হয়েছে, তাঁর কাছে স্কুল-কর্তৃপক্ষ সংস্কৃতি বিষয়ে পরামর্শ চাইবেন। শিক্ষা সংক্রান্ত পরামর্শ নয়। তিনি জানান, শিক্ষাজগতের সঙ্গে যুক্ত নন, এমন সদস্য পরিচালন সমিতিতে আরও আছেন। সেই সঙ্গেই ইন্দ্রনীলের মন্তব্য, “এই পদের জন্য কিন্তু টাকাকড়ি বা গাড়িতে লাল বাতি লাগানোর মতো কোনও সুবিধা পাওয়া যায় না।” সংস্কৃতি জগতের কাউকেই সদস্য হিসেবে চাওয়া হয়েছিল কি না, সেই ব্যাপারে এ দিন অবশ্য কিছু বলতে চাননি সাউথ পয়েন্ট কর্তৃপক্ষ।
রুদ্রনীল বা ইন্দ্রনীল ব্যতিক্রম নন। এর আগেও এক ক্ষেত্রের মানুষকে অন্য ধরনের প্রতিষ্ঠানে মনোনয়ন দিয়েছে রাজ্য সরকার। যেমন, আইন বিশ্ববিদ্যালয়ে সদস্য হয়েছেন শিল্পী শুভাপ্রসন্ন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন একটি আর্ট কলেজে সদস্য হয়েছেন নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষ। বারে বারেই এই ধরনের মনোনয়ন নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। কিন্তু তৃণমূল সরকার যে তাদের ঘনিষ্ঠদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সদস্য হিসেবে মনোনীত করার নীতি থেকে সরবে না, সম্প্রতি রুদ্রনীল এবং ইন্দ্রনীলের বাছাইয়ের ঘটনায় তা ফের প্রমাণিত হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
ইন্দ্রনীলের মনোনয়নের মধ্যে অবশ্য বিতর্কের কিছু খুঁজে পাচ্ছেন না শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বিষয়টা আমি ঠিক জানি না। তাই বিস্তারিত ভাবে বলতে পারব না।” তবে তাঁর যুক্তি, স্কুলের পরিচালন সমিতিতে অভিভাবকদের প্রতিনিধিরাও তো থাকেন। এবং সে-ক্ষেত্রে তাঁদের যোগ্যতা দেখা হয় না। শিক্ষামন্ত্রীর কথায়, “ওই স্কুলে তো গানবাজনার উপরে যথেষ্ট গুরুত্বও দেওয়া হয়।”