ওই বুদ্ধি ধার নেবে কে, বর্তমানকে তির প্রাক্তনের

লোকসভা ভোটের প্রচার-যুদ্ধে নেমে প্রথম দিনেই শাসক পক্ষের সর্বোচ্চ নেত্রীকে নিশানা করলেন বিরোধী শিবিরের প্রধান সেনাপতি! তীব্র কটাক্ষে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কংগ্রেসকে পরাস্ত করে এবং বিজেপি-কে ঠেকিয়ে তাঁরা যে এ বার কেন্দ্রে বিকল্প সরকার গড়তে বদ্ধপরিকর, তৃণমূল নেত্রীর সুরেই শুক্রবারের প্রচার-মঞ্চ থেকে বলেছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধবাবু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৪ ০৩:৫৯
Share:

কোমর বেঁধে। হাওড়ার ডুমুরজলার জনসভায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শুক্রবার দীপঙ্কর মজুমদারের তোলা ছবি।

লোকসভা ভোটের প্রচার-যুদ্ধে নেমে প্রথম দিনেই শাসক পক্ষের সর্বোচ্চ নেত্রীকে নিশানা করলেন বিরোধী শিবিরের প্রধান সেনাপতি! তীব্র কটাক্ষে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

Advertisement

কংগ্রেসকে পরাস্ত করে এবং বিজেপি-কে ঠেকিয়ে তাঁরা যে এ বার কেন্দ্রে বিকল্প সরকার গড়তে বদ্ধপরিকর, তৃণমূল নেত্রীর সুরেই শুক্রবারের প্রচার-মঞ্চ থেকে বলেছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বুদ্ধবাবু। কিন্তু রাজ্য রাজনীতির প্রশ্নে এসেই যথেচ্ছ খরচ এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বর্তমানকে আক্রমণ করেছেন প্রাক্তন। নানা অনুষ্ঠান এবং টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ইদানীং প্রায়ই বলেন, বিপুল ঋণের সুদ মিটিয়েও রাজ্যের উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে চলেছে তাঁর সরকার। কী করে এই কাজ সম্ভব হচ্ছে, সেই বুদ্ধি কাউকে ধার দেবেন না বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার কথায়, “কী করে আমরা করছি, কাউকে বুদ্ধি ধার দেব না! আমি বলি ঘরের বৌ, বই আর বুদ্ধি কাউকে ধার দিতে নেই!” উৎসব আর বিজ্ঞাপনে ঢালাও টাকা খরচের প্রশ্ন তুলে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ওই ‘বুদ্ধি ধার না’-তত্ত্বকেই কটাক্ষ করেছেন তাঁর পূর্বসূরি। বুদ্ধবাবু বলেছেন, “আবার বলে, বুদ্ধি ধার দেব না! ওই বুদ্ধি ধার নেবে কে? কেউ নেবে না! কুবুদ্ধি!”

হাওড়ার ডুমুরজলা ময়দান থেকেই এ দিন তাঁর এ বারের লোকসভা প্রচারের সূচনা করেছেন বুদ্ধবাবু। আজ, শনিবার তাঁর যাওয়ার কথা নদিয়ার রানাঘাটে। রাজ্য বামফ্রন্টের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে প্রচারের আনুষ্ঠানিক সূত্রপাত অবশ্য বৃহস্পতিবারই ঘটিয়েছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তবে ডুমুরজলায় এ দিনের সমাবেশে বামেদের আশানুরূপ ভিড় হয়নি। বক্তৃতার সময়ে দৃশ্যতই অসুস্থ বুদ্ধবাবুকেও কয়েক বার থমকাতে হয়েছে। তার মধ্যেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, এক দিকে কেন্দ্রে বিকল্প নীতিভিত্তিক সরকার গড়ার আহ্বান এবং অন্য দিকে রাজ্যে তৃণমূলের যথেচ্ছাচারকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার বার্তা, এই জোড়া লক্ষ্যকেই এ বার ভোটারদের সামনে পেশ করতে চাইছেন তাঁরা।

Advertisement

নবান্নের কয়েক কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করেই এ দিন বুদ্ধবাবু বলেছেন, “যে কোনও বিষয়ে মিথ্যা। রোজ রোজ মিথ্যা! আর এক দিকে টাকার দম্ভ! এই নিয়ে সরকারটা চলছে।” সাম্প্রতিক কালে ঘোড়া কেনাবেচার যে অভিযোগ শাসক দলের বিরুদ্ধে করে আসছে বামেরা, বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার রমরমার সঙ্গে সেই ঘটনাকে এক সূত্রে বেঁধেও দিয়েছেন বুদ্ধবাবু। কটাক্ষের সুরে বলেছেন, “আমার আছে চিট ফান্ডের টাকা। টাকা দিয়ে পঞ্চায়েত সদস্য, কাউন্সিলর, বিধায়ক কিনব! দুর্ভাগ্য, আমাদের দেশে কিছু লোক গরু-ছাগলের মতো বিক্রিও হয়ে যায়! টাকা দিয়ে দেব এঁদের। নির্যাতিত, অত্যাচারিত কেউ হলে তার বাবা-মাকেও টাকা দিয়ে কিনে নেব!” এরই সঙ্গে বুদ্ধবাবুর আহ্বান, “বাংলার মানুষই ঠিক করবেন, এ ভাবে কত দিন চলবে!”

বুদ্ধবাবুর মঞ্চে ছিলেন হাওড়া, উলুবেড়িয়া ও শ্রীরামপুর কেন্দ্রের তিন বাম প্রার্থী শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, সাবিরউদ্দিন মোল্লা এবং তীর্থঙ্কর রায়। শ্রীদীপবাবু বলেছেন, “৩৪ মাস আগে যাঁরা তৃণমূলকে সমর্থন করেছেন, তাঁদের অনেকেই ১০-১২ বছর আগে বামফ্রন্টের সমর্থক ছিলেন। কিন্তু ৩৪ মাসে তাঁরাও বুঝতে পারছেন, দামাল ছেলেদের দুষ্টুমি বলে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে সার্টিফিকেট দিচ্ছেন, তাঁতে তাঁরাও আর নিরাপদ নন!

মানুষের উপরে আস্থা আমাদের রাখতেই হবে।” আর বুদ্ধবাবু বুঝিয়ে দিয়েছেন, দিল্লির দরবারের জন্য তাঁদের লক্ষ্য কী। তাঁর বক্তব্য, কংগ্রেসকে হারাতে হবে। সেটা বড় কাজ। বিজেপি-কে ঠেকাতে হবে। সেটাও কঠিন কাজ। একটা বাদ দিয়ে আর একটা হবে না। বুদ্ধবাবুর কথায়, “কংগ্রেসকে হারাতে গিয়ে বিজেপি চলে এলে বিপদ হবে! আবার বিজেপি-কে ঠেকাতে গিয়ে কংগ্রেস এসে গেলে যেমন চলছিল সব, তেমনই চলবে! এই সরকার থাকলে আমাদের ব্যাঙ্ক, পেনশন, এলআইসি থাকবে না। তাই বিকল্প নীতির সরকার আনতেই হবে।”

সভা শেষে এ দিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চের সামনে ‘মহান নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য জিন্দাবাদ’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন এক দল সমর্থক। “নেতা হতে পারি, মহান নেতা বলবেন না” তাঁদের সতর্ক করে দিয়ে ময়দান ছেড়েছেন বাম শিবিরের সেনাপতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন