চেকপোস্ট হবে ডানকুনিতে

ওভারলোডিং রুখতে নয়া নির্দেশিকা রাজ্যের

লরি বা ট্রাকে অতিরিক্ত পণ্য (ওভারলোডিং) পরিবহণ রুখতে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার। সম্প্রতি বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো নির্দেশে সরকার জানিয়েছে, রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে নজরদারি চালাতে হবে। মালবাহী ট্রাক দাঁড় করিয়ে অতিরিক্ত মাল নামিয়ে ফেলতে হবে। জরিমানা করতে হবে চালককে।

Advertisement

প্রকাশ পাল

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:১০
Share:

লরি বা ট্রাকে অতিরিক্ত পণ্য (ওভারলোডিং) পরিবহণ রুখতে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার। সম্প্রতি বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো নির্দেশে সরকার জানিয়েছে, রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে নজরদারি চালাতে হবে। মালবাহী ট্রাক দাঁড় করিয়ে অতিরিক্ত মাল নামিয়ে ফেলতে হবে। জরিমানা করতে হবে চালককে। জেলার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার একটি জায়গায় চেকপোস্টও তৈরি করতে হবে। কিন্তু সরকারের নির্দেশ মতো কাজ কতটা হবে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ট্রাক-মালিকেরা। তাঁরা বলছেন, শুধু কাগজ-কলমে বা মৌখিক আশ্বাসে নয়, প্রকৃত পক্ষেই রাস্তায় নেমে ওভারলোডিং বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

Advertisement

হুগলি জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের দাবি, ওভারলোডিং রুখতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ট্রাক থেকে অতিরিক্ত মাল নামিয়ে অন্য গাড়িতে তা তুলে নিয়ে যেতে বলা হচ্ছে ট্রাকের মালিককে। জরিমানাও করা হচ্ছে। তবেই, গাড়ি ছাড়া হচ্ছে। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে, দিল্লি রোড, এসটিকেকে রোড সর্বত্রই নজরদারি চলছে। দফতরের অধিকর্তা (আরটিও) সৈকত দাস বলেন, “ডানকু‌নিতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপর একটি চেকপোস্ট তৈরি করা হবে। সেখানে পরিবহণ দফতরের ইনস্পেক্টররা থাকবেন। পুলিশও থাকবে। পাশেই থাকবে ওয়েব্রিজ। সেখানে গাড়ি ওজন করে অতিরিক্ত মাল নামিয়ে ফেলা সহজ হবে।”

রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, এ রাজ্যে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় আড়াই লক্ষ ট্রাক রয়েছে। ভিন্‌ রাজ্য বা আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়েও প্রচুর পণ্যবাহী ট্রাক পশ্চিমবঙ্গে ঢোকে। কিন্তু প্রায় সব ট্রাকেই বহন ক্ষমতার অতিরিক্ত পণ্য তোলা হয় বলে অভিযোগ। ফলে, দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ে। রাস্তা খারাপ হয়। গাড়ির ক্ষতি হয়। দূষণও বাড়ে।

Advertisement

ওভারলোডিং বন্ধ না হওয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসনের একাংশকেই দায়ী করেছেন ট্রাক-মালিকেরা। তাঁদের অভিযোগ, যেখান থেকে মালপত্র ট্রাকে তোলা হয় (লোডিং পয়েন্ট) এবং যেখানে নামানো হয় (আনলোডিং পয়েন্ট), সেখানে নজরদারি করলেই সমস্যা মিটে যায়। কিন্তু তা না করে পুলিশ রাস্তায় ট্রাক থামিয়ে চালকদের হয়রান করে। তাঁদের থেকে টাকা আদায় করা হয়। সেই টাকার বড় অংশই সরকারি কোষাগারে জমা পড়ে না। দাবিমতো টাকা না দিলে মিথ্যা মামলাও করা হয়। একে পরিবহণ শিল্প রুগ্‌ণ, তার উপরে ওভারলোডিংয়ের মামলায় ফেঁসে বহু ট্রাক বসিয়ে রাখতে হয়। এ সব নিয়ে বহু দিন ধরে আন্দোলন করেও কোনও কাজ হয়নি।

বৈদ্যবাটির এক ট্রাক-মালিকের ক্ষোভ, “প্রশাসনের এক শ্রেণির অফিসাররাই চান না ওভারলোডিং বন্ধ হোক। তাতে তাঁদের তকাঁচা টাকায় টান পড়তে পারে।” ট্রাক-চা‌লকদের একাংশ জানিয়েছেন, ওভারলোডিংয়ে ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য বিভিন্ন থানায় তাঁদের মাসিক কার্ড রয়েছে। দেবদেবীর ছবি বা অন্য কোনও চিহ্ন ছাপানো সেই কার্ড থাকে নির্দিষ্ট কিছু চায়ের দোকান, পানের দোকান বা হোটেলে। তার মাধ্যমে টাকা আদায় হয়। ‘ডাকবাবু’ মারফত সেই টাকা দফতরের ‘বড় কর্তা’দের কাছেও পৌঁছে যায়।

ওভারলোডিং বন্ধের জন্য গত শনিবারই সিঙ্গুরে বৈঠক করেছিল হুগলি জেলা ট্রাক-মালিক সংগঠন ‘ইউনাইটেড ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’। নয়া নির্দেশ কার্যকর করা এবং অন্যান্য দাবিতে আগামী ২৬ নভেম্বর চুঁচুড়ার ঘড়ির মোড়ে জমায়েত করে জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে ওই সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে। ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এর আগে মন্ত্রী আশ্বাস দিলেও ওভার‌লোডিং বন্ধ হয়নি। এ বার তা যেন হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন