কংগ্রেসের গড়েও বিজেপিকেই নিশানা মমতার

কংগ্রেসের গড় মুর্শিদাবাদে দাঁড়িয়েও বিজেপিকেই নিশানা করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইটাহার, মালদহের পর লালবাগেও দলীয় কর্মী-সমর্থকদের কাছে তাঁর স্পষ্ট বার্তা, এ বার নির্বাচনে বিজেপিকে এত টুকুও জমি ছাড়া চলবে না। এ দিনের সভায় মুর্শিদাবাদের তিনটি লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীরাই উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৪ ০৩:৪৩
Share:

লালবাগে দলের কর্মিসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।

কংগ্রেসের গড় মুর্শিদাবাদে দাঁড়িয়েও বিজেপিকেই নিশানা করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইটাহার, মালদহের পর লালবাগেও দলীয় কর্মী-সমর্থকদের কাছে তাঁর স্পষ্ট বার্তা, এ বার নির্বাচনে বিজেপিকে এত টুকুও জমি ছাড়া চলবে না। এ দিনের সভায় মুর্শিদাবাদের তিনটি লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীরাই উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement

মঙ্গলবার পৈলানে প্রাক্-নির্বাচনী প্রথম কর্মিসভায় মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে ছিলেন, সিপিএম, কংগ্রেসের পাশাপাশি বিজেপিকেও অন্যতম প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখছেন তিনি। বুধবার উত্তরবঙ্গের দুই সভাতেও কর্মী-সমর্থকদের কাছে তাঁর বক্তব্য ছিল, তৃণমূলের ভোট কেটে কংগ্রেস-সিপিএমকে জেতানোর চেষ্টা করছে কেউ কেউ। বৃহস্পতিবার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ জেলার লালবাগ আস্তাবল ময়দানে দলীয় কর্মীদের সভায় তিনি আরও স্পষ্ট করে বললেন, “আমি বিজেপি-র বিপক্ষে। বিজেপিকে একটাও ভোট নয়। ওরা সাম্প্রদায়িক দল।”

মমতার মুখে উঠেছে গোর্খাল্যান্ডের প্রসঙ্গও। মমতার অভিযোগ, বিজেপি বাংলাকে ভাগ করতে চাইছে। তিনি বলেন, “ওরা ভাগাভাগির খেলায় মেতেছে। দেশ ভাগ করতে চায়। আমাদের বাংলাকেও ভাগ করতে চাইছে। কোনও দিন বলবে ফরাক্কা বেচে দাও! কোনও দিন বলবে ভাগীরথী বেচে দাও! কোনও দিন ওরা দার্জিলিং বেচে দাও বলবে!”

Advertisement

লালবাগে তৃণমূলনেত্রী। বৃহস্পতিবার লালবাগের আস্তাবল ময়দানে ছিল
জেলা তৃণমূলের কর্মিসভা। তপ্ত বিকেলের ওই সভায় তৃণমূল নেত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য আলাদা করেরাখা হয়েছিল ফ্যান। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

মুর্শিদাবাদের তিনটি লোকসভা কেন্দ্র মুর্শিদবাদ, জঙ্গিপুর ও বহরমপুর এখন কংগ্রেসের দখলে। তার পরেও এ দিনের সভায় মমতা যে ভাবে বারবার বিজেপিকে নিশানা করেছেন, তাতে তাঁকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। তাঁর কথায়, “বিজেপি-আতঙ্কে ভুগছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! তাই তৃণমূল এখন বিজেপিকে আক্রমণ করছে।” তাঁর দাবি, তিনটি কারণে এই আক্রমণ। প্রথমত, তিন বছরে রাজ্য সরকার কাজের কাজ কিছু করেনি। সেই ফাঁকি এ বার ধরা পড়বে। দ্বিতীয়ত, সুষ্ঠু ভাবে ভোট হলে তৃণমূল একতরফা ভোট পাবে না মোটেই। আর তিন, দেশ জুড়ে যে নরেন্দ্র মোদী-হাওয়া চলছে, পশ্চিমবঙ্গ যে তার বাইরে নয়, তা-ও স্পষ্ট হয়ে যাবে।

একতরফা ভোট যে এ বার হবে না, সেটা অবশ্য সাম্প্রতিক জনমত সমীক্ষাতেও উঠে এসেছে। ২০০৯-এ লোকসভায় এই রাজ্য থেকে বিজেপি জিতেছিল শুধু মাত্র দার্জিলিং আসনে। কিন্তু এ বার বাকি আসনগুলিতে চতুর্মুখী লড়াইয়ে বিজেপি ভালই ভোট কাটবে, বলছে সমীক্ষাগুলি। যে হেতু রাজ্যে তৃণমূলের ভোটের পরিমাণই সব চেয়ে বেশি, তাই ভোট হারানোর ভয়ও বেশি তাদের। সেই আশঙ্কা থেকেই সম্ভবত এ দিন সভায় মমতা বলেন, “ভোটের মুখে গট-আপ ম্যাচ চলছে। সিপিএম ও কংগ্রেসের মধ্যে গট-আপ খেলা চলছে। মাঝখান থেকে অর্থের বিনিময়ে বিজেপি-র প্রার্থী দাঁড় করানো হয়। এই গট-আপ ম্যাচ আর চলবে না। গট-আপ বন্ধ হোক।”

এ দিনের সভায় নরেন্দ্র মোদীর নাম না করলেও গুজরাত এবং দাঙ্গার প্রসঙ্গ টেনে আনেন মমতা। তাঁর কথায়, “গুজরাতে ব্যবসা-ই ‘টোট্যাল বিজনেস।’ সেখানে জনসংখ্যা কম। আমাদের রাজ্যের সঙ্গে কোনও ভাবে গুজরাতের তুলনা করা যাবে না। তা-ও ভোটের মুখে গুজরাতের হয়ে দালালি করছে একশ্রেণি। গুজরাতে গড় শিশুমৃত্যুর হার যেখানে ৪২, সেখানে আমাদের ৩১ জন। গুজরাতে দাঙ্গা হয়। আমাদের রাজ্যে দাঙ্গা হয় না।” এর আগে বিজেপি-র সঙ্গে হাত মেলানোর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মমতা বলেন, “আমি অটলবিহারী বাজপেয়ীর জন্য এনডিএ সরকারে ছিলাম। কারণ আমি জানতাম তিনি সংখ্যালঘুদের কোনও ক্ষতি করবেন না। তাই এনডিএ-কে বাইরে থেকে সমর্থন করেছিলাম।” সংখ্যালঘুদের জন্য তিনি গত আড়াই বছরে যা করেছেন, তা আর কেউ করেনি বলেও দাবি করেন মমতা।

মমতা অবশ্য কংগ্রেসকেও ছেড়ে কথা বলেননি। অধীরের নাম না-করে বলেন, “চমক-ধমকের রাজনীতি চলবে না। আপনারা গান শুনবেন, নাকি GUN (বন্দুক) শুনবেন?” গত লোকসভা ভোটে জোট-প্রসঙ্গে বলেন, কংগ্রেস গোঁজ প্রার্থী দিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। এ নিয়ে কংগ্রেসকে মিরজাফরের সঙ্গে তুলনাও করেন। জবাবে অধীর বলেন, “মিরজাফর নয়, কংগ্রেস বরং মির মদন, মোহনলাল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন