বিধানসভায় মুখোমুখি পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মানস ভুঁইয়া। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
গত সপ্তাহে বার্তা ছিল বামেদের প্রতি। এক সপ্তাহ পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার্তা দিলেন কংগ্রেসকে। লক্ষ্য একই। রাজ্যে বিজেপি-কে প্রতিহত করা!
রাজ্যে ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের ঘটনা নিয়ে অভিযোগ জানাতে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিমান বসুর নেতৃত্বে বামফ্রন্টের প্রতিনিধিদল গিয়েছিল গত সোমবার। সে দিন মুখ্যমন্ত্রী বাম নেতাদের নিজেদের ঘর সামলাতে বলেছিলেন। বাম শিবির ছেড়ে লোকে কেন বিজেপি-তে যাচ্ছে, সে দিকে বিমানবাবুদের নজর দিতে বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আর এই সোমবার সেই একই বার্তা কংগ্রেসকে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিধানসভায় এ দিন ভদ্রেশ্বর ও রায়দিঘির ঘটনা নিয়ে বিবৃতি দিতে গিয়ে কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীর উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “বামেরা বিজেপি-র দিকে যেতে পারে। কিন্তু আপনারা পারেন না, আমরা পারি না!”
সাত দিনের মধ্যে যে দুই দলকে বিজেপি-র মোকাবিলায় কাছে টানার চেষ্টা করেছেন মমতা, তাদের সঙ্গে সদ্য লোকসভা ভোটেই তৃণমূলের লড়াই হয়েছে। ভোটে নজিরবিহীন সাফল্যের পরেও তৃণমূল নেত্রী যে ভাবে কখনও বাম, কখনও কংগ্রেসের প্রতি নরম মনোভাব দেখাচ্ছেন, তাতে বিজেপি নিয়ে তাঁর দুশ্চিন্তাই ধরা পড়ছে বলে গেরুয়া শিবিরের বক্তব্য। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ যেমন এ দিন বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী হয়তো অচিরেই তৃণমূল-সিপিএম-কংগ্রেসের জোট করতে চাইবেন!”
বিজেপি-র উত্থানকে মাথায় রেখে বামেদের সঙ্গে সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্কের যে বাতাবরণ মুখ্যমন্ত্রী গড়ে তুলেছিলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে তা অবশ্য প্রায় উধাও। বিধানসভায় তৃণমূলের সঙ্গে বামেদের তুমুল বিবাদ চলছে। ভদ্রেশ্বর ও রায়দিঘির ঘটনায় সিপিএম-বিজেপি’র যোগসাজশকে দায়ী করে বামেদের আরও ক্ষুব্ধ করে তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কংগ্রেসের সঙ্গেও বিধানসভায় সরকার পক্ষের বিরোধ জারি আছে। বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী কেন তাঁর দফতরের প্রশ্নের উত্তর দেবেন না, তা নিয়ে পুলিশ বাজেটের দিন হইচই বাধিয়েছিলেন বহরমপুরের বিধায়ক মনোজবাবু। ভদ্রেশ্বরের ঘটনায় সিবিআই এবং রায়দিঘির ঘটনায় কর্মরত কোনও বিচারপতিকে দিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি করে এ দিনও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি তরজায় জড়ান তিনি। বিজেপি-সংক্রান্ত বার্তা দিতে সেই মনোজবাবুকেই বেছে নেন মুখ্যমন্ত্রী!
ঘটনাচক্রে, এ দিনই অধিবেশনের বিরতির সময় মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। ভোটের ফল বেরোনোর পরে মানসবাবু এক দিন মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করে সন্ত্রাস নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। মানসবাবুর বক্তব্য, এ দিনও তিনি সবং, পিংলা ও খড়গপুর গ্রামীণ এলাকায় শাসক দলের সন্ত্রাস বন্ধে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। কিন্তু কংগ্রেসের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা দেওয়ার দিনই এমন সাক্ষাৎ? মানসবাবুর কথায়, “সংসদীয় গণতন্ত্রে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিরোধীদের দেখা করায় কোনও অন্যায় নেই। বরং, এটাই সুস্থ নজির!”
মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা প্রসঙ্গে মানসবাবুর মন্তব্য, “এ রাজ্যে অটলবিহারী বাজপেয়ীর হাত ধরে ব্রিগেডে দাঁড়িয়ে বিজেপি-র বীজ পুঁতেছিলেন জ্যোতি বসু। পরে তৃণমূল তাদের বাহক হয়েছে। এখন যদি কাঁধের বাঁক নামিয়ে রেখে মুখ্যমন্ত্রীর বোধোদয় হয়, ভাল কথা!” যে তৃণমূল গুজরাত-দাঙ্গার পরেও বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভায় ছিল, তাদের বিজেপি-বার্তাকে গুরুত্ব দেওয়া নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে দ্বিমত আছে। যাঁকে লক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, সেই মনোজবাবুর কথায়, “ওঁর কথায় আমরা আহ্লাদিত নই, শঙ্কিতও নই!”