বন্ধ থাকা হলদিয়ার মানেকসিয়া অ্যালুমিনিয়াম কারখানার জট কাটল না বুধবারও। এ দিন সকালে পূর্ব মেদিনীপুরের উপ শ্রম কমিশনার মিহির সরকার হলদিয়ার অফিসে মালিকপক্ষ এবং কারখানার স্থায়ী কর্মীদের বৈঠকে ডেকেছিলেন। কিন্তু, মঙ্গলবার বিকেলে চিঠি দিয়ে মানেকসিয়ার তরফে কারখানার গ্রুপ পার্সোনেল ম্যানেজার অনুপম মিত্র জানান, তাঁরা বৈঠকে আসতে পারছেন না। একই সঙ্গে ‘নিরাপত্তাহীনতার’ অভিযোগ তুলে অনুপমবাবু চিঠিতে কলকাতায় শ্রম দফতরের অফিসে বৈঠক ডাকার অনুরোধ করেছেন। বৈঠক ভেস্তে যাওয়ায় হতাশ মানেকসিয়ার কর্মীরা। তাঁরা উপ শ্রম কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেন।
কিন্তু, কলকাতায় বৈঠক করতে চাইছেন কেন? গ্রুপ পার্সোনেল ম্যানেজার অনুপমবাবুর যুক্তি, “আসলে অনেক বিষয়ে আলোচনা প্রয়োজন। তাই আমরা কলকাতার শ্রম দফতরের অফিসে আলোচনা করতে চাইছি। পরে হলদিয়াতেও বৈঠকে বসব।” তবে উপ শ্রম কমিশনারকে দেওয়া চিঠিতে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ আনলেও পর ফোনে অনুপমবাবু এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, “চাপা হুমকি, চাপা উত্তেজনা তো রয়েইছে। তা না হলে ম্যানেজমেন্টের লোকজন কারখানায় আসতে চাইবেন না কেন!” পূর্ব মেদিনীপুরের উপ শ্রম কমিশনার মিহির সরকার বলেন, “বুধবার মালিকপক্ষ বৈঠকে আসেননি। তাঁরা নানা কারণ দেখিয়ে কলকাতায় বৈঠক ডাকার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।”
সম্প্রতি মানেকসিয়ার অস্থায়ী কর্মীদের বেতন বাড়ানো হলেও স্থায়ী কর্মীদের ক্ষেত্রে তা হয়নি। স্থায়ী কর্মীরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গত মাসের ৩০ তারিখ থেকে আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলন চলাকালীন কারখানার স্থায়ী কর্মীদের বিরুদ্ধে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার নীবেশকুমার সিংহকে মারধরেরও অভিযোগ ওঠে। এই পরিস্থিতিতে স্থায়ী কর্মীরা উপ শ্রম কমিশনারের কাছে দাবিসনদ জমা দেন। অন্য দিকে, কারখানা কর্তৃপক্ষ তাঁদের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজারকে মারধর-সহ নানা অভিযোগ তুলে ১৫ জন স্থায়ী কর্মীর অভিযোগ জানায়। এবং গত ৩ নভেম্বর কারখানায় ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্কের’ নোটিস ঝোলায়।
জট কাটাতে গত সপ্তাহেই উপ-শ্রম কমিশনার হলদিয়ার অফিসে মালিকপক্ষকে বৈঠকে ডেকেছিলেন। তখনও বৈঠকে উপস্থিত না হয়ে চিঠি পাঠিয়ে সময় চেয়েছিলেন মালিকপক্ষ। তখনই বুধবার বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়। এ দিনের বৈঠকে কারখানার ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ এবং স্থায়ী কর্মীদের দাবিসনদ (সিওডি) নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, এ দিনের বৈঠকও মালিকপক্ষ না আসায় ভেস্তে যায়। ওই কারখানার স্থায়ী কর্মীরা এ দিন উপ-শ্রম কমিশনারের অফিস থেকে বেরিয়ে জানান, ‘আগে কারখানা চালু হোক, পরে দাবিসনদ নিয়ে আলোচনা হোক।’তাঁরা কাউকে মারধর, হুমকির অভিযোগও অস্বীকার করেছেন।