কারও কুঠুরি থেকে অট্টহাসি, কারও বা দীর্ঘশ্বাস

জেল-কুঠুরির ভেতর থেকে ভেসে এল অট্টহাস্য। তার পর সহ-বন্দিদের ডেকে ডেকে তিনি বলতে শুরু করলেন, “লাইনে আরও আছে।” তিনি কুণাল ঘোষ। বর্তমান ঠিকানা, প্রেসিডেন্সি জেল।মুকুল রায়কে যে সিবিআই তলব করেছে, সে খবর অন্য বন্দি মারফতই আসে কুণালের কানে। ওই খবর পেয়েই তাঁর উচ্ছ্বাস টের পায় অন্য বন্দিরাও। জেলরক্ষী সূত্রের খবর, কুণালের কুঠুরির ভিতর থেকে জোরালো হাসির আওয়াজ ভেসে আসে। অন্য বন্দিদের ডেকে ডেকে তিনি বলেন, “খুব ভাল হয়েছে।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:২০
Share:

জেল-কুঠুরির ভেতর থেকে ভেসে এল অট্টহাস্য। তার পর সহ-বন্দিদের ডেকে ডেকে তিনি বলতে শুরু করলেন, “লাইনে আরও আছে।”

Advertisement

তিনি কুণাল ঘোষ। বর্তমান ঠিকানা, প্রেসিডেন্সি জেল।

মুকুল রায়কে যে সিবিআই তলব করেছে, সে খবর অন্য বন্দি মারফতই আসে কুণালের কানে। ওই খবর পেয়েই তাঁর উচ্ছ্বাস টের পায় অন্য বন্দিরাও। জেলরক্ষী সূত্রের খবর, কুণালের কুঠুরির ভিতর থেকে জোরালো হাসির আওয়াজ ভেসে আসে। অন্য বন্দিদের ডেকে ডেকে তিনি বলেন, “খুব ভাল হয়েছে।”

Advertisement

শহরের অন্য প্রান্তে দমদম জেল। এ দিন সিবিআই তলবের খবরে সম্ভবত সব চেয়ে খুশি সেখানকারই এক বাসিন্দা। আসিফ খান। একদা মুকুল রায়ের ছায়াসঙ্গী। জেল সূত্রের খবর, টিভির খবর শুনেই আসিফকে চিৎকার করে বলতে শোনা গিয়েছে, “যা যা বলেছি, এ বার তাই তাই হবে।” তাঁর অভিযোগ ছিল, সারদার সঙ্গে মুকুল রায়ের সংশ্রবের কথা জনসমক্ষে আনার জন্য রাজ্যের পুলিশ তাঁকে ভুয়ো মামলায় গ্রেফতার করেছে।

আর মদন মিত্র? জেল সূত্রে খবর, বিকেলে একটি খবরেই বদলে যায় মন্ত্রীর ‘মুড’। যাঁরা তাঁকে দুপুরে দেখেছেন, তাঁদের চোখে তখনও পর্যন্ত অন্য রকম কিছু চোখে পড়েনি। পড়ল বিকেলের পরে। তত ক্ষণে টিভিতে দেখিয়ে দিয়েছে, মুকুল রায়কে তলব করেছে সিবিআই। এর পরে নিজের কুঠুরির মধ্যেই দ্রুত পায়চারি করতে দেখা যায় পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রকে। ঘন ঘন ঘামও মুছতে থাকেন। কারা দফতরের এক অফিসার জানান, মন্ত্রীকে দেখে তখন বেশ ‘নার্ভাস’ লাগছিল।

অথচ জেল-বন্দি মন্ত্রী দুপুরের খাওয়া খেয়েছেন ঠিক মতো। তার পরে বিশ্রাম নিয়েছেন নিয়মমাফিক। সোমবারের বিকেলে টিভির খবর শুনে জানতে পারেন, তাঁর সতীর্থ মুকুল রায়কে এ বার ডেকেছে সিবিআই। এই খবর শুনে তিনি যে বেশ ঘাবড়ে গিয়েছেন তা তাঁর হাবভাবে প্রকাশ পেয়েছে বলে এ দিন আলিপুর জেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে।

জেলে যাওয়ার সময়ে ঘনিষ্ঠ মহলে পরিবহণমন্ত্রী কিন্তু বলেছিলেন, সারদা-মামলায় তিনি পড়লে একা পড়বেন না, ডালপালা নিয়েই পড়বেন। মুকুল রায়ের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুব মধুর, এমন খবরও নেই। তা হলে, সেই মুকুল রায়কে সিবিআইয়ের তলবে তো কুণাল-আসিফের মতো পরিবহণমন্ত্রীরও উচ্ছ্বসিত হওয়া উচিত ছিল। এ দিন ছবিটা অন্য রকম হল কেন?

দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা, সারদা-কাণ্ডে সিবিআইয়ের জালে একে একে তৃণমূলের চাঁইরা ধরা পড়ার পরেও আশা ছিল, শেষ পর্যন্ত সব কিছু সামলে নেওয়া যাবে। মদন গ্রেফতার হওয়ার পরে পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন নিতিন গডকড়ী ও অরুণ জেটলি। বিজেপির এই দুই প্রথম সারির নেতার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌহার্দ্যপূর্ণ কথাবার্তা হয়। দলের অভ্যন্তরে তখন ফিসফাস শোনা গিয়েছিল, সারদা-মামলা নিয়ে হয় তো এ বার কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারবেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে এ দিনের মুকুলকে সিবিআই তলবের খবর।

মুকুলকে ডেকে পাঠানোর খবরে মদন-কুণালদের প্রতিক্রিয়া জানার আগ্রহ এ দিন সব চেয়ে বেশি ছিল প্রশাসনের তরফে। কারা সূত্রের খবর, বিকেলের পর থেকে কারা দফতরের অফিসারদের কাছে বিভিন্ন প্রশাসনিক মহল থেকে ঘনঘন ফোন আসতে শুরু করে। সবাই চুপিচুপি জানতে চান, ‘কুণাল কী বলল, মদন কী করল’। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে এই সব তথ্য জানানোর জন্যই নবান্নর তরফে এই তৎপরতা বলে কারা সূত্রের অনুমান। মদনের সঙ্গে আলিপুর জেলে রয়েছেন সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনও। মুকুলকে ডাকার খবর পেয়ে তিনিও বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন বলে কারা সূত্রের খবর। বিকেলেই খবরটা পেয়েছেন তিনি। তার পর থেকেই বার বার মাথায় হাত চলে যাচ্ছে তাঁর। স্থির হতে পারছেন না। জেল সূত্রের দাবি, মুকুল সব কিছু সামলে নেবেন, এই ভরসাতেই হয় তো এত দিন কাটাচ্ছিলেন সুদীপ্ত। আজকের খবরে আশার সেই আলোটুকুও নিভে গেল।

মুকুলকে সিবিআই ডেকে পাঠানোয় অবশ্য কোনও তাপ-উত্তাপ দেখা যায়নি দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের মধ্যে। আলিপুরের মহিলা সংশোধনাগারে বন্দী রয়েছেন তিনি। কারা সূত্রের খবর, একেবারেই ‘নর্মাল’ ছিলেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন