তহ্বা সিদ্দিকির সঙ্গে মুকুল রায়। ফুরফুরা শরিফে সম্প্রতি এক মধ্যরাতে। দীপঙ্কর দে-র তোলা ছবি।
সদ্য ফুরফুরা শরিফ থেকে ঘুরে এসেছেন তিনি। সামনেই ফের যাওয়ার কথা রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির অনেকটাই বাস্তবায়িত না হওয়ায় ফুরফুরা শরিফ যখন ক্ষোভে ফুটছে, ঠিক তখনই সেখানে যাতায়াত বাড়িয়েছেন মুকুল রায়। আর, মমতা সরকারের সঙ্গে পুরনো ‘বন্ধুত্ব’ ভেঙে ফের তোপ দাগতে শুরু করেছেন ফুরফুরার পিরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি।
ত্বহার এ বারের উপলক্ষ ফুরফুরায় ইসালে সওয়াব (উরস) উৎসব। যে উৎসবে গোটা রাজ্য তো বটেই, বাংলাদেশ থেকেও বহু মানুষ আসেন। কয়েক লাখ মানুষের ভিড় হয়। এত দিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ত্বহার বোঝাপড়া দেখে তাঁদের আশা ছিল, এ বার উন্নয়ন হবে। কিন্তু বাস্তবে যদি তা না হয়, তা হলে তার দায় পিরজাদার পক্ষে এড়ানো মুশকিল। তাঁর দিকে যাতে আঙুল তুলতে না পারে কেউ, সে জন্য তিনি মমতা সরকারকে আক্রমণ শুরু করেছেন। অন্য এক পক্ষের বক্তব্য, তৃণমূলের অন্দরে যে বিভাজন তৈরি হচ্ছে, সেখানে ত্বহা আসলে মুকুল-পন্থী।
মুকুল রায় এই ক্ষোভের কথা ভালই জানেন। ত্বহার সঙ্গে সমঝোতা এক সময়ে মমতাকে সংখ্যালঘু মন পেতে কতটা সুবিধা করে দিয়েছিল, সেই হিসেবও তাঁর কাছে স্পষ্ট। এখন যখন মুকুলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, খুব তাড়াতাড়ি তিনি তৃণমূল ছেড়ে এসে নিজের দল গড়তে পারেন বলে জল্পনা চলছে, তখন তাঁর বারবার ফুরফুরায় আসা-যাওয়ায় অন্য সমীকরণ দেখতে পাচ্ছেন অনেকেই। যার মোদ্দা কথা, মুকুলকে যদি দল ছাড়তেই হয় তবে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কও তিনি নিজের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। রাজ্য জুড়ে বিজেপির উত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে যার অভিঘাত তৃণমূলের পক্ষে মারাত্মক হতে পারে।
রাজ্যে ক্ষমতায় আসার আগে যে সময় থেকে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে তৃণমূলের নজর পড়েছিল, ঠিক তখন থেকেই ফুরফুরা শরিফে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যাতায়াত এবং ত্বহার সঙ্গে ওঠাবসা বাড়ে। রেলমন্ত্রী হওয়ার পরে, ভোটে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও মমতা সেখানে গিয়ে প্রতিশ্রুতির ফোয়ারা ছুটিয়েছেন। কিন্তু তার অনেকটাই যা কথার কথা, তা এত দিনে মালুম হয়েছে ত্বহাদের। মাস ছয়েক আগে থেকেই তার আঁচ টের পাওয়া যাচ্ছে। ইতিমধ্যে মমতার কাছে গিয়ে অসন্তোষও ব্যক্ত করেছেন তিনি। এক দিকে মুকুল যখন সেই অসন্তোষ কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে পারেন, তখন ত্বহাও মুকুল-জুজু দেখিয়ে উন্নয়নের কিছুটা হাতে পাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে একাংশের ধারণা।
কোন-কোন প্রতিশ্রুতিভঙ্গের দায়ে মমতাকে বিঁধছেন পিরজাদা?
ত্বহার ক্ষোভ, “মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনে মহাফেজখানা গড়ার জন্য চার জায়গায় জমি দেখা হয়েছে। শুনেছি, ২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকাও পড়ে। মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলে দিলেন, সব হয়ে গিয়েছে। অথচ এক কোদাল মাটিও পড়েনি।” উরস উৎসবে এসে মানুষ মমতার এ রকম বেশ কিছু প্রতিশ্রুতিভঙ্গের সাক্ষী হবেন দাবি করে তাঁর কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রী এখন বাংলাদেশে। সে দেশ থেকেও সারা বছর বহু মানুষ আসেন। কিন্তু তীর্থযাত্রীদের জন্য ন্যূনতম পানীয় জল বা আলোর ব্যবস্থা এখনও হল না। মুখ্যমন্ত্রী যা করেছেন, সেটুকুই বলুন। বাড়িয়ে বলে লাভ কী?”
দু’দিন আগেও যিনি তৃণমূল ও তার সরকারের অন্যতম হর্তাকর্তা ছিলেন, যাঁর গায়ে এখনও দলের অন্যতম সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের তকমা, সেই মুকুল রায়কে এর দায় নিতে হবে না?
শনিবার রাতে এই প্রশ্নে একটুও বিচলিত না হয়ে বরং ক্ষমতাসীনদের কোর্টেই বলটা ঠেলে দিলেন মুকুল। মমতার প্রতিশ্রুতির কোনও দায় না নিয়ে তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “আমি তো রাজ্য সরকার নই! কী করব বলুন?” তবে তৃণমূল সরকারে না থাকলেও তিনি যে ফুরফুরা শরিফের পাশে আছেন, তা স্পষ্ট করে দিয়ে মুকুল যোগ করেন, “ওঁরা আমায়
আমন্ত্রণ করেছিলেন। রাজ্যসভার অধিবেশন শেষে দিল্লি থেকে ফিরে ওঁদের ওখানে যাব। তখন ত্বহা সাহেবের সঙ্গে কথা হবে।”