নির্বাচন কমিশনের কাজ করতে যাওয়া কর্মীদের ফের হেনস্থা করায় অভিযুক্ত শাসক দল।
শুরু হয়েছিল হাবরায়। সরকারি ভবনে তৃণমূলের ফ্লেক্স-ব্যানার খোলার ব্যবস্থা করায় আক্রান্ত হন বিডিও। পরে হাওড়া এবং মালদহের মানিকচকে কমিশনের ‘মডেল কোড অব কনডাক্ট’ (এমসিসি) রক্ষার দায়িত্বে থাকা দলের সদস্যদের মারধরের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। মানিকচকের ঘটনায় রাজ্যের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের জামাই-সহ সাত জন গ্রেফতারও হন। একই ধরনের অভিযোগ এ বার পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে। সেখানে অবশ্য এমসিসি দলের পাশাপাশি ‘আক্রান্ত’ সিপিএমের বিধায়ক-নেতা-কর্মীরাও।
সোমবার সকালে কেশপুরের কেওটপাড়া থেকে শশাবনি পর্যন্ত মিছিল করে সিপিএম। নির্বাচন কমিশনের নিয়মমতো সেই মিছিলের ভিডিও-ছবি তুলতে গিয়েছিলেন এমসিসি দলের সদস্যেরা। মিছিল শেষে ফেরার পথে বাজুয়াড়ার কাছে প্রথমে সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দোলুই, দলের কেশপুর জোনাল সম্পাদক আহমেদ আলি-সহ ১১ জনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে তৃণমূলের লোকজন মারধর করে বলে অভিযোগ। সিপিএম কর্মীদের গাড়ির পিছনেই ছিলেন এমসিসি কর্মীরা।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সিপিএম কর্মীদের মারধর শুরু হতেই এমসিসি কর্মীরা ছবি তুলতে যান। তখন তৃণমূলের লোকজন তাঁদের বাধা দেয় ও হেনস্থা করে বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় অভিযোগ দায়ের করেছেন কেশপুরের বিডিও মহম্মদ জামিল আখতার। জেলাশাসক গোলাম আলি আনসারি বলেন, “অভিযোগ পেয়ে পুলিশকে বিষয়টি দেখতে বলেছি।” সিপিএমও পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে। তবে তৃণমূল হামলার অভিযোগ মানেনি।
রামেশ্বরবাবু-সহ জখম ১১ জন সিপিএম নেতা-কর্মীর প্রাথমিক চিকিৎসা হয় কেশপুর হাসপাতালে। রামেশ্বরবাবুর অভিযোগ, “মিছিল চলাকালীনই তৃণমূলের লোকজন মোটরবাইকে এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল। তাদের মুখে কাপড় বাঁধা ছিল। মিছিল করে ফেরার পথে বাজুয়াড়ার কাছে আমাদের গাড়ি ঘিরে ধরে ওরা হামলা চালায়।” ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী সন্তোষ রানার দাবি, “পরিকল্পনা করেই হামলা চালিয়েছে তৃণমূল।”
অভিযোগ অস্বীকার করে কেশপুরের তৃণমূল নেতা চিত্ত গড়াই বলেন, “বিধায়ককে নিয়ে ওই এলাকায় ব্যাপক অসন্তোষ রয়েছে। এত বড় বন্যা গেল। তা-ও তাঁকে এলাকায় দেখা যায়নি। গ্রামবাসীদের কেউ কেউ তার প্রতিবাদ করতে থাকতে পারেন।” কেশপুরের ঘটনার প্রতিবাদে আজ, মঙ্গলবার জেলা জুড়ে মিছিল করবে সিপিএম।
এ দিন হুগলির আরামবাগেও সিপিএম কর্মীদের উপরে হামলা এবং পার্টি অফিসে আগুন লাগানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পরে এ দিন সকালে সিপিএমের ৩ নম্বর লোকাল কমিটির ডোঙ্গলমোড়ের পার্টি অফিস খোলা হয়। এলাকায় মিছিলও করে সিপিএম। তার পরেই তৃণমূলের লোকেরা মিছিলে যোগ দেওয়া সিপিএম কর্মীদের মারধর করে এবং রাতে ওই পার্টি অফিসে আগুন লাগায় বলে অভিযোগ। এলাকায় যায় দমকলের ইঞ্জিন। আবার লাগোয়া এলাকার কাপসিট গ্রামে শাসক দলের হামলায় তাদের কর্মীরা জখম হন বলে দাবি সিপিএমের। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, হামলা চালিয়েছিল সিপিএমই। দু’পক্ষের চার জন আরামবাগ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জনা ছয়েকের চিকিৎসা হয়েছে স্থানীয় ভাবে। দু’পক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে।