কর্মবিরতির অভ্যেস দূর করতে প্রয়াসী হাইকোর্ট

বকেয়া মামলা জমতে জমতে পাহাড় হয়ে গিয়েছে। অথচ কথায় কথায় কাজ বন্ধের হিড়িকে খামতি নেই! এমতাবস্থায় কোনও বিচারপতি বা আইনজীবীর মৃত্যুতে কলকাতা হাইকোর্টে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালনের রেওয়াজে দাঁড়ি টানতে উদ্যোগী হলেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর। এ জন্য হাইকোর্টের প্রবীণ চার বিচারপতিকে নিয়ে তিনি একটি কমিটি গড়ে দিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:৪৪
Share:

বকেয়া মামলা জমতে জমতে পাহাড় হয়ে গিয়েছে। অথচ কথায় কথায় কাজ বন্ধের হিড়িকে খামতি নেই!

Advertisement

এমতাবস্থায় কোনও বিচারপতি বা আইনজীবীর মৃত্যুতে কলকাতা হাইকোর্টে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালনের রেওয়াজে দাঁড়ি টানতে উদ্যোগী হলেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর। এ জন্য হাইকোর্টের প্রবীণ চার বিচারপতিকে নিয়ে তিনি একটি কমিটি গড়ে দিয়েছেন। কমিটি এ ভাবে কর্মবিরতি পালন বন্ধ করার জন্য আইনজীবীদের বিভিন্ন সংগঠনের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে কমিটি। তাতে এ-ও বলা হয়েছে, বিশেষ ক্ষেত্রে যদি পুরো দিন কর্মবিরতি করতেই হয়, তা হলে ছুটির দিন শনিবারে হাইকোর্ট খোলা রাখা হোক। প্রস্তাব সম্পর্কে আইনজীবী সংগঠনের তরফে নির্দিষ্ট কোনও প্রতিক্রিয়া অবশ্য এখনও পাওয়া যায়নি।

কলকাতা হাইকোর্টে কাজের দিন সপ্তাহে পাঁচটি সোম থেকে শুক্রবার, বেলা সাড়ে দশটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটে পর্যন্ত। কিন্তু বাস্তবে হামেশাই শোকপালনের জেরে তামাম দিন শুনানি বন্ধ থাকে। আদালত-সূত্রের খবর, কলকাতা হাইকোর্টে ঝুলে থাকা মামলা এই মুহূর্তে সাড়ে তিন লক্ষ ছুঁইছুঁই। প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারপতি নেই। ফলে এমনিতেই বকেয়া মামলার বহর দিন দিন বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতেও প্রাক্তন বা কর্মরত বিচারপতি কিংবা আইনজীবীর মৃত্যুতে গোটা দিন কাজ শিকেয় তুলে শোকপালনের প্রথায় ভাটা পড়েনি। বরং তা আগের তুলনায় বাড়ছে বলেই আইনজীবীদের একাংশের অভিযোগ।

Advertisement

পরিণামে সঙ্কট আরও ঘনীভূত হচ্ছে, যা দেখে প্রধান বিচারপতি যারপরনাই অসন্তুষ্ট। বিচারপ্রার্থীদের কথা ভেবে এখন তিনি এই অভ্যাসের বদল চাইছেন। সূত্রের খবর: গত অগস্টে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন মঞ্জুলা চেল্লুর। দায়িত্ব নিয়েই তিনি দেখেছেন, প্রায়শই বিচারপতি বা আইনজীবীর মৃত্যুতে সারা দিন কাজকর্ম বন্ধ থাকছে। সূত্রের খবর, ব্যাপারটা নিয়ে অন্যান্য বিচারপতির কাছে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। ওঁদের তিনি বলেছিলেন, দেশের অন্য কোনও হাইকোর্টে এমন ঘন ঘন কর্মবিরতি হয় না। এমনকী, সুপ্রিম কোর্টের কোনও আইনজীবীর মৃত্যু হলে সেখানে সকালে মিনিট পনেরো শোক জ্ঞাপন করে আদালতের স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু হয়ে যায়।

“তা হলে কলকাতায় ব্যতিক্রম কেন?” একান্ত মহলে প্রশ্ন তুলেছিলেন মঞ্জুলা চেল্লুর। প্রবীণ কয়েক জন বিচারপতিও বিষয়টিতে উদ্বেগ গোপন করেননি। তাঁরা প্রধান বিচারপতিকে জানান, কলকাতা হাইকোর্টে ইদানীং কর্মবিরতির যে রকম ঘনঘটা, তাতে বার্ষিক কর্মদিবস হচ্ছে বড়জোর ১৮০-১৯০। যেখানে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, বছরে অন্তত ২১০ দিন কোর্ট খোলা থাকতে হবে।

বিচারের গতি-পথে এ হেন অন্তরায় দূর করতে প্রধান বিচারপতি তখনই চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন। কী ভাবে সেটা সম্ভব, তা খুঁজে বার করার ভার দিয়ে এ বার তিনি হাইকোর্টের প্রবীণ চার বিচারপতির কমিটি বানিয়েছেন। বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায়, বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায়, বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি নিশীথা মাত্রের ওই কমিটি কর্মদিবস বাড়ানোর লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের আইনজীবীদের তিনটি সংগঠনের কাছে সুরাহা-প্রস্তাব পাঠিছে। তাতে সার্বিক ভাবে পুরো দিন কর্মবিরতি পালনের প্রবণতা ঝেড়ে ফেলায় জোর দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে বলা হয়েছে, বিশেষ কারণে কোনও দিন আইনজীবীরা যদি কাজ না-করেন, শনিবার হাইকোর্ট খোলা থাকুক। সে দিন আইনজীবীরা কোর্টে এসে মামলা লড়ুন। আর আদালতে শোকপালন বা স্মরণসভা করার দরকার পড়লে সেটা করা হোক বিকেল চারটের পরে।

শুনে আইনজীবী সংগঠনের কী প্রতিক্রিয়া? কলকাতা হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রণব দত্ত শুক্রবার বলেন, “প্রস্তাব সম্পর্কে সদস্যদের বিস্তারিত জানিয়েছি। এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্রত্যেকেই সদর্থক মনোভাব নিয়ে কাজ করছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন