সংখ্যালঘু মৌলবাদের ছায়া যত দেখা যাবে, এ রাজ্যে বিজেপি-র ততই সুবিধা। খাগড়াগড়-কাণ্ডের উল্লেখ করে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক সমীকরণের এমনই ব্যাখ্যা দিলেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি। তাঁর সোজাসাপটা বিশ্লেষণ, খাগড়াগড়ের মতো ঘটনা ব্যবহার করে বিজেপি এক দিকে সংখ্যাগুরুদের ভাবাবেগকে এক জায়গায় আনতে চাইছে। আবার তার মোকাবিলায় তৃণমূল নেত্রী আরও বেশি করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের আবেগ কাজে লাগাতে চাইছেন। এই ভাবেই আড়াআড়ি বিভাজন ঘটে যাচ্ছে স্বামী বিবেকানন্দের বাংলায়!
ধর্ম নিয়ে রাজনীতি এবং সাম্প্রদায়িক মনোভাবের প্রেক্ষাপটেই এ বার বিবেকানন্দের ১৫৩ তম জন্মদিন পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই। তাদের আয়োজনেই সোমবার মৌলালি যুব কেন্দ্রে ‘ধর্মীয় সহনশীলতা ও সাম্প্রদায়িকতা’ শীর্ষক আলোচনাসভায় বক্তা ছিলেন ইয়েচুরি। পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার সাংসদ ইয়েচুরি এই অবসরেই বুঝিয়েছেন, বিবেকানন্দ এমন এক জন মনীষী, যাঁর বেশ কিছু কথা যুব সমাজকে উদ্দীপ্ত করার জন্য তাঁরা ব্যবহার করতে পারেন। আবার তাঁর অন্য কিছু কথা আরএসএস তথা সঙ্ঘ পরিবারও নিজেদের মতো করে কাজে লাগাতে পারে! তবে এ রাজ্যে বাম যুবদের জন্য ইয়েচুরির হুঁশিয়ারি, “বাংলায় মুসলিম মৌলবাদ যত উৎসাহ পাবে, বিজেপি-র উল্টো দিকে তত লাভ হবে! বাংলায় এখন এটাই হচ্ছে। এই অঙ্কেই চলছে সব।”
সাম্প্রতিক কালের খাগড়াগড়ের ঘটনা যেমন উল্লেখ করেছেন সিপিএমের রাজ্যসভার দলনেতা, তেমনই মনে করিয়ে দিয়েছেন, দেশের স্বাধীনতার সময়েও বাংলায় রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয়েছিল। সাম্প্রদায়িকতার যে মনোভাব এ রাজ্যে সুপ্ত ছিল, বাম জমানায় মাথা তোলার সুযোগ পায়নি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতি সেই দৈত্যকেই বোতল থেকে বার করে দিয়েছে! বিজেপি আর তৃণমূল এখন পাল্লা দিয়ে মেরুকরণের রাজনীতি করতে ব্যস্ত। আলোচনাসভায় সিপিএমের সাংসদ মহম্মদ সেলিমও বলেছেন, “বিবেকানন্দ ধর্মকে বর্ম করে অপকর্মকে আড়াল করতে বলেননি! মুক্তিকামী মানুষকে তাঁর আহ্বান ছিল, গীতাপাঠের চেয়ে ফুটবল খেলা ভাল। আর এখন সেই গীতাকে রাষ্ট্রীয় গ্রন্থের মর্যাদা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে!”
বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে এ রাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, খাগড়াগড়ের তদন্তে এমন কিছু উঠে আসতে পারে, যার জেরে প্রবল বিড়ম্বনায় পড়তে হতে পারে তৃণমূল নেত্রীকে। তিনি এ দিনও দাবি করেছেন, “আমাদের কিছু করতে হবে না। সারদা হোক বা খাগড়াগড়, তৃণমূল দলটা নিজের বিপদ নিজেরাই ডেকে এনেছে!”