পুজোর ভোজপর্ব মিটতে না মিটতেই গ্যাসের জোগানে টান পড়ল বাঙালির হেঁশেলে।
পরিস্থিতি এমনই যে রান্নার গ্যাস বুক করলে সিলিন্ডার পেতে মাস গড়িয়ে যাচ্ছে। নতুন সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন জায়গায় গ্রাহকদের হাতে হেনস্থা হচ্ছেন ডিলারেরা। মঙ্গলবারও কলকাতা, খড়্গপুর, ব্যান্ডেল, মালদহ, উত্তর ২৪ পরগনার মতো বেশ কিছু জায়গায় গোলমালের ঘটনা ঘটেছে। এ ভাবে চলতে থাকলে শীতে গ্রাহকেরা আরও বড় সঙ্কটে পড়বেন, এই আশঙ্কায় বিভিন্ন গ্যাস কোম্পানি ও কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের দ্বারস্থ হয়েছেন রাজ্যের ডিলারেরা।
এ রাজ্যে প্রতি মাসে রান্নার গ্যাস লাগে গড়ে ৮১ হাজার মেট্রিক টন। ডিলারদের অভিযোগ, সেই জায়গায় অক্টোবরে মিলেছে মাত্র ৩১ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ মাসিক প্রায় জোগানে ৫০ হাজার মেট্রিক টন ঘাটতি। এলপিজি ডিলারেরা জানাচ্ছেন, মোট মাসিক সরবরাহের মধ্যে ইন্ডিয়ান অয়েল ৫০ হাজার মেট্রিক টন, ভারত পেট্রোলিয়াম ১৪ হাজার মেট্রিক টন এবং হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম ১৭ হাজার মেট্রিক টন সরবরাহ করে। ওই তিন সংস্থা যথাক্রমে ২০ হাজার, ৪ হাজার এবং ৭ হাজার মেট্রিক টন এলপিজি সরবরাহ করেছে।
এই বিপর্যয়ের জন্য মূলত পুজোর ছুটি এবং সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়কেই দায়ী করছে এলপিজি সংস্থাগুলি। ভারত পেট্রোলিয়ামের রিজিওন্যাল ম্যানেজার পি কে রামনাথনের ব্যাখ্যা, “হুদহুদের কারণে সমুদ্রপথে অনেক অয়েল ট্যাঙ্কার আসতে দেরি করেছে। কিছু পৌঁছতে পারেনি। তার ফলেই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে।” হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়ামের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার এস শ্রীনিভাসালু বলেন, “ছুটি ও হুদহুদের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় ছাড়াও আরও কিছু কারণে এই সমস্যা।” কিন্তু আর কী কারণে সঙ্কট তীব্র হয়েছে, তা তিনি ভেঙে বলতে চাননি।
ইন্ডিয়ান অয়েলের মতে, অক্টোবরে টানা ছুটির জন্যই বেশি সমস্যা হয়েছে। অন্য একটি সংস্থার এক কর্তা আবার অভিযোগ করেন, কেন্দ্র গ্রাহক পিছু রান্নার গ্যাসের বাৎসরিক ‘কোটা’ বাড়িয়ে দেওয়ায় ফের সিলিন্ডার নিয়ে কালোবাজারি শুরু হয়েছে। শোধনাগারে আন্দোলন, গ্যাস সিলিন্ডারের টেন্ডার নিয়ে গোলমালের কারণেও সমস্যা বেড়েছে বলে একটি সূত্রের দাবি। রাজ্যের গ্যাস ডিলারদের দাবি, অন্য রাজ্যে সমস্যা এতটা তীব্র হয়নি। ওয়েস্ট বেঙ্গল এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল বলেন, “ইন্ডিয়ান অয়েল ৩০ হাজার মেট্রিক টন কম সরবরাহ করেছে। বিষয়টি নিয়ে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। এলপিজি সংস্থাগুলিকেও স্মারকলিপি দেওয়া। এমন চলতে থাকলে সমস্যা আরও জটিল হবে।”
ইন্ডিয়ান অয়েলের জেনারেল ম্যানেজার রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য এত বিপুল পরিমাণ গ্যাস ঘাটতির কথা মানতে চাননি। তিনি বলেন, “এতটা ঘাটতি হওয়ার কথা নয়। তবে গত মাসে দুর্গা ও কালীপুজো-সহ বিভিন্ন কারণে ছুটি থাকায় কিছুটা সমস্যা হয়েছে।” ডিলারদের অভিযোগ, শুধু পুজোর মাস নয়, তার আগে সেপ্টেম্বরেও জোগানে ঘাটতি ছিল। সাধারণ গ্রাহকেরা এত জটিলতা বোঝেন না, তাঁদের রাগ ডিলারদের উপরেই এসে পড়ছে। এমনটা চলতে থাকলে শীতে সমস্যা আরও বাড়বে বলে তাঁদের দাবি।
রবীন্দ্রনাথবাবু অবশ্য আশ্বাস দেন, “এই নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আস্তে-আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।”