গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রধান বিমল গুরুঙ্গ ও তাঁর স্ত্রী মোর্চার প্রথম সারির নেত্রী আশা গুরুঙ্গের আগাম জামিন মঞ্জুর করল কলকাতা হাইকোর্ট। সরকারি কৌঁসুলি মঙ্গলবার তাঁদের আবেদনের বিরোধিতা করেন। তবে বিচারপতি জয়ন্ত বিশ্বাস ও বিচারপতি ইন্দ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ গুরুঙ্গ দম্পতির আর্জি মঞ্জুর করেছে। আদালতের নির্দেশকে স্বভাবতই স্বাগত জানিয়েছে মোর্চা। তৃণমূলের পাহাড় কমিটির নেতারা বিচারাধীন বিষয় নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি।
অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগের নেতা মদন তামাঙ্গের রক্ষী তথা পুলিশ কনস্টেবল মহেশ ঠাকুরিকে আক্রমণ এবং কালিম্পঙে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার অভিযোগে মামলা হয়েছিল গুরুঙ্গ দম্পতির বিরুদ্ধে। গত ১৪ মার্চ দার্জিলিং জেলা আদালত তাঁদের আগাম জামিনের আর্জি খারিজ করে। তাঁরা ফেরার বলে গুরুঙ্গের দার্জিলিঙের বাড়িতে আদালতের নির্দেশে নোটিসও পড়েছিল। গুরুঙ্গ দম্পতি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। এ দিন হাইকোর্টে চার ঘণ্টা শুনানি হয়। সরকারি কৌঁসুলি মনোজিৎ সিংহ জানান, ১১ সেপ্টেম্বর দার্জিলিং জেলা আদালত গুরুঙ্গদের বিরুদ্ধে মামলাটি গ্রহণ করে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। বিচারপতি তাঁর কাছে জানতে চান, আদালতের নির্দেশ দেওয়া ও তা রূপায়ণের মধ্যে অনেক প্রক্রিয়া আছে। সেই প্রক্রিয়া সংক্রান্ত নথি কোথায়? সরকারি আইনজীবী তা দেখাতে পারেননি। তিনি বলেন, সময় দেওয়া হোক, তিনি কাগজপত্র এনে দেখাবেন। বিচারপতি বিশ্বাস জানিয়ে দেন, যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে। তিনি এখনই রায় দেবেন। তদন্তকারী অফিসার সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেন, এই সব তদন্তকারী অফিসার অর্ধ প্রশিক্ষিত মানুষ।
ডিভিশন বেঞ্চের প্রশ্ন, পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও এখনও গুরুঙ্গ দম্পতিকে ধরা হয়নি কেন? বিচারপতিরা জানান, তাঁদের সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে। অথচ তাঁদের ফেরার বলা হচ্ছে। বিচারপতি বিশ্বাস জানান, তিনিও টিভিতে দেখেছেন গুরুঙ্গদের। তা হলে তাঁদের কী করে ফেরার বলা যায়? তাঁদের গ্রেফতার করার ব্যাপারে সরকার সে ভাবে মাথা ঘামায়নি। ধরার ইচ্ছে না থাকলে কোনও দিনই ধরা যায় না।
গুরুঙ্গের পক্ষে আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায় বলেন, এই গ্রেফতার গ্রেফতার খেলা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। গুরুঙ্গ জিটিএ প্রধান বলে তিনি সরকারি নিরাপত্তা নিয়ে ঘোরেন। অথচ সরকার তাঁকে ধরতে পারছে না। তিনি বলেন, মহেশ ঠাকুরি ২০১০ সালের ২১ মে অভিযোগ করেন, ৪০০ জন অচেনা দুষ্কৃতী মদন তামাঙ্গকে হত্যা করে। ২০১৩-র ২৯ অগস্ট পুলিশ ৩৬ জনের নামে চার্জশিট দেয়। তাতে গুরুঙ্গের নাম আছে। মিলনবাবুর প্রশ্ন, প্রথম অভিযোগে ৪০০ অজ্ঞাত দুষ্কৃতীর কথা বলা ছিল। অথচ চার্জশিটে গুরুঙ্গের নাম ঢুকে গেল। এর থেকে বোঝা যায়, বর্তমান সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক টানাপোড়েন শুরু না হলে চার্জশিটে গুরুঙ্গের নাম আসত না।
এ দিন গুরুঙ্গ-কন্যা আইনজীবী নন্দা গুরুঙ্গও এজলাসে ছিলেন। পুলিশি সূত্রের খবর, ফেরার তালিকায় মোর্চা নেতা হরকাবাহাদুর ছেত্রী, রোশন গিরির নামও আছে। কোর্টের রায়ে মোর্চা শিবিরে স্বস্তি এসেছে। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন বলেন, “মিথ্যে মামলায় মোর্চা নেতাদের ফাঁসানো হয়েছিল। কোর্টের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।” গোর্খা লিগের সম্পাদক প্রতাপ খাতি অবশ্য বলেন, “এটা আইনি প্রক্রিয়া। জামিন মানেই কেউ নির্দোষ প্রমাণ হন না।”
সিপিআরএমের সাধারণ সম্পাদক তারামণি রাই বলেন, “রায় নিয়ে কিছু বলব না। তবে মোর্চা এবং তৃণমূলের যখন বন্ধুত্ব ছিল, তখন পুরনো মামলায় সমন জারি হল না। ভোটে দু’দলের বিচ্ছেদের পর পুরনো মামলাগুলিকে নাড়াচাড়া করার কারণ সকলেই বুঝছেন।” তৃণমূলের পাহাড় কমিটির মুখপাত্র বিন্নি শর্মা জানান, বিচারাধীন বিষয়ে তাঁরা মন্তব্য করবেন না।