গ্র্যাচুইটি সঙ্কট, পাঁচ দিনেই উত্তর মিলল মোদীর ‘দেখছি’

কেউ ছয় বছর কেউ বা দশ, অবসরের পরে কারও বা পেরিয়ে গিয়েছে দেড় দশক। বিস্তর দৌড়-ঝাঁপ করে বছর ঘুরে পেনশনের সামান্য টাকা হাতে পেলেও দক্ষিণবঙ্গের হুগলি, নদিয়া, হাওড়া কিংবা উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন চটকল থেকে অবসর নেওয়া শ্রমিকদের অধিকাংশেরই প্রাপ্য গ্র্যাচুইটির শিকে ছেঁড়েনি।

Advertisement

রাহুল রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৪ ০৩:২৯
Share:

কেউ ছয় বছর কেউ বা দশ, অবসরের পরে কারও বা পেরিয়ে গিয়েছে দেড় দশক।

Advertisement

বিস্তর দৌড়-ঝাঁপ করে বছর ঘুরে পেনশনের সামান্য টাকা হাতে পেলেও দক্ষিণবঙ্গের হুগলি, নদিয়া, হাওড়া কিংবা উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন চটকল থেকে অবসর নেওয়া শ্রমিকদের অধিকাংশেরই প্রাপ্য গ্র্যাচুইটির শিকে ছেঁড়েনি। পাওনার খোঁজে শ্রম দফতর আর সংশ্লিষ্ট চটকল মালিকের কাছে হত্যে দিয়ে পড়ে থেকেও লাভ হয়নি। অগত্যা শ্রমিক আদালত থেকে হাইকোর্টপা বাড়ান অনেকেই। অর্থাভাবে দীর্ণ শ্রমিকদের অনেকেই সে মামলা চালানোর খরচ জোগাড় করতে না পেরে হাত তুলে দিয়েছেন। অধরা গ্র্যাচুইটির স্বপ্ন নিয়ে নিশ্চুপে মারাও গিয়েছেন অনেকে।

শ্রমিকদের হয়ে সেই পাওনা সংক্রান্ত দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বারস্থ হয়েছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ‘আইনি সহায়তা কেন্দ্র’ নামে চন্দননগরের সেই সংস্থার কাছে পাঁচ দিনেই জবাব এসেছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে--‘আমরা বিষয়টা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।’ জানানো হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে শ্রমমন্ত্রককে খোঁজ-খবর করতে বলা হয়েছে। এত দ্রুত সাড়া মেলায় রাজ্যের প্রায় সাড়ে ত্রিশ হাজার গ্র্যাচুইটি না পাওয়া চটকল শ্রমিক আশায় বুক বেঁধেছেন।

Advertisement

রাজ্যের চার জেলায় ৫৯টি চটকলের বেশ কয়েকটিতে উৎপাদন স্তব্ধ। বন্ধ মিলের কয়েকটি গিয়েছে জমি-বাড়ির ব্যবসায়ীদের দখলে। বন্ধ মিলের সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিকই তাঁদের অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধার প্রায় কিছুই পাননি বলে অভিযোগ। চালু চটকলগুলিতের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের অধিকাংশের অভিজ্ঞতাও একই রকম। ‘অবসরপ্রাপ্ত জুটমিল শ্রমিক মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠনের সমীক্ষা বলছে, ৩০,৪০০ জন শ্রমিক তাদের গ্র্যাচুইটি পাননি। শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর মন্তব্য, “অবাক হব না সংখাটা আরও বেশি হলে। এ সমস্যা বাম আমলেও ছিল। ক্ষমতায় আসার পরে বর্তমান সরকারও সমস্যাটা একেবারে মিটিয়ে ফেলতে পারেনি। আমরা সদর্থক ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।” তিনি জানান, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের কাছ থেকে এ ব্যপারে অভিযোগ পাওয়া মাত্রই তা সংশ্লিষ্ট জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অভিযুক্ত চটকল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলাচনা করে সমস্যা মেটানোর দায় জেলা প্রশাসনেরই। কিন্তু সমস্যা কি মিটছে?

রাজ্যের পরিবেশ দফতরের প্রাক্তন মুখ্য আইন-অফিসার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরেই চটকল শ্রমিকদের বিনা পারিশ্রমিকে আইনি সহায়তা করছেন। চন্দননগরের ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে বিভিন্ন আদালতে মামলা লড়ছেন তিনিই। বিশ্বজিৎবাবুর অভিজ্ঞতা, “মন্ত্রীর সদর্থক চেষ্টা হয়তো আছে। কিন্তু তার দৌড় ওই জেলাশাসকের দফতর পর্যন্ত। চটকল মালিকেরা জেলা প্রশাসনের নির্দেশের তোয়াক্কাই করেন না। তাঁরা জানেন, মামলা যত প্রলম্বিত হবে শ্রমিকরা ততই পিছু হটবেন। অভাবী শ্রমিকদের মামলা চালানোর সামর্থ কোথায়?” এ বছরেই ৯০৭ জন চটকল শ্রমিকের হয়ে নিখরচায় মামলা করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন ওই আমলা। অভিযোগ, এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন তৎপর হয়ে ‘কড়া’ ব্যবস্থা নিলেই মালিক পক্ষ শ্রমিকদের পাওনা মেটানোর প্রশ্নে এতটা উদাসীন হত না। ইন্ডিয়ান জুটমিল অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে জানানো হয়েছে, “কাগজপত্র থাকলে শ্রমিকদের অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা পেতে দেরি হচ্ছে না।”

অবসরের সময়েও আবছা দৃষ্টিশক্তি ছিল গোন্দলপাড়া চটকলের নিমাই বোলেনের। ছেষট্টি বছরের নিমাইবাবুর চোখে এখন পূর্ণ-আঁধার। বলছেন, “গ্র্যাচুইটির টাকাটা পেলে অন্তত চিকিৎসা করাতে পারতাম।” হাতড়ে হাতড়ে ঘরেই হাঁটাচলা তাঁর।

অনিশ্চিত সেই পাওনা যেমন হাতড়ে চলেছেন তাঁর সহকর্মীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন