গণনায় অনিয়ম ঠেকাতে সরব বিরোধীরা

পুনর্নির্বাচনেও ‘চাপা সন্ত্রাস’! উত্তরের তিনটি এবং দক্ষিণের দু’টি— বৃহস্পতিবার দুই ২৪ পরগনার পাঁচটি বুথে পুনর্নির্বাচন হল নির্বিঘ্নেই। দক্ষিণের দু’টি কেন্দ্রে বিরোধী দলের এজেন্টদের দেখা যায়নি। এ বারও শাসক দলের বিরুদ্ধেই চাপা সন্ত্রাসের অভিযোগ তুললেন বিরোধীরা। অবশ্য ভোটদাতাদের উৎসাহে খামতি ছিল না।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৪ ০২:৪০
Share:

ভোটগণনার প্রস্তুতি। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। ছবি: সুদীপ আচার্য।

পুনর্নির্বাচনেও ‘চাপা সন্ত্রাস’!

Advertisement

উত্তরের তিনটি এবং দক্ষিণের দু’টি— বৃহস্পতিবার দুই ২৪ পরগনার পাঁচটি বুথে পুনর্নির্বাচন হল নির্বিঘ্নেই। দক্ষিণের দু’টি কেন্দ্রে বিরোধী দলের এজেন্টদের দেখা যায়নি। এ বারও শাসক দলের বিরুদ্ধেই চাপা সন্ত্রাসের অভিযোগ তুললেন বিরোধীরা। অবশ্য ভোটদাতাদের উৎসাহে খামতি ছিল না।

গত সোমবার রাজ্যের পঞ্চম তথা শেষ দফা নির্বাচনে যে ১৭টি কেন্দ্রে ভোট হয়, তার মধ্যে কম-বেশি দেড় হাজার বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিল বিরোধীরা। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে বৃহস্পতিবার যে পাঁচটি বুথে ভোট হল, তার মধ্যে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদের ২৫৩ নম্বর, হাড়োয়ার ১৪৫ নম্বর, অশোকনগরের ৮২ নম্বর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলার ২২৫ ও ২২৬ নম্বর বুথ।

Advertisement

প্রথমে ভোট এবং পরে পুনর্নির্বাচনের চিত্রের প্রেক্ষিতে আজ, শুক্রবার গণনার দিন বেনিয়মের আশঙ্কা করছে বিরোধীরা। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর আশঙ্কা, তৃণমূল যে ভাবে আগে থেকেই বলছে তারা ৩০-৩৫টার কমে আসন কিছুতেই পাবে না, তাতে গণনার সময়েও মানুষের রায়কে ধূলিসাৎ করার চেষ্টা হতে পারে। তাঁর অভিযোগ, গণনা কেন্দ্রে পুলিশের একাংশ শাসক দলের হয়ে পক্ষপাতমূলক কাজ করতে পারে। নির্বাচন কমিশনকে সক্রিয় ও সতর্ক থাকার দাবি জানিয়ে বিমানবাবু এ দিন বলেন, “ভোটদান প্রক্রিয়ায় ভোট লুঠ হয়েছে। গণনায় যাতে বেনিয়ম করে ফল আরও উল্টে দিতে না পারে, তার জন্য নজর রাখতে হবে।” গণনা কেন্দ্রে ইমার্জেন্সি বিদ্যুতের ব্যবস্থা, সিসিটিভি-সহ সব রকমের নজরদারি ব্যবস্থা রাখার দাবি করেছেন তিনি।

বিজেপি এবং কংগ্রেসেরও আশঙ্কা, গণনার দিন রাজ্য জুড়ে প্রশাসনের একাংশের সহায়তায় শাসক দল সন্ত্রাস চালাতে পারে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ভি এস সম্পত এবং উপ-নির্বাচন কমিশনার বিনোদ জুৎসিকে তাঁদের এই আশঙ্কার কথা জানিয়ে যথোচিত ব্যবস্থা নিতে বলেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান প্রদীপ ভট্টাচার্য। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহও জানিয়েছেন, তাঁরা গণনাকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে কমিশনকে চিঠি পাঠিয়েছেন। উত্তর ২৪ পরগনার পাঁচ বামফ্রন্ট প্রার্থী এ দিনই দাবি করেছেন, গণনায় কারচুপির আশঙ্কা দূর করতে কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। দমদমের প্রার্থী অসীম দাশগুপ্তের বক্তব্য, কিছু দিন আগে পঞ্চায়েতে কারচুপি এবং এ বার ভোট যে ভাবে হয়েছে, তা দেখেই তাঁরা গণনা নিয়ে এমন আশঙ্কা করছেন।

গণনার আগের দিন হাসনাবাদের সীমান্তবর্তী বেওকাটি স্কুলের বুথে এ দিন বেলা ১২টা পর্যন্ত বিরোধীদের কোনও এজেন্টই ছিল না। পরে সেখানে পর্যবেক্ষক যাওয়ার আগে সিপিআই এবং বিজেপি-র এজেন্ট বসলেও বাইরে একমাত্র তৃণমূলেরই বুথ ক্যাম্প ছিল। স্থানীয় বাম এবং বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, তৃণমূল সমর্থকদের হুমকির জেরেই তারা এজেন্ট দিতে পারেনি। ভোটদাতাদের কয়েক জনও জানান, ক’দিন ধরে তাঁদের হুমকি শুনতে হয়েছে। তবে তৃণমূলের দাবি, গরু পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য বন্ধের ব্যাপারে গ্রামবাসীরা যা চাইছেন, তা নিয়ে বিএসএফের সঙ্গে আলোচনা সদর্থক হওয়ায় গ্রামবাসীরা উৎসাহে ভোট দিয়েছেন। হাড়োয়ার তরফদারহাটি গ্রামে ১৪৫ নম্বর বুথে পুনর্নির্বাচনে অবশ্য বিরোধী দলের এজেন্টরা ছিলেন। সব মিলিয়ে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এই দু’টি বুথে ৭৯% ভোট পড়েছে।

আগের বার ইভিএম খারাপ থাকায় এ দিন পুনর্নির্বাচন হয় অশোকনগরের দক্ষিণ তালশা এলাকার ৮২ নম্বর বুথে। সে বার অবশ্য তৃণমূলের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোট এবং বুথে ভোটকর্মীদের ভয় দেখানোর অভিযোগ তুলেছিল সিপিএম। এ বারও বারাসত কেন্দ্রের ফরওয়ার্ড প্রার্থী মোর্তাজা হোসেনের অভিযোগ, “পুনর্নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে!” তাঁর অভিযোগ, আগের রাত থেকে শাসক দলের বাইক-বাহিনীর হুমকি চলেছে। সাধারণ মানুষ প্রথম দিকে কিছু ভোট দিতে পারলেও বেলা গড়াতেই আর ভয়ে বুথমুখো হতে পারেননি। অভিযোগ উড়িয়ে শান্তিতেই ভোট হয়েছে বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বিরোধী এজেন্টদের দেখা যায়নি দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত জীবনতলার ২২৫ ও ২২৬ নম্বর বুথে। ভোটের দিন ওই দুই বুথে ঢুকে ভোটারকে প্রভাবিত করার অভিযোগে ফারাক জমাদার নামে এক তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সরানো হয়েছিল দুই প্রিসাইডিং অফিসারকে।

আরএসপি প্রার্থী সুভাষ নস্করের বক্তব্য, শেষ দফার ভোটের পরে নানা জায়গায় তাঁদের এজেন্টদের মারধর, ঘরবাড়ি ভাঙচুর করেছে তৃণমূল। সুভাষবাবুর কথায়, “সেই ভয়েই এ বার এজেন্ট দিইনি।” প্রায় একই বক্তব্য এসইউসি প্রার্থী তরুণ মণ্ডলেরও। তবে দু’জনকেই এ দিন বুথে দেখা গিয়েছে। ক্যানিং-২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি সওকত মোল্লার অবশ্য দাবি, “ওরা এজেন্ট খুঁজে না পেয়ে আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করছে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন