গরিবের আইনি যুদ্ধে সব খরচই দিতে হবে সরকারকে

ধনী ও নির্ধন, বিচার ব্যবস্থা সকলের জন্যই। যাঁর টাকা আছে, শুধু তিনিই নিম্ন আদালত থেকে হাইকোর্ট হয়ে শীর্ষ আদালত পর্যন্ত যাবেন আর গরিব মানুষ নিছক অর্থাভাবে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন, এটা চলতে পারে না। বুধবার একটি পর্যবেক্ষণে এটা পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৪ ০৩:২৭
Share:

ধনী ও নির্ধন, বিচার ব্যবস্থা সকলের জন্যই। যাঁর টাকা আছে, শুধু তিনিই নিম্ন আদালত থেকে হাইকোর্ট হয়ে শীর্ষ আদালত পর্যন্ত যাবেন আর গরিব মানুষ নিছক অর্থাভাবে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন, এটা চলতে পারে না। বুধবার একটি পর্যবেক্ষণে এটা পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।

Advertisement

দুঃস্থেরা কী ভাবে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত লড়বেন, তার পথও বাতলে দিয়েছে উচ্চ আদালত। বুধবার একটি মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত নির্দেশ দেন, অর্থের অভাবে যাঁর ঠিকমতো দিন গুজরান হয় না, তিনিও যাতে বিচারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত না-হন, তা দেখতে হবে সরকারকেই। এবং গরিব মানুষকে শুধু এক জন আইনজীবী দিয়ে সাহায্য করলেই হবে না। তাঁর বাড়ি থেকে যাতায়াত, বড় শহরে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা-সহ মামলার যাবতীয় খরচ বহন করতে হবে সরকারকে।

মামলাটি ছিল স্টেট ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে অখিলবন্ধু সাহা নামে এক ব্যক্তির। দীর্ঘদিন লড়াই চালানোর পরে অখিলবাবু মামলায় জেতেন। হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এক বার মামলা লড়ে জীবনের প্রায় সব সঞ্চয় শেষ করে ফেলা অখিলবাবু সর্বোচ্চ আদালতে গিয়ে মামলা চালাবেন কী করে? সম্প্রতি হাইকোর্টের কাছে নতুন ভাবে আবেদন করে সেই প্রশ্নই তোলেন বৃদ্ধ। বিচারপতির কাছে তিনি সরাসরি জানান, এখন বাড়ি থেকে হাইকোর্টে আসার যে-খরচ, তাঁর পক্ষে সেটাও বহন করা সম্ভব নয়। তা হলে আপিল মামলায় লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি সুপ্রিম কোর্ট যাবেন কী করে?

Advertisement

অখিলবাবুর প্রকৃত অবস্থা খতিয়ে দেখে তাঁকে সাহায্য করার জন্য আইনজীবী প্রতীক ধরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। আর এক আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেছিলেন, তিনি যেন আদালত-বান্ধব হিসেবে কাজ করেন। এর পরে অখিলবাবুর সঙ্গে দীর্ঘ কথাবার্তা বলে প্রতীকবাবু আদালতে জানান, ব্যাঙ্কের সঙ্গে হাইকোর্টে মামলা চালাতে গিয়ে তাঁর মক্কেল কার্যত দেউলিয়া হয়ে গিয়েছেন। রোজগার কিছুই নেই। কাল কী খাবেন, তা-ও জানেন না।

সব শুনে বিচারপতি বলেন, তা হলে কি ধরে নিতে হবে কপর্দকশূন্য এক জন মানুষের বিচার পাওয়ার কোনও অধিকার নেই? সংবিধানের ৩৯(ক) ধারায় বলা আছে, অর্থবান ব্যক্তির পাশাপাশি দরিদ্রতম মানুষও বিচার পাওয়ার সমান অধিকারী। কখনও, কোনও মানুষকেই তাঁর আর্থিক অবস্থার নিরিখে বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত করা যায় না। তাঁর কথায়, এক জন গরিব মানুষের পক্ষে মফস্সলের কোনও শহর বা গ্রাম থেকে হাইকোর্টে এসে মামলা চালানো সম্ভব না-ও হতে পারে। তাঁকে যদি সুপ্রিম কোর্ট যেতে হয়, সেটা তো আরওই সম্ভব নয়।

অখিলবাবুর আবেদনের ভিত্তিতে জাতীয় লিগাল এড, রাজ্য লিগাল এড এবং হাইকোর্ট লিগাল এড সার্ভিসকে বিচারপতি বলেন, কোন ধরনের গরিব মানুষ সাহায্য পেতে পারেন, তার একটি নীতি তৈরি করা হোক। কীসের ভিত্তিতে সেই নীতি তৈরি হবে, তারও একটি ‘গাইডলাইন’ বা নির্দেশিকা দেন বিচারপতি। বলেন, সাহায্য করার জন্য শুধু আইনজীবী দিলেই হবে না। তাঁরা যাতে যাতায়াত, খাওয়া-দাওয়া, থাকা এবং মামলা চালানোর সব খরচ পান, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এই খরচ দিতে হবে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার এবং লিগাল এড-কে।

বিচারপতির মন্তব্য, এক জনের কাছে টাকা নেই বলে সারা জীবন মামলায় হেরেই চলবেন বা বিচারের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন না এটা সংবিধান-বিরোধী। তাই তাঁর লড়াই চালানোর উপযুক্ত ব্যবস্থা করাটা সরকারেরই দায়িত্ব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন