তিন বছর ধরে হাওড়া স্টেশনে ট্রলিতে করে যাত্রীদের মালপত্র বয়ে নিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে তাঁদের। যাঁদের পোশাকি নাম ‘রেলযাত্রী সেবক’। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের অন্তত ১৭৫ জন যুবক (যাঁরা এক সময়ে জমি-আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন) চুক্তির ভিত্তিতে ওই কাজ করেন। প্রতি বছরের গোড়ায় তাঁদের চুক্তি নবীকরণ হলেও এ বার হয়নি। ফলে, কাজ হারানোর আশঙ্কা করছেন তাঁরা। পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ ওই কাজ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং এ সংক্রান্ত নির্দেশও জারি করেছেন বলে তাঁদের দাবি। এই পরিস্থিতিতে কাজে পুনর্বহালের দাবিতে রবিবার দুপুর থেকে তাঁরা হাওড়া স্টেশনের ডেপুটি স্টেশন ম্যানেজারের ঘরের সামনে অবস্থানে বসেন।
‘রেলযাত্রী সেবক’দের সংগঠনের অন্যতম কর্তা দুধকুমার পাঁজা বলেন, “সিঙ্গুরে টাটাদের প্রকল্প এলাকায় আমাদের জমি গিয়েছে। টাকা নিইনি। হাওড়া স্টেশনে কাজ করে সংসার চলছিল। রেল চুক্তি নবীকরণ না করে কাজ বন্ধ করে দিতে চাইছে। এখন সংসার চালাব কী করে?” তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “যাঁরা এক সময়ে জমি রক্ষার আন্দোলন করেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করেছিলেন। ওঁদের আবার কাজে বহাল করা হোক।” বিদায়ী রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী অবশ্য জানিয়েছেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকার সময়ে ওই প্রকল্পটির কথা ঘোষণা করেছিলেন। ২০১১ সালে হাওড়া স্টেশনে তিনি প্রকল্পটির উদ্বোধনও করেন। একটি শ্রমিক সমবায়ের মাধ্যমে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়েছিল। যাত্রীদের থেকে রেল নির্ধারিত পারিশ্রমিক নেন। প্রাথমিক ভাবে এক বছরের চুক্তির ভিত্তিতে কাজ শুরু করেন ওই যুবকেরা। পরে রেল বোর্ড তাঁদের চুক্তির মেয়াদ প্রতি বছর পর্যায়ক্রমে বাড়িয়ে আসছিল।
প্রকল্পটিতে প্রথম থেকেই কাজ করছেন সিঙ্গুরের শী পাড়ার বাসিন্দা সব্যসাচী ধাওয়ার। টাটার প্রকল্প এলাকার তাঁদের সাড়ে চার বিঘে জমি গিয়েছে। তাঁর কথায়, “একবার মাল পৌঁছে ৩৫ টাকা করে পাই। প্রথম দিকে কাজ করতে গিয়ে রেলের কুলিদের থেকে মারও খেয়েছি। এখন সব ঠিকঠাক চলছিল। কেন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হল কিছুই জানতে পারলাম না।”
সিঙ্গুরের গোপালনগরের বাসিন্দা শ্রীকান্ত কোলেও বলেন, “প্রকল্প এলাকায় আমাদের জমি গিয়েছে। হাওড়া স্টেশনে কাজ করে সামান্য কিছু আয় হচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে আমাদের চলবে কী করে।” পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র অবশ্য দাবি করেছেন, “পরপর তিন বছর চুক্তি নবীকরণ হয়েছে। এ বারও হবে না, এমন কথা এখনও পর্যন্ত কেউ কিন্তু বলেননি।”