সারদা কাণ্ড

চেক নেবেন কি, পুলিশের খাঁই দেখেই মাথায় হাত

একে তো সারদা গোষ্ঠীতে টাকা রেখে প্রায় সর্বস্বান্ত হয়েছেন। এখন যদি বা কিছু টাকা ফেরত পাওয়ার উপায় হল, সেই চেক পাওয়ার আগে পুলিশের খাঁই মেটাতে বিপাকে পড়ছেন বহু আমানতকারী! পুলিশের বিরুদ্ধে উৎকোচের অপবাদ-অভিযোগ আদ্যিকালের। এখন সেই রক্ষকেরা রেহাই দিচ্ছে না সারদা গোষ্ঠীর ভরাডুবিতে ক্ষতিগ্রস্ত গরিব আমানতকারীদেরও।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৪ ০৩:২৪
Share:

একে তো সারদা গোষ্ঠীতে টাকা রেখে প্রায় সর্বস্বান্ত হয়েছেন। এখন যদি বা কিছু টাকা ফেরত পাওয়ার উপায় হল, সেই চেক পাওয়ার আগে পুলিশের খাঁই মেটাতে বিপাকে পড়ছেন বহু আমানতকারী!

Advertisement

পুলিশের বিরুদ্ধে উৎকোচের অপবাদ-অভিযোগ আদ্যিকালের। এখন সেই রক্ষকেরা রেহাই দিচ্ছে না সারদা গোষ্ঠীর ভরাডুবিতে ক্ষতিগ্রস্ত গরিব আমানতকারীদেরও। সারদা কাণ্ডের চেক নিতে গিয়ে পুলিশকে ঘুষ দিতে হচ্ছে বলে আমানতকারীরা অভিযোগ করছেন সারদা তদন্ত কমিশনের কাছে। আমানতকারীদের অভিযোগ, তাঁরা যথার্থ প্রাপক কি না, তা যাচাই করতে গিয়ে টাকা চাইছে পুলিশ। না-দিলে চেক মিলছে না। কমিশনে লিখিত ভাবে এই অভিযোগ জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তদের একাংশ। সারদা কাণ্ডে গঠিত কমিশনের চেয়ারম্যান, বিচারপতি শ্যামলকুমার সেন বুধবার বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট)-কে তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

সারদা সংস্থায় টাকা রেখে সর্বস্বান্ত হয়েছেন কয়েক লক্ষ আমানতকারী। তাঁদের দুর্দশার কথা ভেবে রাজ্য সরকার তিন সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করে। আর আমানতকারীদের আসল টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয় ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল। সেই তহবিল থেকেই প্রথমে গরিব আমানতকারীর জমানো টাকা চেকের মাধ্যমে ফেরত দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় সারদা কমিশনকে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের কাছে আমানতকারীর নামের তালিকা-সহ চেক পাঠানো হয়েছে। কিন্তু যাঁরা চেক পাবেন তাঁদের নাম-ঠিকানা যথার্থ কি না, তা যাচাই করা দরকার। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা যাচাইয়ের ভার দেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট থানাকে। অভিযোগ, এই যাচাইয়ের সুযোগে এক শ্রেণির পুলিশকর্মী ঘুষ চাইছেন। কমিশন সূত্রের খবর, সম্প্রতি উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে বেশ কয়েক জন আমানতকারী কমিশনে এই বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ওই অভিযোগকারীরা কমিশনকে অনুরোধ করছেন, তাঁদের নাম-ঠিকানা যেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ-প্রশাসনের কাছ থেকে গোপন রাখা হয়।

Advertisement

অভিযোগ পেয়ে সারদা কমিশনের কর্তারা বিচলিত। তাঁরা জানান, যাঁরা এখন টাকা ফেরতের চেক পাচ্ছেন, তাঁদের অধিকাংশ নিতান্তই গরিব। এবং বেশির ভাগই মহিলা। কমিশন সূত্রের খবর, তাঁদেরই এক দল এসেছিলেন টিটাগড়, সোদপুর, বেলঘরিয়া থেকে। কমিশনের কাছে তাঁদের আর্ত আবেদন, কোনও ভাবেই পুলিশ যেন তাঁদের নাম জানতে না-পারে। তা হলে জীবন বিপন্ন হতে পারে বলেও কমিশনের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা। অভিযোগ, পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশ কয়েকটি এলাকায় কিছু কিছু পুলিশকর্মী একই ভাবে টাকা চেয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে। একই ছবি দক্ষিণ ২৪ পরগনার কিছু এলাকাতেও। ওই সব চেক প্রাপকের নামধাম গোপন রেখেই অভিযোগ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানানো হয়।

কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামলবাবু এ দিন বলেন, “অভিযোগ মারাত্মক! খতিয়ে দেখা দরকার। তাই সিট (বিশেষ তদন্তকারী দল)-এর প্রধানের কাছে চিঠি পাঠানো হচ্ছে।” কমিশন সূত্রের খবর, রাজ্য পুলিশের ডিজি তথা সিটের প্রধান জিএমপি রেড্ডির কাছে চিঠি যাচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই দ্রুত তদন্ত করে দেখতে বলা হয়েছে। সিটের অন্যতম কর্তা তথা বিধাননগর কমিশনারেটের প্রধান রাজীব কুমার বলেন, “কমিশনের চিঠি এখনও দেখিনি। সেটা না-দেখে কিছু বলা যাবে না।”

টাকা ফেরত চেয়ে এ-পর্যন্ত সারদা কমিশনে কাছে আবেদন জানিয়েছেন ১৭ লক্ষ ৪১ হাজার জন। ইতিমধ্যেই চার লক্ষ আমানতকারীর চেক পাঠানো হয়েছে বিভিন্ন জেলায়। জেলাশাসকের অফিসের মাধ্যমেই তা আমানতকারীর হাতে পৌঁছনোর কথা। তার আগেই প্রাপকের পরিচয় খতিয়ে দেখার অছিলায় পুলিশ টাকা দাবি করছে বলে অভিযোগ উঠছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন