বাসে বাদুড়ঝোলা নিত্যযাত্রীরা

চিটফান্ড-এজেন্টদের রেল অবরোধে বহু ট্রেন বাতিল, দুর্ভোগ

সারদা-কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত এজেন্টদের তৈরি ‘চিটফান্ড সাফারার্স ইউনিট ফোরাম’-এর ডাকা রেল অবরোধের জেরে পূর্ব রেলের শিয়ালদহ, হাওড়া ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুরের বিভিন্ন শাখায় শুক্রবার সকালে প্রায় তিন ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়েছে। অবরোধ শুরু হয় সকাল ৭টা নাগাদ। দফায় দফায় তা চলে প্রায় সাড়ে ৯টা পর্যন্ত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৪ ০৩:১০
Share:

লগ্নিসংস্থার আমানতকারীদের ট্রেন অবরোধ। চাঁদপাড়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

সারদা-কাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত এজেন্টদের তৈরি ‘চিটফান্ড সাফারার্স ইউনিট ফোরাম’-এর ডাকা রেল অবরোধের জেরে পূর্ব রেলের শিয়ালদহ, হাওড়া ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুরের বিভিন্ন শাখায় শুক্রবার সকালে প্রায় তিন ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়েছে। অবরোধ শুরু হয় সকাল ৭টা নাগাদ। দফায় দফায় তা চলে প্রায় সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। অবরোধের ফলে দক্ষিণ পূর্ব রেলে হাওড়া-মুম্বই দুরন্ত এক্সপ্রেস-সহ বেশ কয়েকটি দূরপাল্লার ট্রেন আটকে পড়ে। এই অবরোধে বিপাকে পড়েন নিত্যযাত্রী-সহ বহু সাধারণ মানুষ।

Advertisement

পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, অবরোধের জেরে এ দিন বাতিল করতে হয়েছে ১৯টি লোকাল ট্রেন। এ ছাড়া, ৩২টি লোকাল ট্রেন গড়ে ৩৫ মিনিট দেরিতে চলাচল করেছে। তবে পূর্ব রেলের কোনও দূরপাল্লার ট্রেনে এই অবরোধের বিশেষ প্রভাব পড়েনি বলে দাবি করেছেন রেল কর্তৃপক্ষ। পূর্ব রেল সূত্রের খবর, অবরোধ হয়েছে শিয়ালদহ মেন লাইনের আগরপাড়া, শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার গড়িয়া ও বনগাঁ শাখার চাঁদপাড়া, হাবড়া, হাড়োয়া এবং বিরাটি স্টেশনে। হাওড়া-তারকেশ্বর শাখার মালিয়া হল্ট স্টেশনেও এ দিন সারদা-কাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখান বহু মানুষ।

অন্য দিকে, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর শাখার মৌড়িগ্রাম স্টেশনে এ দিন সকাল থেকেই রেল অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন প্রায় শ’খানেক স্থানীয় বাসিন্দা। স্টেশন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা এসে ওই অঞ্চলে এ দিন অবরোধ শুরু করেন সকাল পৌনে ৮টা নাগাদ। অবরোধ চলে সকাল ৮টা ৩৮ মিনিট পর্যন্ত। এই অবরোধের জেরে হাওড়া-মুম্বই দুরন্ত এক্সপ্রেস-সহ চারটি দূরপাল্লার ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে বেশ কিছুক্ষণের জন্য আটকে পড়ে। ওই শাখায় আপ ও ডাউন মিলিয়ে চারটি ট্রেন বাতিলও করতে হয়েছে। বেশ অনেকক্ষণ দেরিতে চলেছে ১৪টি লোকাল ট্রেন। বেলা ১১টার পরে ওই শাখায় আবার ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয় বলে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার মে দিবসের ছুটি ছিল। ছুটির পরের দিন স্বাভাবিক ভাবেই ট্রেনে খানিকটা বেশি ভিড় হয়। ছুটি কাটাতে বাড়ি আসা অনেকেরই সময় মতো কাজের জায়গায় পৌঁছে যাওয়ার তাড়া থাকে। এ দিকে এ দিন বিভিন্ন স্টেশনে অবরোধ শুরু হয়ে যায় সকাল ৭টা থেকেই। যার জেরে ট্রেন না পেয়ে শহরতলির বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়েন বহু যাত্রী। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরে অনেকেই ট্রেনের আসা ছেড়ে সড়ক পথে যাওয়ার চেষ্টা করেন। একে গরম, তার উপরে বাসে বাদুড়ঝোলা ভিড়ে সাত সকালেই নাভিশ্বাস ওঠে যাত্রীদের।

বিক্ষোভকারীদের দাবি, এই অবরোধের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল ১৪ দিন আগেই। আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল, সাহারা-কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশিত পথে তাড়াতাড়ি এই সমস্যার সমাধান করতে হবে, আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে হবে, এজেন্টদের সুরক্ষা ও কর্মসংস্থান করতে হবে এবং প্রতারক মালিকদের গ্রেফতার করে বেআইনি অর্থলগ্নি কারবার নিষিদ্ধকরণ করতে হবে। যে সব মানুষ এই কেলেঙ্কারির জেরে আত্মহত্যা করেছেন, তাঁদের পরিবারের জন্য আর্থিক সাহায্যও দাবি করেছেন আন্দোলনকারীরা।

যাত্রীদের বক্তব্য, এর আগেও শিয়ালদহ মেন লাইনে একটি জুট মিলে শ্রমিকদের ডাকা রেল অবরোধ চলেছিল প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে। সে দিনও রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসন এবং রেল কর্তারা ছিলেন নির্বিকার। এ দিনও পুলিশ-প্রশাসন বা রেলের কর্তারা ছিলেন নিরুত্তাপ। তবে যে কারণে এ দিনের ট্রেন অবরোধ, সেই সারদা কেলেঙ্কারিতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় দলীয় কর্মীরা তা ভাল চোখে দেখেননি। অভিযোগ উঠেছে, অবরোধ শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই কিছু তৃণমূল সমর্থক গড়িয়া স্টেশনে এসে অবরোধকারীদের লাঠিপেটা করে তুলে দেন।

আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, দাবি পূরণ না হলে বা সারদা কেলেঙ্কারির কোনও সুরাহা না হলে ফের এ ধরনের আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন