চাঁদা উঠছে কি, নজরদারি শুরু হল সিপিএমে

বিধানসভা ভোটের আগে দলের গণভিত্তি ফিরে পেতে পুরনো কৌশলেই জোর দিচ্ছে সিপিএম। সরকারে থাকাকালীন বাড়ি বাড়ি ঘুরে দলের জন্য চাঁদা তোলা প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল সিপিএমে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে জনসংযোগ বাড়াতে প্রায় আড়াই বছর আগেই পুরনো ওই ব্যবস্থা ফিরতে শুরু করেছিল দল।

Advertisement

স্বপন সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৪৩
Share:

বিধানসভা ভোটের আগে দলের গণভিত্তি ফিরে পেতে পুরনো কৌশলেই জোর দিচ্ছে সিপিএম।

Advertisement

সরকারে থাকাকালীন বাড়ি বাড়ি ঘুরে দলের জন্য চাঁদা তোলা প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল সিপিএমে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে জনসংযোগ বাড়াতে প্রায় আড়াই বছর আগেই পুরনো ওই ব্যবস্থা ফিরতে শুরু করেছিল দল। কিন্তু তাতেও খুব একটা কাজ হয়নি। অনেক সময়েই ফাঁকিবাজির অভিযোগ উঠেছে। ফলে, এ বার চাঁদা-ব্যবস্থা জোরদার করতে খাতা-ব্যবস্থা চালু করেছে সিপিএম। এতে কে কবে কোথায় চাঁদা তুলতে যাচ্ছেন, তা খাতায় লিখে দলীয় নেতৃত্বকে জানাতে হচ্ছে। আলোচনার ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রের খবর।

সিপিএম নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, বাড়ি বাড়ি ঘুরে চাঁদা সংগ্রহ দীর্ঘ দিনের রেওয়াজ। ক্ষমতায় থাকাকালীন সেই রেওয়াজে ভাটা পড়ায় দল মানুষের থেকে দূরে সরেছিল। মানুষের মন বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল। সব মিলিয়ে সংগঠন দুর্বল হয়েছে। ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটে পরাজয় সে সবেরই পরিণতি। সে জন্য এখন দলের প্রথম কাজ গণভিত্তি মজবুত করা। যাঁরা বাম শিবির ছেড়ে তৃণমূল বা বিজেপি-তে চলে গিয়েছেন, তাঁদেরও মন জয় করে ফিরিয়ে আনা। সে জন্যই চাঁদা তোলায় এত জোর দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

প্রসঙ্গত, গণভিত্তি ফেরাতে সিপিএম এখন চাঁদার মতোই বাড়ি বাড়ি ঘুরে রুটি সংগ্রহ, কর্মসূচির জন্য দলীয় কার্যালয়ে বা কোনও কর্মীর বাড়িতে থাকা— এ সবেও জোর দিচ্ছে। ১৯৭৭ সালে ক্ষমতায় আসার আগে দলীয় সমাবেশে যোগদানকারীদের জন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরে রুটি সংগ্রহ করতেন সিপিএম কর্মীরা। যাঁরা রুটি দিতে পারতেন না, তাঁরা অর্থ দিতেন। এই কাজের জন্য এলাকা ভিত্তিতে নির্দিষ্ট দলীয় কর্মীদের দায়িত্ব দেওয়া হতো। সংগৃহীত রুটি প্যাকেট সমাবেশের দিন সকালেই পৌঁছে যেত গ্রাম থেকে আসা মানুষের হাতে। ক্ষমতায় আসার পরেও বেশ কয়েক বছর এই রেওয়াজ চলেছিল। পরে রীতি বদলে সমাবেশ-স্থলেই রান্নার ব্যবস্থা হয়। একটা পিকনিক পিকনিক ভাব আসে।

এক সময়ে সিপিএম নেতৃত্ব কর্মীদের নির্দিষ্ট ‘ডোনার’ তৈরি করার নির্দেশ দিতেন, যিনি প্রতি মাসে নির্দিষ্ট হারে দলীয় তহবিলে অর্থ দিয়ে যাবেন। উদ্দেশ্য ছিল— সেই ‘ডোনার’কে ভবিষ্যতে দলের সক্রিয় সদস্য হিসেবে গড়ে তোলা। কিন্তু দীর্ঘ কাল ক্ষমতায় থাকার পরে সিপিএমের ওই ‘ডোনার’ তালিকায় সাধারণ গৃহস্থের বদলে প্রোমোটার-ঠিকাদারই বেশি ঢুকে পড়েছিলেন! এখন ঠেলায় পড়ে পুরনো পন্থায় ফিরছে সিপিএম। জাঠায় অংশগ্রহণকারীদেরও জেলায় জেলায় দলীয় কার্যালয়ে বা স্থানীয় কর্মীদের বাড়িতে রাত কাটাতে হচ্ছে।

সিপিএম সূত্রের খবর, এখন মানুষের কাছে গিয়ে অর্থ সংগ্রহ ঠিক ভাবে করা হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে নজরদারি করতে বুথ-ভিত্তিক দল গঠন হয়েছে। অর্থ সংগ্রহের হিসেব চির কালই হতো। এ বার মূলত জোর দেওয়া হচ্ছে, কর্মীদের মধ্যে কারা কারা এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছেন, তার উপর। কত জনের সঙ্গে যোগাযোগ হল, যাচাই করা হচ্ছে। খাতায় লেখা থাকছে, যে পরিবারে যাওয়া হয়েছিল, তার কর্তার নাম, তিনি কত টাকা দিলেন, দলের কোন কোন কর্মী সেই অর্থ সংগ্রহ অভিযানে সামিল হয়েছিলেন ইত্যাদি। সংগ্রহকারী দলের নেতাকে শাখা সম্পাদকের কাছে ওই রিপোর্ট দিতে হচ্ছে।

দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘দল ক্ষমতায় থাকাকালীন বাড়ি বাড়ি ঘুরে অর্থ সংগ্রহে গাফিলতির ফলে তহবিলের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হত না। তখন কর্মীরা স্থানীয় ব্যবসায়ী বা কয়েক জন সচ্ছল মানুষের থেকে টাকা নিয়ে সেটা পূরণ করতেন। নেতারা এটা বুঝেও পরিস্থিতি বদলাতে পারেননি। ক্ষমতায় থাকার ফলেই এই সুবিধাবাদিতা বেশি করে চেপে বসেছিল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন