চিহ্নিতই হয়নি কেউ, গণপ্রহারে অভিযুক্তরা অধরা

গোটা ঘটনাটি ঘটেছে পুলিশের সামনেই। কিন্তু পুলিশের যে সব কর্মী রবিবার সভামঞ্চের কাছে ছিলেন, তাঁরা কেউই গণপিটুনিতে অভিযুক্ত তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের চিহ্নিতই করতে পারেননি! এমনকী ঘটনার পরে দু’দিন কেটে গেলেও তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চণ্ডীপুরের ওই সভার ভিডিও ফুটেজ পরীক্ষা করতে পারেনি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৪
Share:

এ ভাবেই মারা হয়েছিল দেবাশিসকে। ফাইল চিত্র

গোটা ঘটনাটি ঘটেছে পুলিশের সামনেই। কিন্তু পুলিশের যে সব কর্মী রবিবার সভামঞ্চের কাছে ছিলেন, তাঁরা কেউই গণপিটুনিতে অভিযুক্ত তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের চিহ্নিতই করতে পারেননি! এমনকী ঘটনার পরে দু’দিন কেটে গেলেও তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চণ্ডীপুরের ওই সভার ভিডিও ফুটেজ পরীক্ষা করতে পারেনি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ।

Advertisement

তাই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চড় মারার পরে দেবাশিস আচার্যকে গণপ্রহারের ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয়দের বিরুদ্ধেই অভিযোগ থেকে গিয়েছে। এবং অভিযুক্তরা যে হেতু অজ্ঞাতপরিচয়, তাই তাদের গ্রেফতার করার হ্যাপাও পোহাতে হচ্ছে না জেলা পুলিশকে!

নবান্নের নির্দেশে পুলিশকে ফের এ ভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে দেখে বাহিনীর নিচুতলা কিন্তু যারপরনাই লজ্জিত। এক ইনস্পেক্টরের মন্তব্য, “ওই দিন মঞ্চে বসেছিলেন তিন জন বিধায়ক। তাঁদের চোখের সামনে গোটা ঘটনাটি ঘটেছে। ওই বিধায়কদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই পুলিশ ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ অভিযুক্তদের অনেকের নামই জানতে পারত।”

Advertisement

কিন্তু শুধু ওই তিন বিধায়ক কেন, সে দিন মঞ্চে থাকা কোনও তৃণমূল নেতা-কর্মীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেনি পুলিশ। কেন? পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন বলেন, “আমরা ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখছি। হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে তদন্ত চলছে।”

সে দিন দেবাশিসকে দলীয় কর্মীদের মার থেকে বাঁচাতে গিয়ে জখম হয়েছিলেন চণ্ডীপুরের তৃণমূল বিধায়ক অমিয়কান্তি ভট্টাচার্য। সে দিনের সভা পরিচালনার দায়িত্ব ছিল তাঁর উপরেই। তিনি দেবাশিসের নিগ্রহকারীদের একেবারে কাছ থেকে দেখেছেন। একজন বিধায়ক হিসেবে নিগ্রহকারীদের শনাক্ত করে তাঁর কি পুলিশের কাজে সাহায্য করা উচিত ছিল না?

অমিয়বাবু বলেন, “গণধোলাইয়ের ঘটনাটি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। এ ক্ষেত্রে সব দিক বিবেচনা করেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে আমার মত।”

সে দিন মঞ্চে উপস্থিত অনেক স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীই নৃশংস ভাবে দেবাশিসকে পিটিয়েছিলেন। ভিডিও ফুটেজে সেই দলে যুব তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি আনিসুর রহমানকেও দেখা গিয়েছে। আনিসুর এ দিন বলেন, “আমি ওই যুবককে মারার জন্য মারিনি। তবে ও যখন অভিষেকের উপর চড়াও হল, তখন ওই ছেলেটিকে কাবু করতেই লাথি মেরেছিলাম। তার পর কিন্তু আমি ওই যুবককে উদ্ধারের চেষ্টা করেছিলাম।”

তবে কেন আপনাদের কোনও নেতা-কর্মীকে চিহ্নিত করতে পারছে না পুলিশ? আনিসুরের জবাব, “পুলিশ আইনমাফিক ব্যবস্থা নেবে। আমিও আইনের ঊর্ধ্বে নই।”

রবিবারের ঘটনায় মোট তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে। প্রথমটি অভিষেককে চড় মারার ঘটনায় খুনের চেষ্টার মামলা, দ্বিতীয়টি দেবাশিসকে গণধোলাইয়ের ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েক জনের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের চেষ্টার মামলা এবং তৃতীয়টি পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় খুনের চেষ্টা ও থানা ভাঙচুরের মামলা। প্রথম মামলায় দেবাশিস গ্রেফতার হলেও বাকি দু’টি মামলায় মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি।

তবে তমলুক মহকুমা আদালত সূত্রের খবর, নিয়মমাফিক তিনটি মামলাই সেখানে পাঠানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন