চটকল ঘিরে অশান্তির পরিবেশ সামাল দিতে দলের বিধায়কদের সক্রিয় হতে নির্দেশ দিল তৃণমূল। হুগলির নর্থব্রুক জুট মিলের সিইও-র খুনের ঘটনার পর চটকল এলাকায় শ্রমিকদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ গড়ে তুলতে বলা হয়েছে স্থানীয় বিধায়কদের।
দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বৃহস্পতিবার বিধানসভায় তাঁর ঘরে হুগলি নদীর দু’পারে যে সব চটকল রয়েছে, সেই এলাকার বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক করেন শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। বৈঠকে সরকার পক্ষের মুখ্যসচেতক তথা তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, পরিবহন মন্ত্রী তথা কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র-সহ ২৩ জন বিধায়ক ছিলেন। পরে পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, “নর্থব্রুক জুটমিলের মতো ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য প্রত্যেক বিধায়ককে তাঁর এলাকার জুটমিলের ব্যাপারে দায়িত্ব নিতে হবে।”
শ্রমিকদের আক্রমণে সিইও-র মৃত্যুর পরে ভদ্রেশ্বরের নর্থব্রুক বন্ধ হয়। তারপরে আরও চারটি মিল বন্ধ হয়েছে। প্রত্যেক মিলেই অতিরিক্তপণ্য মজুত হয়ে গিয়েছে বলে মালিক পক্ষের দাবি। মিল চালু রাখতে কাজের শিফ্ট কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত শ্রমিকরা মানতে নারাজ। শিফটের সংখ্যা বাড়াতে প্রয়োজন চটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়ানো। চটের ব্যাগ বা বস্তার ব্যবহার বাড়াতে কেন্দ্র যাতে বরাত দেয় সে জন্য রাজ্য থেকে তৃণমূলের সাংসদ ও বিধায়কদের এক প্রতিনিধি দল দিল্লিতে পাঠানোর সুপারিশ করা হয় বৈঠকে। মুখ্যমন্ত্রী এ ব্যাপারে সবুজ-সঙ্কেত দিলেই সংসদের চলতি অধিবেশনে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল দিল্লিতে যাবে বলে শোভনদেববাবু জানান। পাট শিল্পের উপরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে রাজ্যের ৪০ লক্ষ মানুষ নির্ভর করেন এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “কেন্দ্র যাতে প্লাস্টিক লবির চাপের কাছে পুরোপুরি নতিস্বীকার না করে পরিবেশ-বান্ধব চট ব্যবহারের উপরে জোর দেয়, তার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে হবে।” কলকাতার কেন্দ্রীয় সংস্থা জুট বোর্ডের সঙ্গেও তাঁরা কথা বলবেন। বস্তুত, এই দ্বিমুখী পদক্ষেপ নিয়ে আপাতত রাজ্যের চটকলগুলিকে চালু রাখতে চাইছে সরকার।
সরকার যে কোনও ভাবেই শ্রমিক আন্দোলনের নামে চটকলে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা মেনে নেবে না তা স্পষ্ট করে দিয়ে পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, “শ্রমিক আন্দোলনের নামে হঠাৎ হিংসাত্মক বিক্ষোভ মানা হবে না। শ্রমিকদের জটিল ও গভীর সমস্যাও আলোচনায় মেটাতে হবে।” চটকলে অশান্তি সৃষ্টির পিছনে বাম,বিজেপি-সহ বিরোধীদের হাত দেখছে সরকার। শ্রমমন্ত্রীর অভিযোগ, “চালু চটকলগুলি অশান্ত করার পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি কাজ করছে। শ্রমিকদের উত্তপ্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্থানীয় বিধায়কদের।” চটকল কর্তৃপক্ষ যাতে শ্রমিকদের পিএফ, গ্র্যাচুইটি-সহ ন্যূনতম মজুরি দেয় রাজ্য তা দেখবে বলেও মন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, “মালিক পক্ষকে আলোচনায় ডেকেছি। কয়েক দিনের মধ্যেই অকল্যান্ড ও ওয়েভারলি জুট মিল খুলে যাবে।”
এ দিন বৈঠকে স্থানীয় চটকল ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘো ষ, ভাটপাড়ার অর্জুন সিংহ ছিলেন, তেমনই ছিলেন সরাসরি ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত নন এবং চটকল এলাকার বাসিন্দা নন বরাহনগরের বিধায়ক তাপস রায়, জগদ্দলের পরশ দত্ত বা চাঁপদানির মুজফফর খানের মতো বিধায়করাও। ঠিক হয়েছে, এতদিন যে সব বিধায়ক জুট মিলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, তাঁদেরও এখন থেকে নিয়মিত মিল এলাকায় গিয়ে শ্রমিকদের অভাব-অভিযোগ শুনতে হবে। তাঁদের বোঝাতে হবে, অসন্তোষের কারণে যদি মিল বন্ধ হয়ে যায়, তা হলে শ্রমিকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বিভিন্ন চটকলে তৃণমূলের একাধিক ইউনিয়ন। ফলে দখলদারি নিয়ে সংঘাতের সৃষ্টি হচ্ছে। পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, “সকলকে বুঝতে হবে দল একটা। পতাকা একটা। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কোনও ভাবেই এই কার্যকলাপ বরদাস্ত করা হবে না।”
এ দিনই বিসিএমইউ, এনইউজেডব্লিউ-সহ ২০টি শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে নর্থব্রুকের ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করা হয়েছে।