বাংলাদেশে মিশে যাওয়া ভারতীয় ছিটমহলগুলির বাসিন্দাদের চাপ দিয়ে অপশন দেওয়ানোর অভিযোগ পেয়ে প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠাল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে এই নির্দেশ পাঠিয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে। একই নোটিস দেওয়া হয়েছে কোচবিহার ও জলপাইগুড়ির জেলাশাসক এবং অসমের মুখ্যসচিবকেও। কমিশনের পক্ষে বিবৃতি দিয়ে মঙ্গলবার এই খবর জানানো হয়েছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বলেছে— দু’দেশের মধ্যে চুক্তিতে বলা হয়েছে, ছিটমহল বিনিময়ের পরে সেখানকার বাসিন্দাদের পছন্দ অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ ভাবে নাগরিকত্ব বেছে নিতে দেওয়া হবে। তারা দেশ পরিবর্তন করতে চাইলে ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট ও নিরাপত্তা দিয়ে সে কাজে সাহায্য করা হবে। এই পরিস্থিতিতে নির্যাতন ও চাপ সৃষ্টির অভিযোগগুলি সত্য হলে তা শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘনই নয়, আন্তর্জাতিক এই চুক্তিরও পরিপন্থী হবে।
কুচলিবাড়ি সংগ্রাম কমিটি ও ইন্ডিয়ান এনক্লেভ্স পিপল্স কমিটি বিষয়টি নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল। সংগ্রাম কমিটির আইনজীবী জয়দীপ রায় অভিযোগ করেন, ভারতীয় ছিটমহলের যে সব বাসিন্দা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিতে অনিচ্ছুক ছিলেন, বাংলাদেশের শাসক দলের অনুগামীরা তাঁদের অনেককেই ভয় দেখিয়ে জোর করে অন্য বিকল্প বেছে নিতে বাধ্য করেছে। এমনকী তাঁদের মেয়ে-বউকে ধর্ষণ করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। অনেকের অপশনের কাগজ ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। সংগ্রাম কমিটির আর এক আইনজীবী বিষ্ণু জৈন বলেন, যাঁরা ভারতে আসার অপশন দিয়েছেন, তাঁদেরও নানা হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। বিদেশ মন্ত্রক তাঁদের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করতে চার মাস সময় নিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা খুন হয়ে যেতে পারেন— এমন আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন। সেই সব অভিযোগই সংগ্রাম কমিটি মানবাধিকার কমিশনের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। বিদেশমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরেও তাঁরা চিঠি দিয়েছিলেন।
তবে সমীক্ষার দায়িত্বে থাকা বিদেশ মন্ত্রকের এক অফিসার জানিয়েছেন, অভিযোগ পেয়ে ভারতীয় ছিটমহলগুলির বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁরা খোঁজ নিয়েছিলেন। কিন্তু এ ধরনের অভিযোগ তাঁদের কাছে কেউ করেনি। ওই কর্তার অভিযোগ— ছিটমহল মুছে যাওয়ায় চোরাচালান বন্ধ হয়ে যাবে। তাই একটি মহল এ কাজে বাধা দিতে তৎপর হয়েছে। তারাই এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে ধরণা করা হচ্ছে।