ছিনতাই, দিনভর বন্ধ বর্ধমান-বীরভূম বাস

মেয়েকে বি এড-এ ভর্তি করাতে নিয়ে যাচ্ছিলেন বাবা। মাঝপথে আচমকা এক যুবক টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। অভিযোগ, ওই যুবককে বাস থেকে নামতে না দেওয়ার অনুরোধ সত্ত্বেও বাসকর্মীরা তাকে নামিয়ে দেন। পরে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা বাসটি আটকে কন্ডাক্টরের কাছ থেকে পাল্টা টাকা ছিনিয়ে নেন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হলেও রবিবার দিনভর বন্ধ রইল বর্ধমান ও বীরভূমের মধ্যে পানাগড়-মোরগ্রাম রাজ্য সড়ক ধরে যাতায়াতকারী সমস্ত বাস। বিপাকে পড়লেন দুই জেলারই কয়েকশো যাত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৩৯
Share:

মেয়েকে বি এড-এ ভর্তি করাতে নিয়ে যাচ্ছিলেন বাবা। মাঝপথে আচমকা এক যুবক টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। অভিযোগ, ওই যুবককে বাস থেকে নামতে না দেওয়ার অনুরোধ সত্ত্বেও বাসকর্মীরা তাকে নামিয়ে দেন। পরে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা বাসটি আটকে কন্ডাক্টরের কাছ থেকে পাল্টা টাকা ছিনিয়ে নেন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হলেও রবিবার দিনভর বন্ধ রইল বর্ধমান ও বীরভূমের মধ্যে পানাগড়-মোরগ্রাম রাজ্য সড়ক ধরে যাতায়াতকারী সমস্ত বাস। বিপাকে পড়লেন দুই জেলারই কয়েকশো যাত্রী। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, কাঁকসা থানাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই সংশ্লিষ্ট সংস্ত পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসে সমস্যা মেটানো হবে।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সকালে কাঁকসার ত্রিলোকচন্দ্রপুরের বাসিন্দা কৃপাময় মণ্ডল মেয়ে মনীষাকে বিএড-এ ভর্তি করাতে উদ্ধারণপুর থেকে আসানসোলগামী একটি বাসে ওঠেন। সঙ্গে একটা ব্যাগে বেশ কয়েক হাজার টাকাও ছিল। অভিযোগ, বাসটি বাঁশকোপার কাছাকাছি আসতেই এক যুবক নিমেষে ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে বাসের দরজার দিকে এগোতে থাকে। কৃপাময়বাবুর দাবি, ভিড় থাকায় নিজে এগোতে না পারলেও ওই যুবককে চিনে ফেলেন তিনি। বাসকর্মীদের অনুরোধও করেন ওই যুবককে যেন না নামতে দেওয়া হয়। তল্লাশি নিয়ে তারপরে বাস থেকে নামতে দেওয়ার আর্জিও জানান। কিন্তু বাসকর্মীরা সে কথায় কর্ণপাত না করে দুর্গাপুরের মুচিপাড়ার কাছে ওই যুবককে নামিয়ে দেয় বলে কৃপাময়বাবুর অভিযোগ। ফিরে এসে গ্রামে ঘটনাটি জানান তাঁরা। বিকেলে বাসটি আসানসোল থেকে ফেরার সময় ত্রিলোকচন্দ্রপুরে স্থানীয় বাসিন্দারা সেটি আটকে দেন বলে অভিযোগ। এমনকী কয়েকজন গ্রামবাসী বাসের কন্ডাক্টরের কাছে থাকা নগদ টাকাও ছিনিয়ে নেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় কাঁকসা থানার পুলিশ। বাসকর্মী ও গ্রামবাসীদের থানায় নিয়ে আসা হয়। সেখানে গ্রামবাসীদের ওই টাকা ফিরিয়ে দিতে বলে পুলিশ। অন্য দিকে, কৃপাময়বাবুর অভিযোগের তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেয়। এরপরেই গ্রামবাসীরা টাকা ফেরত দিয়ে চলে যান। পুলিশ বাস-সহ বাসের কর্মীদের ইলামবাজার থানা এলাকায় পৌঁছে দেয়।

পরে রবিবার সকালে হঠাত্‌ বাস বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে যাত্রীদের অভিযোগ। তাঁরা জানান, বহুক্ষণ অপেক্ষার পরে তাঁরা বুঝতে পারেন বাস চলছে না। গুটিকয়েক সরকারি বাস, লরি ভরসা করে কোনও রকমে গন্তব্যে পৌঁছন তাঁরা। পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বীরভূমের সিউড়ি, বোলপুর প্রভৃতি জায়গা থেকে বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোলগামী প্রায় ৮০টি বাস এ দিন বন্ধ ছিল।

Advertisement

কিন্তু পুলিশের হস্তক্ষেপে বিষয়টি মিটে যাওয়ার পরেও বাস বন্ধ রাখা হল কেন? আইএনটিটিইউসি প্রভাবিত ‘বীরভূম জেলা সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়ন’ -এর সম্পাদক জানেরুল মল্লিকের দাবি, “বাস কর্মীরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। সেই কারণেই এ দিন বাস বন্ধ রাখা হয়েছে।” তাঁর অভিযোগ, কন্ডাক্টরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকাও ফেরত দেননি গ্রামবাসীরা। পুলিশ অবশ্য জানেরুল মল্লিকের দাবি ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে। বর্ধমান জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “কাঁকসা থানার মধ্যস্থতায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা হবে। পাশাপাশি, ত্রিলোকচন্দ্রপুরের ওই পরিবারটির অভিযোগও যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হবে।” দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

তবে টাকা ছিনতাই, পাল্টা বাস আটকানো, বাস বন্ধ সবের শেষে হতাশ মনীষা বলেন, “আমার বাবার সামান্য রোজগার। বি এড পড়ে চাকরি পাব ভেবেছিলাম। কিন্তু ফের ভর্তির অর্থ জোগাড় করা কার্যত অসম্ভব। স্বপ্ন বোধহয় অধরাই রয়ে গেল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন