জোট হলে আসন-সঙ্কট, চিন্তায় তিন বাম শরিক

কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে দিল্লিতে যখন সিপিএম বৈঠকে বসছে, তখন ভাগের আসন হারানো নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তিন শরিক দলের কপালে!

Advertisement

প্রসূন আচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:০৪
Share:

কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে দিল্লিতে যখন সিপিএম বৈঠকে বসছে, তখন ভাগের আসন হারানো নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তিন শরিক দলের কপালে!

Advertisement

কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের জন্য ভাগের আসন হারালে নিজেদের সংগঠনের কী হবে? এই প্রশ্নে শরিক দলের নেতারা অত্যন্ত চিন্তিত। সব চেয়ে বেশি চিন্তা আরএসপি-র। তার পরে ফরওয়ার্ড ব্লক এবং সিপিআইয়ের। এই দলের নেতারা বলছেন, রাজ্য থেকে তৃণমূলকে হঠাতে যদি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হয়, তা হলে সংগঠনের মূল্যে তাঁদের ‘আত্মবলিদান’ দিতে হবে। কী ভাবে এই সমস্যার মোকাবিলা করা যাবে, তা নিয়ে শরিক নেতারা এখনও কিছুই ভেবে উঠতে পারছেন না। শুধুই মাথা চুলকোচ্ছেন!

আরএসপি এখনও যেখানে প্রাসঙ্গিক, তার মধ্যে মুর্শিদাবাদ জেলায় ২০১১ সালের ভোটে কংগ্রেসের কাছে তারা ৭টি আসনে হেরেছিল। জিতেছিল একটিতে। জোটের স্বার্থে কংগ্রেসের গত বারের জেতা সব ক’টি আসন যদি তাদের ছেড়ে দিতে হয়, তা হলে তাঁরা সমস্যায় পড়বেন জানিয়ে আরএসপি নেতা মনোজ ভট্টাচার্য় বলেন, ‘‘ভোটে না লড়লে এই জেলায় কী ভাবে সংগঠন ধরে রাখা যাবে, তা বড়ই চিন্তার কারণ।’’ দলের রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামী গত বার আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে কংগ্রেসের দেবপ্রসাদ রায়ের কাছে হেরেছিলেন। দেবপ্রসাদবাবু জোটের বিরোধিতা করে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে দূরত্ব রক্ষা করছেন। কোনও ভাবেই যে জোটের স্বার্থে আলিপুরদুয়ার ছেড়ে দেওয়া যাবে না, তা জানিয়ে মনোজবাবু বলেন, ‘‘যদিও দলে কোনও আলোচনা হয়নি, কিন্তু ওখানে ক্ষিতিদা আমাদের প্রার্থী হবেন। দেবপ্রসাদবাবু তৃণমূলে যোগ দিন বা না-ই দিন, এই আসন কোনও ভাবেই কংগ্রেসকে ছাড়া যাবে না!’’

Advertisement

সব মিলিয়ে আরএসপি বামফ্রন্টের শরিক হিসাবে ৩৪ বছর ধরে যে ২৩টি আসনে লড়ছিল, তার মধ্যে ১২টিতেই গত বার কংগ্রেস-তৃণমূল জোট জিতেছিল। আরএসপি নেতৃত্বের চিন্তা এখানেই থেমে নেই। বামফ্রন্টের সর্বশেষ বৈঠকে হঠাৎই ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, এসইউসি যদি জোটে সামিল হয়, তা হলে তারা শুধু সিপিএমের ভাগেরই নয়, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আরএসপি-র ভাগের আসন দু’টিও চাইছে। আরএসপি নেতারা সঙ্গে সঙ্গে আপত্তি তুললে বিমানবাবু বলেন, এ ব্যাপারে কথা-বার্তা কিছু হয়নি। ফলে, এখনই এ নিয়ে ভাবার সময় হয়নি। কিন্তু হঠাৎ করে বিমানবাবু কেন এসইউসি-র এই প্রস্তাব বামফ্রন্টের বৈঠকে তুলতে গেলেন, তা নিয়েও আরএসপি নেতৃত্ব অত্যন্ত চিন্তিত। কারণ, আরএসপি বৃহত্তর বাম ঐক্যের কথা বলে গত দু’বছর এসইউসি-র কাছাকাছি এসেছে। এখন কী হবে? এসইউসি নেতৃত্ব অবশ্য বলছেন, নির্বাচনে বামফ্রন্টের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাঁরা লড়বেন কি না, সে ব্যাপারে এখনও কোনও আলোচনাই হয়নি।

একই ভাবে চিন্তিত ফ ব-ও। বামফ্রন্টের শরিক দলের মধ্যে সিপিএমের পরেই সব চেয়ে বেশি ৩৪টি আসনে লড়াই করে ফ ব। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের পক্ষে গেলে তাঁদেরও যে তা মেনে নিতে হবে, ফ ব নেতারা বুঝতে পারছেন। গত বিধানসভা ভোটে ফ ব-র ৬ জন প্রার্থী কংগ্রেসের কাছে হেরেছিলেন। ফলে, মুর্শিদাবাদে দু’টি, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার এবং পুরুলিয়া জেলায় একটি করে— ওই ৬টি আসন তাদের ছাড়তে হবে। দলের নেতা হাফিজ আলম সৈরানি বলেন, ‘‘সিপিএম যদি জোটের সিদ্ধান্ত নেয়, তা হয়তো শেষ পর্যন্ত আমাদের মেনে নিতে হবে। কিন্তু তার ফলে আগামী দিনে বেশ কয়েকটি জেলায় সংগঠন ধরে রাখা সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে, তা বুঝতে পারছি!’’

একই চিন্তায় সিপিআইও। তারা জোট-প্রশ্নে মধ্যপন্থা নিয়ে চলছে। কিন্তু দলের ১৪টি আসনের মধ্যে মুর্শিদাবাদের কান্দিতে কংগ্রেসের কাছে হেরেছিল তারা। জোট হলে ওই আসনটি ছাড়তে হবে ধরেই দলের নেতা স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখনও অনেক কিছু বাকি। দেখা যাক কী হয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন