বৃষ্টির শহর। রবিবার পার্ক স্ট্রিটে সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।
একটা শুধু নিম্নচাপের ধাক্কা। তাতেই তাপপ্রবাহ গায়েব! পুরো আবহাওয়াটাই বদলে গেল! সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এক রাতের মধ্যে নেমে গেল দশ ডিগ্রি। ধড়ে যেন প্রাণ এল হা-ক্লান্ত মানুষের।
প্রবল গরমে ভাজা হতে হতে রাজ্যবাসী কালবৈশাখীর পথ চেয়ে হা-পিত্যেশ করে বসে ছিলেন। বহু প্রতীক্ষিত সেই কালবৈশাখীর দেখা অবশ্য মিলল না। তার জায়গায় মুশকিল আসান হয়ে এসেছে বঙ্গোপসাগরের সুস্পষ্ট নিম্নচাপ। যা কিনা বৃষ্টির অভাব বেশ খানিকটা পূরণ করে দিয়েছে। এর দৌলতে দক্ষিণবঙ্গের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা অন্তত দিন চারেক স্বাভাবিকের নীচে থাকবে বলে আলিপুর হাওয়া অফিসের আশা। আবহবিদদের পূর্বাভাস: নিম্নচাপের কল্যাণে চলতি সপ্তাহের প্রথম তিন দিন দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি হতে পারে। তার পরে হয়তো উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি বাড়বে।
বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ ওড়িশা উপকূলে সুস্পষ্ট যে নিম্নচাপটি দানা বেঁধেছে, সেটির উৎপত্তি আদতে আন্দামান সাগরে। গত চার দিন ইস্তক সেটি মায়ানমার উপকূলের কাছে ঘোরা-ফেরা করছিল। তার গতি-প্রকৃতি কী রকম হবে, সেই আঁচ তখনও পাওয়া যায়নি। শুক্রবার নিম্নচাপ পথ বদল করে অন্ধ্র-ওড়িশা উপকূলের দিকে সরে আসতে থাকে। শনিবার এসে হাজির হয় দক্ষিণ ওড়িশা উপকূলের দোরগোড়ায়।
এবং তারই প্রভাব পড়েছে বাংলায়। এ রাজ্যে শনিবারের আকাশ কখনও ছিল রোদ ঝলমলে, কখনও সূর্য মুখ ঢেকেছে মেঘের আড়ালে। কোথাও ছিটেফোঁটা, কোথাও বা ঝিরঝিরে বৃষ্টি হয়েছে। যদিও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা তেমন কমেনি। কিন্তু রবিবার সকাল থেকে দক্ষিণবঙ্গ সূর্যের মুখই দেখেনি। সকাল থেকে আকাশ কালো। ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু, বেলা গড়াতে কখনও একটু দ্রুত লয়ে, কখনও ঢিমে তেতালায়। সব মিলিয়ে কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা শনিবারের ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে নেমে আসে একেবারে ২৮ ডিগ্রির ঘরে।
স্বস্তি বয়ে আনা এই নিম্নচাপের ভবিষ্যৎটা কী?
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “বঙ্গোপসাগর থেকে নিম্নচাপ সোমবার দক্ষিণ ওড়িশা উপকূল দিয়ে স্থলভূমিতে ঢুকবে। তার ক্রমশ পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকে সরে আসার কথা। আর বুধবার নাগাদ ছত্তীসগঢ়ের দিকে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা।” আলিপুরের অনুমান, নিম্নচাপের প্রভাবে অন্তত বুধবার পর্যন্ত গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টি হবে। “যে সব জেলা তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছিল, সেখানে আগামী তিন দিন ভাল বৃষ্টি আশা করা যায়।” বলছেন গোকুলবাবু। বুধবারের পরে উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি বাড়তে পারে।
প্রসঙ্গত, দিল্লির মৌসম ভবন এ বছরের ১ মার্চ থেকে ২৪ মে পর্যন্ত সারা দেশে বৃষ্টিপাতের যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে, তাতে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি স্বাভাবিকের ৫৩% কম। উত্তরবঙ্গে ঘাটতি ৩৩%। নিম্নচাপের বৃষ্টি ওই ঘাটতি বেশ কিছুটা পুষিয়ে দেবে বলে আবহবিদদের আশা। রাজ্যের কৃষি দফতরও উৎসাহিত। কৃষি-কর্তাদের মতে, এখনও মাঠে থাকা গরমের বিভিন্ন শাক-সব্জির ফলন বাড়াবে এই বৃষ্টি। যদিও টানা অনাবৃষ্টিতে ভূগর্ভের জলে যে টান ধরেছে, তার ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞেরা নিশ্চিত নন। ওঁদের বক্তব্য, এটা নির্ভর করছে কতটা বৃষ্টি হয়, তার উপরে।
নিম্নচাপ না হয় সাময়িক স্বস্তি দিল। কিন্তু বর্ষার খবর কী?
আবহবিদেরা এই মুহূর্তে অন্তত দক্ষিণবঙ্গকে তেমন কোনও সুসংবাদ শোনাতে পারছেন না। ওঁদের বক্তব্য: নিম্নচাপের হাত ধরে বর্ষা মায়ানমার দিয়ে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে ঠিকই। তবে আরবসাগর দিয়ে মৌসুমি বায়ু কবে কেরলে প্রবেশ করবে, তা এখনও অনিশ্চিত। তাই দক্ষিণবঙ্গের বর্ষা-ভাগ্য নিয়েও ধোঁয়াশা, কেননা মৌসুমি বায়ুর কেরল-শাখাটিই মূলত এখানে বৃষ্টি নামায়। গত রবিবার মৌসম ভবন জানিয়েছিল, নির্ধারিত সময়ের চার দিন পরে, অর্থাৎ ৫ জুন নাগাদ বর্ষা কেরলে প্রবেশ করতে পারে। সেই পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন গত এক সপ্তাহে হয়নি।
অন্য দিকে উত্তরবঙ্গ তুলনায় ভাগ্যবান। কারণ বর্ষার যে বাহুটি মায়ানমারে রয়েছে, সেটি ১ জুনের মধ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা। তার পরে তা উত্তরবঙ্গে সরে যাবে। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, উত্তরবঙ্গের দিকে পরিমণ্ডলে একটা ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে, যার সুবাদে দক্ষিণবঙ্গের অনেক আগে উত্তরবঙ্গে বর্ষা পা রাখবে। উত্তরবঙ্গ থেকে বর্ষার অংশটি কোনও ভাবে দক্ষিণবঙ্গে নেমে আসারও সম্ভাবনা নেই।
দহনে শান্তিবারি দিতে আপাতত তাই নিম্নচাপই ভরসা।