জেলার হাল ধরার লড়াইয়ে মানব, অনাদিরা

একের পর এক ঘটনায় শাসক দল কোণঠাসা। রাজপথে প্রতিবাদের বহর বাড়ছে। অথচ রাজধানী শহরেই প্রধান বিরোধী দলের সংগঠনের হাল এখনও ছন্নছাড়া! রুগ্ণ সংগঠনের পুুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে সিপিএম কলকাতার জেলা সম্পাদক পদে নতুন মুখ আনার কথা ভাবলেও তাতে কাঁটা হিসেবে রয়ে যাচ্ছে সেই চিরাচরিত গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব! পাঁচ বছর আগে কলকাতা পুরসভায় ক্ষমতা হারানোর পর থেকেই শহরে সিপিএমের সাংগঠনিক ছবি দ্রুত বিবর্ণ হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৪১
Share:

একের পর এক ঘটনায় শাসক দল কোণঠাসা। রাজপথে প্রতিবাদের বহর বাড়ছে। অথচ রাজধানী শহরেই প্রধান বিরোধী দলের সংগঠনের হাল এখনও ছন্নছাড়া! রুগ্ণ সংগঠনের পুুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে সিপিএম কলকাতার জেলা সম্পাদক পদে নতুন মুখ আনার কথা ভাবলেও তাতে কাঁটা হিসেবে রয়ে যাচ্ছে সেই চিরাচরিত গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব!

Advertisement

পাঁচ বছর আগে কলকাতা পুরসভায় ক্ষমতা হারানোর পর থেকেই শহরে সিপিএমের সাংগঠনিক ছবি দ্রুত বিবর্ণ হয়েছে। বিধানসভায় হারের পরে কলকাতা ও তার আশেপাশে সিপিএমের বহু কার্যালয় দখল করে নিয়েছে তৃণমূল। সেগুলি খোলার জন্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন করার বদলে কলকাতা জেলা নেতৃত্ব বেশি জোর দিয়েছেন লালবাজারে গিয়ে পুলিশ-কর্তাদের কাছে নালিশ করার উপরে! তৃণমূল পরিচালিত কলকাতা পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে পুরসভার ভিতরে বাম কাউন্সিলরেরা সরব হলেও তা নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সে ভাবে সক্রিয় আন্দোলনের পথে দেখা যায়নি সিপিএম নেতাদের। সেই জায়গা নিয়েছে বিজেপি। আলিমুদ্দিনের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে একাধিক বার কলকাতা জেলা দলকে চাঙ্গা করার বার্তা দেওয়া হলেও পরিস্থিতি বদলায়নি। এই প্রেক্ষাপটেই কাল, বৃহস্পতিবার থেকে প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে শুরু হচ্ছে কলকাতা সিপিএমের জেলা সম্মেলন।

সংগঠনের বেহাল দশা কাটাতে এ বার কলকাতা জেলার নেতৃত্ব বদলাতে মরিয়া নেতারা। কলকাতার জেলা সম্পাদক রঘুনাথ কুশারী বহু দিন ধরেই শারীরিক কারণে অব্যাহতি চাইছেন। কিন্তু বিকল্পের যে বড় অভাব! সিপিএম সূত্রের খবর, বিরাট অঘটন না ঘটলে এ বার অবশেষে রেহাই পেতে চলেছেন রঘুনাথবাবু। কিন্তু তাঁর জায়গায় কে? নতুন সম্পাদকের বাছাই এখনও নিষ্কণ্টক নয়। ময়দানে আছেন মূলত দুই প্রাক্তন মন্ত্রী মানব মুখোপাধ্যায় ও অনাদি সাহু। আবার এই দু’জনকে নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঝে দলের অন্দরে নাম উঠছে কল্লোল মজুমদারেরও।

Advertisement

রঘুনাথবাবু সম্পাদক থাকলেও কলকাতা জেলা সিপিএম পরিচালনায় বেশ কিছু দিন বড় ভূমিকা নিয়েছেন মানববাবু। কিন্তু তাঁকে নিয়ে কলকাতা জেলা এবং রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের আপত্তি রয়েছে। এই সমস্যা থেকে আবার মুক্ত অনাদিবাবু। কলকাতা জেলায় গণসংগঠন হিসেবে সিটু সব চেয়ে শক্তিশালী এবং দলের এই শ্রমিক লবির সমর্থন অনাদিবাবুর পিছনেই। কলকাতা জেলা সিপিএমের একাংশও প্রাক্তন শ্রমমন্ত্রীকে জেলা সম্পাদক হিসেবেই চাইছে। রাজ্য সিপিএমের একাংশ আবার অনাদিবাবুকে ভবিষ্যতে সিটুর নেতৃত্বে দেখতে চায়। এই অবস্থায় কল্লোলবাবুর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। হাওয়া বুঝে কলকাতার দুই বর্ষীয়ান নেতাও নিজেদের মতো করে চেষ্টা চালাচ্ছেন!

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুর মতো শীর্ষ নেতারা কলকাতার সম্মেলনে থাকবেন। তাঁরা চাইছেন, সম্মেলন-পর্বে সংগঠন গুছিয়ে পুরভোটের আগে দ্রুত ময়দানে নামুক শহরের সিপিএম। এমনিতেই দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় পর্যন্ত সিবিআইয়ের হাত পৌঁছে যাওয়ায় তৃণমূলের সংগঠনে আড়ষ্টতা এসেছে। সেই অবস্থার ফায়দা তুলতে চাইছেন সিপিএম নেতৃত্ব। সম্মেলনের আগেই অবশ্য ঠিক হয়েছে, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নাগরিক কনভেনশন করে জনসংযোগ বাড়াবে জেলা বামফ্রন্ট। কলকাতা জেলার এক নেতার কথায়, “সক্রিয়তা আরও বাড়াতেই হবে আমাদের। না হলে সমস্যা আছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন