জিয়াউলের স্কুলে এ বার সালোয়ার পরতে মানা

জঙ্গি কার্যকলাপের অভিযোগে আরবি শিক্ষক গ্রেফতার হওয়ায় আগেই খবরে এসেছে বর্ধমানের গৌড়েশ্বর হাইস্কুল। এ বার সেখানে শিক্ষক-ছাত্রীদের সালোয়ার-কামিজ পরা নিয়ে ফতোয়া দিলেন স্কুল পরিচালন সমিতির প্রাক্তন সম্পাদক। পরিচালন কমিটির বর্তমান সম্পাদক আপত্তি জানালে তাঁকে নিগ্রহ করা হয় বলে অভিযোগ। সোমবার পরিস্থিতি সামালাতে পুলিশ ডাকেন প্রধান শিক্ষক। তবে রাত পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:১৪
Share:

জঙ্গি কার্যকলাপের অভিযোগে আরবি শিক্ষক গ্রেফতার হওয়ায় আগেই খবরে এসেছে বর্ধমানের গৌড়েশ্বর হাইস্কুল। এ বার সেখানে শিক্ষক-ছাত্রীদের সালোয়ার-কামিজ পরা নিয়ে ফতোয়া দিলেন স্কুল পরিচালন সমিতির প্রাক্তন সম্পাদক।

Advertisement

পরিচালন কমিটির বর্তমান সম্পাদক আপত্তি জানালে তাঁকে নিগ্রহ করা হয় বলে অভিযোগ। সোমবার পরিস্থিতি সামালাতে পুলিশ ডাকেন প্রধান শিক্ষক। তবে রাত পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।

খাগড়াগড় কাণ্ডে তালিতের গৌড়েশ্বর স্কুলের আরবি শিক্ষক জিয়াউল হক গ্রেফতার হন শুক্রবার। এ দিন এনআইএ সেখানে তদন্তে যায়। অভিযোগ, তার আগেই ১১টা নাগাদ প্রাক্তন সম্পাদক অনুপ ভট্টাচার্য ২০-২৫ জনকে নিয়ে প্রধান শিক্ষক ও সম্পাদকের কাছে শিক্ষিকা-ছাত্রীদের সালোয়ার পরা নিয়ে আপত্তি জানান। তাঁদের ফতোয়া: নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদের শাড়ি পরতে হবে। দুপুরে নমাজে বেশি সময় নষ্ট হয়, তা কমাতে হবে।

Advertisement

প্রধান শিক্ষক মানস হাজরা বলেন, “স্কুলে বৈঠক ডেকে শিক্ষিকা-ছাত্রীদের সালোয়ার পরা নিয়ে কথা হয়েছে। গত শিক্ষাবর্ষে তা নিয়ে লিখিত সিদ্ধান্ত রয়েছে।” সম্পাদকও তাঁকে সমর্থন করেন। এর পরেই অনুপবাবু সম্পাদককে ধাক্কা মারেন এবং নিগ্রহ করেন বলে অভিযোগ।

কয়েক বছর আগেই সিঙ্গুরের গোলাপমোহিনী মল্লিক উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে পোশাক-ফতোয়া দেওয়া হয়েছিল। ফেব্রুয়ারিতে নদিয়ার ফুলিয়া গার্লস হাইস্কুলেও ৩ শিক্ষিকা সালোয়ার পরে আসায় বাধা দেওয়া হয়েছিল। ‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ নাম গোপন রাখার অনুরোধ জানিয়ে একাধিক শিক্ষিকা বলেন, “যাতায়াতে অসুবিধা হত বলেই সালোয়ার পরার অনুমতি চেয়েছিলাম। ছাত্রীরাও সাইকেল নিয়ে স্কুলে আসায় সুবিধা হবে বলে জানিয়েছিল। সেই মতো নিয়ম হয়েছে। এখন আবার পুরনো নিয়ম চাপানো হলে মুশকিল।”

কীসের জোরে এই হম্বিতম্বি? স্কুলের এক সূত্রের দাবি, অনুপবাবু আগে তৃণমূলের সমর্থক হলেও এখন বিজেপির দিকে ঝুঁকেছেন। যদিও বিজেপির বর্ধমান ১ ব্লক সভাপতি অশোক রায় নস্কর বলেন, “ওই নামে কেউ দলে আসেননি।” বেলকাশ পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধক্ষ্য তথা তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি মিহির দত্ত মেনে নেন, “অনুপবাবু আমাদেরই কর্মী। তবে ততটা সক্রিয় নন।” সইদুল হক জানান, ২০১১-তে তিনি এবং অনুপ দু’জনেই তৃণমূলের সমর্থনে পরিচালন সমিতির সদস্য হন। অনুপই সম্পাদক হন। পরে তাঁকে সরিয়ে সইদুলকে সম্পাদক করা হয়। তৃণমূলের একাংশের দাবি, স্কুল ও এলাকায় প্রতিপত্তি ফিরে পেতে অনুপবাবু মরিয়া। যোগাযোগ করার চেষ্টায় রাতে বাড়িতে গেলে তিনি বেরোননি, কথাও বলতে চাননি।

পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পরে দেড়টা নাগাদ এনআইএ-র চার অফিসার স্কুলে আসেন। জিয়াউল স্টাফরুমে যেখানে বসতেন, সেখানকার আলমারির দু’টি ড্রয়ারের চাবি তাঁর কাছে ছিল। সেগুলির তালা ভেঙে কিছু বইপত্র মিলেছে। এনআইএ সূত্রের খবর, জিয়াউল প্রায় ছ’বছর বর্ধমানে ছিলেন। খাগড়াগড় এলাকার এক বাড়িতে তিনি বছর চারেক ছিলেন বলেও জানা গিয়েছে। এ দিন সকালেই এনআইএ-র একটি দল বর্ধমান শহরের বাবুরবাগে তল্লাশি চালায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন