জট কাটাতে পড়ুয়াদের সঙ্গে ফের কথা চায় রাজ্য

যাদবপুর-কাণ্ডে চাপ বেড়েই চলেছে সরকারের উপরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা কাটাতে এ বার সরাসরি অনশন-মঞ্চে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিকাশ ভবনে দু’দিন আগেই যাদবপুর নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে। তার পরে যাদবপুর সংক্রান্ত রিপোর্ট আজ, সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে তুলে দেওয়ার কথা তাঁর। সেই রিপোর্টে উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী সম্পর্কে খুব সুখকর কিছু থাকবে বলে সরকারি মহলেও বিশেষ কেউ আশা করছে না! এরই পাশাপাশি আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গিয়ে অনশনরত পড়ুয়াদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী দেখা করতে পারেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:২১
Share:

অনশন জারি। রবিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

যাদবপুর-কাণ্ডে চাপ বেড়েই চলেছে সরকারের উপরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা কাটাতে এ বার সরাসরি অনশন-মঞ্চে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিকাশ ভবনে দু’দিন আগেই যাদবপুর নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে। তার পরে যাদবপুর সংক্রান্ত রিপোর্ট আজ, সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে তুলে দেওয়ার কথা তাঁর। সেই রিপোর্টে উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী সম্পর্কে খুব সুখকর কিছু থাকবে বলে সরকারি মহলেও বিশেষ কেউ আশা করছে না! এরই পাশাপাশি আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গিয়ে অনশনরত পড়ুয়াদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী দেখা করতে পারেন।

Advertisement

চিকিৎসকদের উদ্বেগ, রাজ্যপাল এবং শিক্ষামন্ত্রীর অনুরোধ সত্ত্বেও পড়ুয়ারা এখনও অনশন প্রত্যাহার করেননি। তাঁদের তরফে এ দিনও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, শিক্ষামন্ত্রী তাঁদের কাছে এসে আলোচনা করতে চাইলে তাঁরা সাগ্রহে অংশ নেবেন। কিন্তু কোনও ভাবেই ওই উপাচার্যকে মেনে নেওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়! এই জায়গাতেই অধরা থেকে যাচ্ছে সমাধান-সূত্র। এরই মধ্যে আন্দোলনকারীদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে আজই ১২ ঘণ্টার প্রতীকী অনশনে বসছেন অভিভাবক, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক-শিক্ষিকা, প্রাক্তনী এবং বহিরাগতেরাও। থাকার কথা প্রবীণ শিক্ষিকা সুপ্রিয়া চৌধুরী, সজনী মুখোপাধ্যায়দেরও। তাঁরা সোশ্যাল নেটওয়ার্কে প্রতীকী অনশনে অংশ নেওয়ার কথা জানান। তবে ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনে এ ভাবে অভিভাবক-শিক্ষকেরা প্রত্যক্ষ ভাবে যোগ দিয়ে দিলে শিক্ষামন্ত্রী শেষ পর্যন্ত অনশন-মঞ্চে যাবেন কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

কালীঘাটে রবিবার মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের বৈঠকে যাদবপুর-প্রসঙ্গে খোঁজ নিয়েছেন মমতা। সন্ধ্যায় নন্দনের এক অনুষ্ঠান শেষে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী জানান, যাদবপুর নিয়ে রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জট কাটাতে তিনি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ফের আলোচনায় বসবেন। পার্থবাবু বলেন, “ওঁরা (পড়ুয়ারা) আমাদের সম্পদ। ওঁদের সঙ্গে কথা বলতে তো অসুবিধা নেই। পড়ুয়ারাও আলোচনার রাস্তা খোলা রেখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমার সঙ্গে রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীরও কথা হয়েছে।”

Advertisement

বিরোধীরা যাদবপুর নিয়ে সরকারের উপর চাপ জারি রেখেছে। কোচবিহারে এ দিনই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেছেন, “যিনি উপাচার্যের যোগ্য নন, তাঁকে জোর করে উপাচার্য হিসেবে রাখা ঠিক নয়। এটা অফিস চালানোর ব্যাপার নয়! এখানে মানবিক মূল্যবোধ কাজ করে।” যাদবপুরের উপাচার্য গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধংস করছেন বলে তাঁর অভিযোগ। ওঁর গবেষণাপত্র নিয়েও অভিযোগ আছে। এমন উপাচার্যকে রাখা হলে সমস্যার সমাধান হবে না বলেই মনে করছেন বিমানবাবুরা।


জট কাটাতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পর বেরিয়ে আসছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রবিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

তবে বিরোধীদের ক্ষোভের পাশাপাশি রাজ্যপাল এবং সরকারের একাংশও এখন উপাচার্যের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট। শিক্ষামন্ত্রী সব পক্ষের সঙ্গে কথার পরে আচার্য তথা রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীও পড়ুয়াদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অনশন তুলে নেওয়ার আর্জি জানান। যাদবপুরের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব হওয়ায় রাজ্যপাল উপাচার্যকে সতর্কও করেছেন। এই পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের সঙ্গে ফের এক প্রস্ত কথা বলেই মীমাংসা সূত্র বার করতে চাইছেন শিক্ষামন্ত্রী। ঘটনাচক্রে, যাদবপুরের সহ-উপাচার্য আশিস বর্মার ছুটি বাতিল করে আজ, সোমবারই কাজে যোগ দেওয়ার কথা। সম্ভাব্য মীমাংসা সূত্রের সঙ্গে এই সিদ্ধান্তেরও যোগ আছে কি না, জল্পনা চলছে।

এরই মধ্যে আবার নতুন বিতর্ক দেখা দিয়েছে যাদবপুরের ইতিহাস বিভাগের এক শিক্ষককে নিয়ে। দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেএনইউ) পড়াতে গিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছিল। জেএনইউ কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক ভাবে সেই অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পেয়েছেন, যাদবপুরে চিঠিও পাঠিয়েছেন বলে খবর। কিন্তু যাদবপুরের উপাচার্য অভিজিৎবাবু ওই শিক্ষককে আড়াল করছেন বলে অভিযোগ আন্দোলনরত পড়ুয়াদের একাংশের অভিযোগ।

অনশনকারীদের শারীরিক অবস্থা অবশ্য উদ্বেগ বাড়াচ্ছে চিকিৎসকদের। শুক্রবারই শিবম ঘোষ নামে এক অনশনকারী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। শনিবার হাসপাতালে ভর্তি হন অন্য এক ছাত্র অভীক ঘোষ। চিকিৎসার পরে তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও তাঁরা হাসপাতালে অনশন চালিয়ে গিয়েছেন। শিবম এ দিন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ফের অনশনে যোগ দিয়েছেন। আর এক অনশনকারী সুমিত কাঞ্জিলালের জন্ডিস ধরা পড়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। কিন্তু তিনিও অনশন প্রত্যাহার করেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন