চারটি পঞ্চায়েত এলাকায় চওড়া করতে হবে মাত্র চার কিলোমিটার রাস্তা। বারবার বাধা পড়ছে তাতেই। ফলে, কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গ যাওয়ার ৪৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক (এনএইচ-৩৪) চওড়া করার কাজ এগোচ্ছে না। বৃহস্পতিবারও উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙা এলাকায় ওই চার কিলোমিটার পথ মাপজোক করতে গিয়ে বাধা পেয়ে ফিরলেন সরকারি কর্মীরা। যাঁরা বাধা দিয়েছেন তাঁদের দাবি, আগে ক্ষতিপূরণের ‘প্যাকেজ’ জানাতে হবে। বাধা পাওয়া কর্মীদের বক্তব্য, “কার, কতটা জমির ক্ষতি হতে পারে তাই তো মেপে দেখা হতো। মাপতে দেওয়া না হলে ক্ষতিপূরণের অঙ্কটা কী করে কষা যাবে? এ কথাই বোঝানো যাচ্ছে না।”
‘ভূমি ও ব্যবসা রক্ষা কমিটি’ নামে একটি সংগঠনের তরফে এ দিন কিছু মানুষ সরকারি কর্মীদের ফিরিয়ে দেয়। কমিটির সম্পাদক সুব্রত ঘোষ বলেন, “অনুমান, রাস্তা চওড়া করার জন্য প্রায় ৩০ একরের জমি লাগবে। আগে যাঁরা ক্ষতিপূরণ নিয়েছেন, তাঁরা সরকার নির্ধারিত পুরনো হারে টাকা পেয়েছেন। আমাদের দাবি, ২০১৩-র নতুন জমি বিল অনুযায়ী বর্ধিত হারে ক্ষতিপুরণের প্যাকেজ ঘোষণা করতে হবে। না হলে জমি মাপতে দেব না।”
যাঁরা অনিচ্ছুকদের বোঝাতে পারেন বা যাঁরা উন্নয়নের কাজে সরকার ও স্থানীয় মানুষের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে পারেন, শাসক দলের সেই নেতা-মন্ত্রীরাও হাত গুটিয়ে রয়েছেন বলে অভিযোগ। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের জবাব, “আজ কী হয়েছে জানি না। খোঁজ নিচ্ছি।” তৃণমূলের এক জেলা নেতা বলেন, “আমরা এলাকাবাসীকে বোঝানোর চেষ্টা করিনি, ব্যাপারটা এমন নয়। চেষ্টাটা এখনও চলছে।”
তবে স্থানীয় সূত্র মনে করাচ্ছে, ২০০৯ সাল থেকে রাস্তা সম্প্রসারণে বাধা নিয়ে বৈঠক হয়েছে প্রায় ২০ বার। বছর পাঁচেক আগে কাজ আটকে গিয়েছিল তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূলেরই বাধায়। তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরেও সেই বাধা না কাটায় জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেছিলেন, “জোর করে জমি নেওয়া বা উচ্ছেদ করা যাবে না। কেউ স্বেচ্ছায় জমি দিলে কাজ হবে।” বৃহস্পতিবার কাজে বাধা পাওয়ার পরে জাতীয় সড়কের কর্তাদের দাবি, “জনপ্রতিনিধিরা বৈঠকে আশ্বাস দিলেও বারবার বাধা আসছে।” ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের (এনএইচএ) তরফে অ্যাসিস্ট্যান্ট ল্যান্ড অ্যাকুইজিশন অফিসার আব্দুল হালিম বলেন, “আগে তো মাপজোক করতে দিতে হবে। সেটাই দেওয়া হচ্ছে না!”
কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গের ডালখোলা পর্যন্ত সড়কটি চার লেন করার জন্য ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় বাজেটে ২,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। কিন্তু বারাসতের সন্তোষপুর মোড় থেকে আমডাঙা থানার রাজবেড়িয়া পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার রাস্তার ২১টি মৌজায় কাজে বাধা আসে। নোটিস দিয়ে জমি মাপজোক করতে গেলে স্থানীয় বাসিন্দা ও রাস্তার পাশের দোকানের মালিকেরা বাধা দেন। বিভিন্ন দলের জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকও করে প্রশাসন। সমাধানসূত্র মেলেনি। যানবাহনের চাপ বাড়লেও রাস্তা চওড়া না হওয়ায় যানজট নিত্যদিনের সমস্যা হয়ে ওঠে।
এনএইচএ-র সূত্রের খবর, কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গের ডালখোলা পর্যন্ত রাস্তার প্রায় পুরোটাই চার লেনের হয়ে গেলেও মীরহাটি, কামদেবপুর, শোলাডাঙা এবং খেলিয়া মৌজার এই চার কিলোমিটার এলাকায় বাধার জন্য সম্প্রসারণ থমকে রয়েছে। রাস্তা চওড়া করতে গেলে শ’পাঁচেক বাড়ি, দোকান এবং একটি হাট ভাঙা পড়বে। সেই জমি চিহ্নিত করতে গিয়েই এ দিন কাজে বাধা পেয়ে ফিরে আসেন সরকারি কর্মীরা। গত চার বছরে এ নিয়ে ১৪ বার ওই জমি মাপার কাজে বাধা পড়ল।