জলপ্রকল্পে অবৈধ ভাবে গাছ কাটায় অভিযুক্ত সভাপতি

খাস পুরসভার জলপ্রকল্পের ভিতরে বহুমূল্য গাছ কাটার অভিযোগ উঠল প্রকল্পেরই এক কর্তার বিরুদ্ধে। বরাহনগর-কামারহাটি এলাকার ওই প্রকল্পের পরিচালন কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী মদন মিত্র।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৪ ০২:২১
Share:

খাস পুরসভার জলপ্রকল্পের ভিতরে বহুমূল্য গাছ কাটার অভিযোগ উঠল প্রকল্পেরই এক কর্তার বিরুদ্ধে। বরাহনগর-কামারহাটি এলাকার ওই প্রকল্পের পরিচালন কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী মদন মিত্র।

Advertisement

মন্ত্রীর নির্দেশে বরাহনগর ও কামারহাটি পুরসভার চার জন কাউন্সিলরকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গড়া হয়েছে। আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে পুর-কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট জমা দেবে কমিটি। মদনবাবু বলেন, “অভিযোগ পেয়ে কামারহাটির পুর-প্রধানকে বলেছি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টা দেখতে। দোষ প্রমাণিত হলে কাউকেই রেয়াত করা হবে না।” তবে মন্ত্রী জানান, তাঁর কাছে অভিযোগ আসার আগেই সভাপতি পদ ছাড়তে চেয়েছিলেন অভিযুক্ত প্রকল্প কর্তা তাপস শূর।

দক্ষিণেশ্বরের কাছে প্রায় ৫ একর জমিতে বরাহনগর-কামারহাটি জয়েন্ট ওয়াটার ওয়ার্কস প্রকল্প। তা থেকে দুই পুর-এলাকাতেই পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। প্রকল্প ছাড়াও ওই চত্বরটিতে ন’টি পিকনিক স্পটও রয়েছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রকল্প চত্বরের গাছগুলি বহু পুরনো ও মূল্যবান। শীতকালে বিদেশি পাখিও আসে এখানে।

Advertisement

কামারহাটি ও বরাহনগর পুরসভা সূত্রের খবর, চুক্তি অনুযায়ী নয় সদস্যের প্রকল্প পরিচালন কমিটিতে আছেন বরাহনগর পুরসভার ৫ জন এবং কামারহাটির ৪ জন কাউন্সিলর। যে পুরসভার কাউন্সিলর সভাপতি পদে থাকেন, সহ-সভাপতি হন অন্য পুরসভার কাউন্সিলর। সেই মতো চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বরাহনগর পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর অঞ্জন পালের মেয়াদ শেষের পরে কামারহাটি পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তাপস শূর সভাপতি হন। সহ-সভাপতি হন বরাহনগর পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর শিবাজী মুখোপাধ্যায়।

প্রকল্প সূত্রের খবর, নতুন পরিচালন কমিটি হওয়ার পর থেকেই অনিয়মের অভিযোগ উঠতে শুরু করে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে অভিযোগ ওঠে, কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা না করেই প্রকল্প চত্বরে শাল, সেগুন, শিরীষ, মেহগনির মতো প্রায় ৭০টি দামি গাছ কাটার কাজ করাচ্ছেন প্রকল্পের সভাপতি তাপসবাবু।

কামারহাটি পুরসভা সূত্রের খবর, গত ১৮ জুলাই স্থানীয় বিজ্ঞান মঞ্চ ও জলপ্রকল্পের কয়েক জন সদস্য পুর-কর্তৃপক্ষের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। তার দু’দিন আগেই অর্থাৎ ১৬ জুলাই তাপসবাবু ব্যক্তিগত কারণে ওই পদ থেকে অব্যহতি চেয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। পুরসভা ও প্রকল্প সূত্রের খবর, অভিযোগ পেয়ে তড়িঘড়ি তাপসবাবুকে সভাপতির পদ থেকে সরানো হয়। ওই পদে কামারহাটির আর এক তৃণমূল কাউন্সিলর সৌমিত্র পুততুণ্ডকে বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

যদিও কামারহাটির পুর-চেয়ারম্যান তৃণমূলের গোপাল সাহা বলেন, “একাংশের অভিযোগ গাছের ডাল ছাঁটা হয়েছে। আবার একাংশের অভিযোগ গাছ কাটা হয়েছে। তাই কমিটি গড়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।” তবে তাঁর দাবি, “তাপসবাবুকে আমরা পদ থেকে সরাইনি। তিনিই সরে যেতে চেয়েছেন।” বরাহনগর পুর-চেয়ারপার্সন তৃণমূলের অপর্ণা মৌলিক কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

আর অভিযুক্ত তাপস শূরের বক্তব্য, “আমি কোনও গাছ কাটিনি। গত পুর-বোর্ডের দুর্নীতি ধরে ফেলছিলাম, তাই পরিকল্পিত ভাবে আমার নামে কুৎসা রটানো হচ্ছে। ব্যক্তিগত কারণে পদ থেকে সরতে চেয়েছি।” তা হলে কি কোনও গাছই কাটা হয়নি? তাপসবাবুর দাবি, তিনি সভাপতি হওয়ার পরে দেখেন প্রকল্পের জলাধারের পাশের গাছগুলির ডালপালা ছাঁটা হচ্ছে। কর্মীরা তাঁকে জানিয়েছিলেন, প্রতি বছরই এ ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। তাপসবাবু বলেন, “প্রতি বছরই এ কাজ হয় শুনে আমি কিছু বলিনি। কোনও অনুমতিও দিইনি, বাধাও দিইনি। ওখানে গাছ ছাঁটা হয়েছে। কাটা হয়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন