টাকা লেনদেনে সন্দেহ রংপুরের জামাত নেতাকে

সীমান্তের কাঁটাতারের উল্টো দিকে কোচবিহার জেলা ও অসমের ধুবুরি, এ পারে রংপুর। সেই রংপুরের একটি কলেজের শিক্ষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে গত এক বছরে লেনদেন হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। কলেজের তহবিলেও নিয়মিত পড়েছে মোটা টাকা, আর সকলের অলক্ষে সেই শিক্ষক তৎক্ষণাৎ তা সরিয়ে নিয়েছেন ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঢাকা শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৩২
Share:

সীমান্তের কাঁটাতারের উল্টো দিকে কোচবিহার জেলা ও অসমের ধুবুরি, এ পারে রংপুর। সেই রংপুরের একটি কলেজের শিক্ষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে গত এক বছরে লেনদেন হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। কলেজের তহবিলেও নিয়মিত পড়েছে মোটা টাকা, আর সকলের অলক্ষে সেই শিক্ষক তৎক্ষণাৎ তা সরিয়ে নিয়েছেন ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে। এই শিক্ষকই আবার এলাকায় মৌলবাদী দল জামাতে ইসলামির প্রভাবশালী নেতা।

Advertisement

জঙ্গিদের হাতে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের টাকা আসার বিষয়টি নিয়ে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে এই জামাত নেতা মোখলেছুর রহমানকে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদও চলছে। দুর্নীতি দমন শাখাও এই শিক্ষক নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।

বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পর ‘সরকারি ভাবে’ দিল্লি এখনও কোনও তথ্য দেয়নি ঢাকাকে। কিন্তু তার পরেও নিঃশব্দে তদন্তের কাজ এগিয়ে নিয়ে চলেছে বাংলাদেশ পুলিশ। গত এক সপ্তাহে বেশ কিছু এলাকায় তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)। তদন্ত শুরু হয়েছে জামাতের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ থেকে জেএমবি ও অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলির কাছে টাকা আসার অভিযোগটি নিয়েও। ঢাকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, সরকারি ভাবে না হলেও ‘অন্য মাধ্যমে’ এই বিষয়গুলি নিয়ে ঢাকাকে নিয়মিত তথ্য দিচ্ছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তার ভিত্তিতে তদন্ত করেই রংপুরের এই জামাত নেতাকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ।

Advertisement

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কথায়, “আমি সেই একই কথা বলব, সরকারি ভাবে বর্ধমানের বিস্ফোরণের কথা আমি জানি না। সংবাদমাধ্যমে দেখেছি মাত্র।” কিন্তু অন্য কোনও ভাবেও কি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হাতে কোনও তথ্য আসেনি? এই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রীর জবাব, “আবার বলছি, সরকারি ভাবে আমরা কিছু জানি না।” গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলামও জানান, তাঁরা রুটিন মাফিকই জঙ্গিদের উপরে নজরদারি চালাচ্ছেন। কিছু ক্ষেত্রে সন্দেহভাজনদের আটক করা হয়েছে।

কিন্তু এগুলি সবই সরকারি ভাষ্য। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক শীর্ষ সূত্র জানাচ্ছেন, প্রচার ছাড়াই জঙ্গি-যোগাযোগের তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দু’দেশের নেতৃত্ব। এর আগে বাংলাদেশ থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের জঙ্গিদের ঘাঁটি উচ্ছেদ ও তাদের নেতৃত্বকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার সময়েও এই ধরনের বোঝাপড়ায় সাফল্য মিলেছিল। ভারতের সীমান্ত রক্ষীরা আলফা, বড়ো, এটিটিএফ ও এনএলএফটি-র কট্টর জঙ্গিদের একের পর এক যখন সীমান্ত থেকে আটক করছেন, সে সময়ে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক কিন্তু বিলকুল মুখে কুলুপ এঁটে বসেছিল। সাফল্য দাবি করে একটি বিবৃতিও তারা দেয়নি। ঢাকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের কথায়, এর পরেও কিন্তু সকলেই জানেন, বাংলাদেশ পুলিশই ওই জঙ্গিদের আটক করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের হাতে তুলে দিয়েছিল। এ বারও এ ভাবেই কাজ এগোচ্ছে।

কাজ যে এগোচ্ছে, তা বেশ বোঝা যাচ্ছে তদন্তের গতিপ্রকৃতি দেখে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে জঙ্গিদের হাতে টাকা আসার বিষয়েও তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশের গোয়েন্দা পুলিশ। খোঁজখবর করে সীমান্তবর্তী রংপুরের জামাত নেতা মোখলেছুরকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। গত এক বছরে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কয়েক কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে বলে পুলিশ জেনেছে। সন্দেহজনক ভাবে বিপুল পরিমাণ টাকা ওই কলেজের তহবিলে জমা পড়া মাত্রই ওই অধ্যাপক চেক কেটে তা নিজের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নিতেন। তার পরে সেখান থেকে সেই টাকা অন্যত্র চলে যেত। পুলিশ বলছে, কলেজের সেক্রেটারি ও অধ্যক্ষের সঙ্গে ওই শিক্ষকের যৌথ অ্যাকাউন্ট ছিল। কিন্তু টাকা আসার বিষয়টি অন্যরা কেউ জানতেও পারতেন না। মোখলেছুরই সব টাকা সরিয়ে নিতেন। পুলিশ জেনেছে, পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের কিছু নেতার সঙ্গে এই জামাত নেতার খুবই যোগাযোগ ছিল। তার ভিত্তিতেই সন্দেহ করা হচ্ছে কোচবিহার ও অসমে যোগাযোগের মাধ্যমেই সন্দেহজনক সূত্র থেকে কলেজের তহবিলে টাকা আনতেন তিনি। তার পরে তা দ্রুত সরিয়ে ফেলতেন। সেই টাকা এর পরে কার কার কাছে যেত, তারও খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।

মোখলেছুর অবশ্য দাবি করেছেন, বাড়ি ও সম্পত্তি বিক্রি বাবদ অর্থ জমা পড়ত তাঁর অ্যাকাউন্টে। কিন্তু কলেজের তহবিলের টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তিনি কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। শুধু বলেছেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে টাকা তোলার ক্ষমতা দিয়েছিল।

খাগড়াগড় বিস্ফোরণের এত দিন পরেও হত দুই তথাকথিত বাংলাদেশি নাগরিক শাকিল আহমেদ ও সুবহানের সবিস্তার পরিচয় হাতে না পাওয়ায় হতাশ বাংলাদেশের গোয়েন্দা পুলিশ। তাঁদের দাবি, এই তথ্য পেলে দুই জঙ্গির বাংলাদেশের যোগাযোগ সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যেত। যা দু’দেশের তদন্তের পক্ষেই সহায়ক হতো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন