টিভিতে দেখেই স্বস্তি, ‘ওই তো বাবান!’

দু’হাত তুলে ছুটতে ছুটতে এসে মাটিতে শুয়ে পড়লেন সাদা জামা পরা যুবকটি। এগিয়ে এল পুলিশ। সোমবার রাতে সংবাদ চ্যানেলে ছবিটা দেখে এতক্ষণে যেন প্রথম নিঃশ্বাস ফেলল বালির ৭০/২, পঞ্চাননতলা রোডের তিনতলা বাড়িটা। “ওই তো বাবান বেরিয়ে এসেছে!” বাবান অর্থাৎ পুষ্পেন্দু ঘোষ। সোমবার সিডনির লিন্ড কাফেতে বন্দুকবাজের হাতে দিনভর পণবন্দি হয়ে রইলেন ইনফোসিসের বছর পঁয়ত্রিশের এই সিভিল ইঞ্জিনিয়ারও।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

বালি শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৪১
Share:

টিভিতে ছেলের খবর দেখছেন ছেলে পুষ্পেন্দু ঘোষের বাবা পুষ্পলবাবু।

দু’হাত তুলে ছুটতে ছুটতে এসে মাটিতে শুয়ে পড়লেন সাদা জামা পরা যুবকটি। এগিয়ে এল পুলিশ।

Advertisement

সোমবার রাতে সংবাদ চ্যানেলে ছবিটা দেখে এতক্ষণে যেন প্রথম নিঃশ্বাস ফেলল বালির ৭০/২, পঞ্চাননতলা রোডের তিনতলা বাড়িটা। “ওই তো বাবান বেরিয়ে এসেছে!” বাবান অর্থাৎ পুষ্পেন্দু ঘোষ। সোমবার সিডনির লিন্ড কাফেতে বন্দুকবাজের হাতে দিনভর পণবন্দি হয়ে রইলেন ইনফোসিসের বছর পঁয়ত্রিশের এই সিভিল ইঞ্জিনিয়ারও।

বাবা পুষ্পলকুমার ঘোষও পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ অফিস যাওয়ার আগে খেতে বসেছিলেন। বেঙ্গালুরুতে ছেলের অফিসের সদর দফতর থেকে ফোনটা তখনই আসে “পুষ্পেন্দুকে পণবন্দি করা হয়েছে। তবে চিন্তা করবেন না।”

Advertisement

অফিস যাওয়া মাথায় ওঠে পুষ্পলবাবুর। খবর পেয়ে চলে আসেন প্রতিবেশী-আত্মীয়রাও। পুষ্পলবাবু ও তাঁর স্ত্রী স্মৃতিকণাদেবীকে দুপুরে আর কিছু খাওয়াতে পারেননি তাঁরা। সারাদিন টিভি চলেছে একনাগাড়ে। আর ঘণ্টাখানেক পরপর ইনফোসিস থেকে ফোন, প্রতি ঘণ্টার খবর-সহ।

বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে পুষ্পেন্দু ২০০৩ সালে চাকরি পান ইনফোসিসে। প্রথমে ভুবনেশ্বর, তার পর বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ হয়ে ২০০৯ সালে পোস্টিং পান মেলবোর্নে। চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি বদলি হয় সিডনিতে। সেখানে তিনি বসেন একটি ব্যাঙ্কে। আর অবসর পেলেই সমুদ্রে স্কুবা ডাইভিং। মা জানালেন, সপ্তাহে তিন-চার দিন অফিস থেকে বেরোনোর সময়ে ফোন করেন তাঁর বাবান। রবিবারও সকালে ফোন করেছিলেন। এ দিন অফিস যাওয়ার পথে পুষ্পেন্দু খেতে ঢুকেছিলেন ওই কাফেতে। কিন্তু খবরটা পাওয়ার পর থেকে বাবা-মা যত বার ফোন করছিলেন, কল চলে যাচ্ছিল তাঁর ভয়েস মেল-এ। আরও বাড়ছিল উৎকণ্ঠা। টিভির সামনে থেকে প্রায় নড়ানোই যায়নি পুষ্পলবাবুকে।

মোটামুটি রাত সাড়ে আটটা-পৌনে ন’টা থেকে টিভিতে পরপর ব্রেকিং নিউজ ‘কাফেতে পুলিশি অভিযান’, ‘গুলি চলছে’। পুষ্পেন্দুর সঙ্গে কাফেতে আটকে পড়েছিলেন ইনফোসিসেরই আর এক ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বকান্ত অঙ্কিত রেড্ডি। অন্ধ্রের গুন্টুরের এই বাসিন্দার খবর সকাল থেকেই দেখানো হচ্ছিল টিভিতে। তবে দোলাচল ছিল ভারতীয়র সংখ্যা নিয়ে। শেষ পর্যন্ত টিভিতে ‘দুই ভারতীয়ই অক্ষত’ দেখে কিছুটা স্বস্তি পান পুষ্পেন্দুর বাবা-মা। মোটামুটি ওই সময়ে টুইটারে একই খবর জানিয়ে দেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তবে পুষ্পলবাবুদের মনে তখনও আশঙ্কা, “বাবান ঠিক আছে তো?” একটু পরে অবশ্য বাবানকেই তাঁরা দৌড়ে বেরিয়ে আসতে দেখেন।


পুষ্পেন্দু ঘোষ

স্মৃতিকণাদেবী জানালেন, ছেলের সঙ্গে সোমবার মাঝরাত পর্যন্ত কথা হয়নি তাঁদের। পুষ্পেন্দুর এক বন্ধু ফোন করে জানিয়েছেন, আপাতত তাঁর ফ্ল্যাটেই পুষ্পেন্দুকে নিয়ে যাচ্ছেন। মায়ের কথায়, “আমার ছেলে খুব চাপা স্বভাবের। এই ঘটনায় তো আরও মানসিক চাপে পড়বে। তাই হয়তো ফোন করে উঠতে পারেনি।”

পুজোয় ছুটি পাননি পুষ্পেন্দু। বলেছিলেন, বড়দিনে আসবেন। মা ঠিক করে রেখেছেন, ছেলে এলেই তার প্রিয় শুক্তো, পায়েস আর ক্ষীর করে খাওয়াবেন। পুষ্পলবাবুকে জিজ্ঞাসা করা গেল, এর পরে কি ছেলেকে আর বিদেশে যেতে দেবেন? তিনি বললেন, “এ রকম তো যে কোনও জায়গাতেই হতে পারে। তবে এখন আর এক বার ভেবে দেখব।” তার পর যোগ করলেন, “বলব, এ বার যেন চলেই আসে।”

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন